
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং কমিটির সদস্যবৃন্দ বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ আজ ২৬ আগস্ট (শনিবার) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে স্কুলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ জানান, বর্তমানে এই বিদ্যালয়টি কর্ণফুলী উপজেলার অধীনে খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদালয়টি এ গ্রেডের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এখানে ১২ জন শিক্ষক ৬০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এই বিদ্যালয়টি কর্ণফুলী উপজেলায় সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে ৩ তলা একটি ভবন, দোতলা একটি ভবন এবং একতলা দুটি ভবন মোট চারটি ভবন নিয়ে, তা একমাত্র সম্ভবপর হয়েছে আমাদের বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্যবৃন্দ এবং এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগিতায়। আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি কমিটি শিক্ষকবৃন্দ এলাকাবাসীদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সহযোগিতার জন্য তবে আজ আমরা এখানে যে কারণে এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি তাহলো ১৯৬২ সালে ৬/১০/১৯৬২ দলিল নং- ৫৭৩৩ তৎকালীন ডেপুটি কমিশনারের বরাবরে জনৈক জামাল হোসেন সাবকবলায় বিক্রি করেন বিদ্যালয়ের নামে সেই থেকে বিদ্যালয় সংলগ্ন পুকুরটি বিদ্যালয়ের দখলে ছিল এবং সংলগ্ন মাঠটি ও বিদ্যালয়ের খেলাধুলা সমাবেশের জন্য ব্যবহার করা হতো।
২০১২ সালে যখন বিভিন্ন সংস্থা/প্রকল্প থেকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের ৩টি নতুন ভবন আসে তখনই দেখা দেয় বিদ্যালয়ের জায়গা সংক্রান্ত সমস্যা এবং সেই জায়গাতেই জনৈক জামাল উদ্দীনের পরিবার থেকে বাধাপাপ্ত হয়ে ভবনগুলো নির্মাণ করা আর সম্ভব হয়নি। তার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার অভিভাবক। বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী পরিচালন কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ ২০১৬ সালে মানববন্ধন এবং মাননীয় ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এম.পি মহোদয়সহ তৎকালীন পটিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তা কর্ণফুলী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে ও আমরা স্মারকলিপি পেশ করি।
এরপর আমরা পটিয়া আদালতে মামলা নং ৩৭/১৭ বি এস সংশোধনের জন্য আবেদন করি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিদ্যালয়ের পরিচালনার ভার ২০১০ সাল পর্যন্ত বিক্রি দাতার পরিবারের উপরই ন্যস্ত ছিল। ২০১০ সালে নতুন কমিটি আসার পর বিদ্যালয়ে নতুন ভবন মাঠ এবং বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ায় পরবর্তীতে দলিল। অনুযায়ী যাচাই বাছাই করতে গিয়েই থলের বিড়াল বের হয়ে এলো।
করলা দাতা জামাল হোসেনের পুত্র আবুল কালাম বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা হাকিমের আদালত চট্টগ্রাম মহানগর মিচ মামলা নং ১৭৬৬/১৯ ধারা ১৪৫ বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করেন।
এতে দু-পক্ষের কাগজ পত্রাধীন পর্যালোচনা ও শুনানী শেষে দীর্ঘ তিন বছর পর বিজ্ঞ আদালত ১২/৯/২০২২ সালে আদেশ প্রদান আদালত করে এবং ঐ আদেশে প্রতিপক্ষকে বিদ্যালয়ের জায়গায় বি-এস দাগ ২০২৭ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। প্রতিপক্ষ আবুল কালাম বিজ্ঞ এডিএম মহোদয়ের আদেশের উপর ফৌজদারী রিভিশন নং ১০৮২/২০২২ অতি মহানগর দায়রা জজ গত ১০/০৪/২০২৩ আদেশ নং ৫ আদেশ দেন যে অত্র ফৌজদারী রিভিশন শুনানী অন্তে নামঞ্জুর করা হল এবং মহামান্য এডিএমের আদেশ বহাল রাখেন। আরো উল্লেখ্য যে, সহকারি কমিশনার ভূমি কর্ণফুলী উপজেলা বরাবরে আবুল কালামের নাম জারির জমাভাগ মামলা নং ১- ১৩৯৩/২০১৪ এর বিরুদ্ধে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আপত্তি দেন। যার মিচ মামলা নং ৪৮/২২, যার বিএস খতিয়ান নং ৯৬৩, বিএস দাগ ২০২৭ হইতে কর্তন করে বিদ্যালয়ের নামে জারির আদেশ দেয়ার জন্য আবেদন করেন। এই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় সহকারি কমিশনার (ভূমি) কর্ণফুলি উপজেলা দু-পক্ষের দলিল পত্রাদি সহ শুনানি করেন। চারটি শুনানির পর দলিল পত্রাদি পর্যালোচনা করে সহকারি কমিশনার ভূমি আদেশ দেন যে আবুল কালামের নাম জারির জমাভাগ ১-১৩৯৩/২০১৪ বিএস ৫৬০৩ নং খতিয়ান বাতিল করেন। বিরোধীয় বি এস দাগ ২০২৭, ৫ গণ্ডা, মূল বি এস ৯৬৩ নং খতিয়ানে পুনবহাল করার আদেশ প্রদান করেন ।
ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ আরো জানান, আমরা আজ যারা এখানে উপস্থিত আছি বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এবং এ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ আমরা কেউই এই বিদ্যালয়ে স্থায়ী নই। শিক্ষকরা যারা এই বিদ্যালয়ে কর্মরত তারা সরকারি অধীনস্থ কর্মচারী। বদলীর অর্ডার হলেই তাদেরকে এই বিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যেতে হবে। আবার পরিচালনা কমিটি ও সময়কাল তিন বছর। তারাও স্থায়ী নয়। কিন্তু এরপর ও শুধুমাত্র বিদ্যালয়ের স্বার্থে
কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু ও সুন্দর, স্বস্তিময় পরিবেশে লেখাপড়া খেলাধুলার মাধ্যমে ও তাদের সৃজনশীলতা নান্দনিকতার বিকাশে দীর্ঘ এতটা বছর এই জায়গাটুকুর জন্য অনেক তর্ক বিতর্ক বিবাদ করে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কমিটির সদস্যদের এবং সব প্রতিবন্ধকতাকে দূরে সরিয়ে আ মামলার রায় বিদ্যালয়ের পক্ষে। আজ সত্যিই আমরা জয়ী। সত্যের জয় কিন্তু সবসময়ই হয়। কিন্তু একটু দেরীতেই হয়। তারপরও আজা আমরা কৃতজ্ঞা তাদের কাছেই যারা এই যুদ্ধে সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন। এলাকাবাসী পরিচালনা কমিটি, শিক্ষক শিক্ষার্থীর আ স্বার্থকতায় রূপ নিয়েছে। তবে এই জয়ের পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশী তিনি আমাদের মাননীয় ভূমি মন্ত্রী সাইফুজামান চৌধুরী জাবেদ। এছাড়াও আমরা বিভিন্ন আইনপ্রয়োগ কারী সংস্থা, শিক্ষা জেলা প্রশাসক, নির্বাহী কর্মকর্তা ভূমি অফিসার মহোদয়ের কাছ থেকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছি। তবে যার কাছ থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল- কর্ণফুলী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার ভূমিকা ছিল নীরব। এরপর ও আমরা অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে আজ সগৌরবে বিদ্যালয়ের ন্যায্য পাওনা জায়গাটির রায় পেয়ে সত্যিই গর্বিত।
ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ জানান, কর্ণফুলী উপজেলা খোয়াজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি যেন গঠনগত ভাবে সবদিক দিয়ে প্রথম সারিতে স্থান পায় এবং শিক্ষার্থীরা যেন খেলার মাঠে খেলাধুলা করতে পারে এবং নিরাপত্তার সাথে লেখাপড়া করতে পারে তার জন্য বাউন্ডারি ওয়াল ও আরো একটি নতুন ভবন নির্মাণের মাধ্যমে সুষ্ঠু সুশৃঙ্খল ও নান্দনিক পরিবেশের মাঝে লেখাপড়া শিখে সুন্দর ভবিষ্যতের অধিকারী হতে পারে। তার জন্য শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সংস্থা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। আজকে আপনারা আমাদের পাশে আছেন, বিগত দিনেও ছিলেন। ভবিষ্যৎ ও থাকবেন । এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।