নিউজগার্ডেন ডেস্ক: খনিজ জ্বালানীর ব্যবহার বন্ধ করুন, নবায়নযোগ্য জ্বালানীর ব্যবহার নিশ্চিত করুন’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চট্টগ্রামের নদীর দখল ও দূষণ রোধে করণীয় শীর্ষক এবং ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা ও বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
আজ শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট কাশবন রেস্টুরেন্টের ৩য় তলায় সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ’র সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার।
উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সবুজ আন্দোলন পরিচালনা পরিষদের অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা।
সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা শাখার উদ্যোগে সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হাজী মোঃ নুরুল কবিরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম, সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য সচিব স্থপতি শহিদুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশবিদ বাপ্পী সরদার বলেন, নদী ও খাল দখলমুক্ত করতে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। চারপাশের নদী-খাল ভালো থাকলে পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক কাজে লাগতে পারত। কিন্তু এই নদীগুলো দিন দিন আমাদের দ্বারাই দখল ও দূষণের শিকার। নদী দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধিসহ দেশের উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। অবৈধভাবে যে বা যারা নদ-নদী, খাল-বিল দখল করে রাখুক না কেন, তাদের উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করতে হবে। ঢাকা শহরের পরে পরিবেশ দূষণে চট্টগ্রামের অবস্থান। তবে সব থেকে বেশি ভাবনার বিষয় চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি। বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা পানির নিচে তলিয়ে যাবে যার নিদর্শন চট্টগ্রামের এই বন্যা পরিস্থিতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অতি দ্রুত সমুদ্রের গভীরতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে পাশাপাশি শহরের মধ্যে যে সকল খাল দখল হয়েছে তা পুনরুদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কিন্তু নদী ও খাল পুনরুদ্ধারে প্রশাসনের উদাসীনতা রয়েছে। অবৈধ দখলকারীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তাদের দখল বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
নিলুফার ইয়াসমিন রুপা বলেন, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন ও যত্রতত্র শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে নদী ও খাল গুলো দখলে দূষণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি নির্বিচারে গাছপালা কেটে সবুজায়ন বিলুপ্তির পথে উপনীত হয়েছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের এই আন্দোলনে নারী সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে নারী ও শিশুরা।
অধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, চট্টগ্রাম শহরের নদী ও খাল পুনরুদ্ধারে খুব দ্রুত জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মসূচি দেওয়া হবে। সকল পর্যায়ে সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিরা এগিয়ে আসলে আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়ে তোলা সম্ভব। শিল্প মালিকদের উদাসীনতা ও সরকারি তদারকির অভাবে নরসিংদী জেলার শিল্প কারখানার দূষিত বর্জ্য সরাসরি নদী ও খালে পতিত হয়ে নদীর পানিসহ পরিবেশ দূষিত হয়ে জীব-বৈচিত্র্য বিলীন হচ্ছে। এক সময়ের চট্টগ্রাম শহরের শাকসবজি ও কৃষি পণ্যের অন্যতম সরবরাহকারী জেলা আজ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে।
হাজী মোঃ নুরুল কবির বলেন, নদী ও খাল রক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি সবুজায়ন বৃদ্ধিতে সবাইকে কাজ করতে হবে। শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সঠিক পরামর্শ প্রদান এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে নিয়মিত মেডিক্যাল চেকআপের ব্যবস্থা করার ব্যবস্থা করতে হবে।
এছাড়াও আরো বক্তব্য রাখেন সবুজ আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইকবাল, সাংগঠনিক সম্পাদক রক্সি জাহান, সাদ্দাম হোসেন, সাপ্তাহিক চট্টবানীর নির্বাহী সম্পাদক এস কে জীবন চৌধুরী, দৈনিক সকালের সময়ের স্টাফ রিপোর্টার নজরুল ইসলাম। আলোচনা সভায় আরো অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, মহানগর ও ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা। আলোচনা শেষে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়। সংগঠনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য বেশ কয়েকজনকে সেরা সংগঠক পুরস্কার দেওয়া হয়।