নিউজগার্ডেন ডেস্ক: শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, সুফিবাদ ইসলামের মধ্যে একটি রহস্যময় ঐতিহ্য যা আত্ম-সচেতনতার একটি পথ। সুফিবাদ ইসলামী চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং এটি সারা বিশ্বের মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে চলেছে।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নোয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে “সুফিবাদের সমাজ বিজ্ঞান, পূর্ণ-মানবতা এবং সামাজিক সম্প্রীতির ঐশী অন্বেষণ (Sociology of Sufism, Perfected Humanity and Divine Quest for Social Harmony)” শিরোনামে ৪র্থ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, সুফিরা বিশ্বাস করেন যে মানুষের অস্তিত্বের উদ্দেশ্য হল সম্প্রীতির বিশ্ব তৈরি করা। তারা বিশ্বাস করে যে এটি সহানুভূতি এবং বোঝার মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।
রোববার সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ৪র্থ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স কনফারেন্সে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের আশুতোষ প্রফেসর ড. অমিত দে। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান।
ঢাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান তাঁর বক্তব্যে বলেন, দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট সুফিজমকে একাডেমিক বিষয়ে পরিণত করেছে সেজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুফিবাদের একটি দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। এটি দেশের সংস্কৃতি ও সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সুফিবাদ অনেক বাংলাদেশী চিন্তাবিদ ও লেখকের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস।
মূল প্রবন্ধে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের আশুতোষ প্রফেসর ড. অমিত দে বলেন, উপমহাদেশের সুফীরা ধর্মীয় আচার পালনের মধ্য দিয়ে তরিকতের প্রচার করেছেন। সুফীরা সংস্কৃতির নানা বিষয়ের সঙ্গে ধর্মীয় আচারের মেলবন্ধন তৈরি করে মানুষকে হেদায়তের জন্য সৃষ্টিকর্তার পথ দেখিয়ে গেছেন।
কনফারেন্সের প্রথম দিন চট্টগ্রাম বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন এন্ড টেকনোলোজির উপাচার্য এবং ICSSPHDQSH ২০২৩ এর কনভেনর প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিমের সভাপতিত্বে কনফারেন্সে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাইজভাণ্ডার গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন এবং দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিরি) এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মওলানা শাহ সুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আবদুল বাছির। বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ICSSPHDQSH ২০২৩ এর কনভেনর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ডিরি) ম্যানেজিং ট্রাস্টি শাহ সুফি সৈয়দ ইরফানুল হক মাইজভাণ্ডারী।
মাইজভাণ্ডার গাউছিয়া আহমদিয়া মঞ্জিলের সাজ্জাদানশীন এবং দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিরি) এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত মওলানা শাহ সুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভাণ্ডারী বলেন, মাইজভাণ্ডারী তরিকার আত্মশুদ্ধির অনন্য পদ্ধতি রয়েছে যাকে বলা হয় উসূল-ই-সাবা বা আত্মশুদ্ধির সপ্ত পদ্ধতি। উসুল-ই-সাবা অনুশীলনের মাধ্যমে একজন নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে। আমরা বিশ্বাস করি যে একটি নতুন পৃথিবী প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মশুদ্ধিকৃত মানুষ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
কনফারেন্সের ২য় দিন সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ICSSPHDQSH ২০২৩ এর কনভেনর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. এ.এস.এম মাকসুদ কামাল। বিশেষ অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপারসন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জিয়া রহমান। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মিশরের হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের মেম্বার ড. মোহাম্মদ মাহমুদ আহমেদ হাশিম এবং মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আচার্য প্রফেসর ড. ইব্রাহিম সাালাহ আল-সাইয়েদ সোলেমান আল-হুদহুদ।
দুইদিনব্যাপী ৪র্থ আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ব্রাজিল, সুইডেন, আলজেরিয়া, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১৬টি দেশের ৬৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ তাদের মোট ১০২টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করছেন।
এছাড়া নবাব নোয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সুফিজমের ওপর ছবি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ছবি প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ অতিথিরা।
দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ডিরি) ইতোমধ্যে তিনটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাউছুল আজম মাইজভাণ্ডারী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) স্মারক বক্তৃতা, আলোকচিত্রের মাধ্যমে সুফিজমকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ছবি প্রতিযোগিতা এবং চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেটে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।