
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে চট্টগ্রামে আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের উদ্যোগে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার হবে ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি। ১২ রবিউল আউয়াল সমগ্র পৃথিবীতে পালিত হবে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব’র এস রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ট্রাস্টের সেক্রেটারী জেনারেল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন এবং অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাংবাদিক অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল। মুহাম্মদ কাউছার মাহির কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আলহাজ্ব সামশুদ্দিন, অধ্যক্ষ আলিম রিজভী, মাহবুবুল আলম, এনামুল হক বাচ্চু, পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, আবু ইয়াহিয়া মহসিন, এডভোকেট বখতেয়ার, এডভোকেট জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী, মাস্টার হাবিবুল্লাহ, ছাবের আহমদ, মাওলানা আবদুল্লাহ, পিএইপির দিলশাদ, লায়ন আবু নাছেরসহ প্রমুখ ট্রাস্ট নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিনটিকে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করবে। এমনকি দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও এই দিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন রয়েছে। দিনটি যুগ যুগ ধরে সাধারণ ছুটিও বটে। তবে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে উদযাপিত মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ হলো ‘জশনে জুলুস নামক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, যা দিন দিন সমগ্র বিশ্বে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। রবিউল আউয়াল মাসে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইতোমধ্যেই শত শত স্বাগত জুলুস বের করেছে এবং মাসব্যাপী হতে থাকবে। তবে, আমরা সবাই জানি যে, শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় জশনে জুলুস টি প্রতিবছর ১২ রবিউল আউয়াল তারিখে বের হয় চট্টগ্রামে। এর আয়োজক সংস্থা হচ্ছে আনজুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এবং সার্বিক সহযোগিতায় থাকে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। শুধু তা’ই নয়, এটিই বাংলাদেশের মাটিতে প্রথম সূচনাকারী জশনে জুলুস। ১৯৭৪ সনে ১৩৯৪ হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল থেকে এর সূচনা হয় রাসুলে পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অধস্তন বংশধর, গাউসে জামান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ.)’র দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে। তাঁর নির্দেশনা অনুসারে চট্টগ্রামের বলুয়ারদীঘি পাড় খানকাহ শরীফ থেকে আনজুমানের তৎকালীন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ আল কাদেরীর নেতৃত্বে যে জুলুসটি চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে এসে সমাপ্ত হয় সেটিই বাংলাদেশে বর্তমান অনুষ্ঠিত হাজার হাজার জশনে জুলুসের মডেল এবং অনুপ্রেরণা। অবশ্য একই দিন ঢাকায় আনজুমানে রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কর্তৃপক্ষও পুরান ঢাকার কায়েতটুলী খানকাহ শরীফ থেকে জশনে জুলুস বের করেছিল। যা হোক, বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জশনে জুলুস’র প্রতিষ্ঠাতা রুপকার আল্লামা তৈয়্যব শাহ হুজুর স্বয়ং ১৯৭৬ সনে চট্টগ্রামের জশনে জুলুসে নেতৃত্ব দেন এবং তাঁর শুভাগমন ও নেতৃত্বের প্রভাবে জশনে জুলুস পায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা। এভাবে ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত গাউসে জামান তৈয়্যব শাহ্ হুজুরের নেতৃত্বে জশনে জুলুস জনসমুদ্রে রূপ নিতে থাকে। ১৯৮৭ থেকে তিনি বাংলাদেশে আর আসেননি। এরপর থেকে জশনে জুলুসের নেতৃত্বে আসেন তাঁরই সাজ্জাদানশীন হুজুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ তাহের শাহ মাদ্দাজিলুহুল আলী। মাঝখানে কয়েকবার ছাড়া অন্তত ৩৪ টি জুলুসের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত আল্লামা তাহের শাহ হুজুর। এবার হবে তাঁর ৩৫ তম নেতৃত্ব এবং এবারের জুলুসটি হবে ৫১ তম আয়োজন। ইনশাআল্লাহ, এবারও গতবারের ৫০ তম জুলুসের মতো, তাঁর সাথে থাকবেন দরবারে আলীয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের অপর সাজ্জাদানশীন পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সাবির শাহ মাদ্দাজিলুহুল আলী এবং শাহজাদা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ কাসেম শাহ্।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরো বলেন, বিগত বছরগুলোতে, এতে প্রায় অর্ধকোটি মানুষের সমাগম হয়েছে। ইনশাআল্লাহ, এ বছর উপস্থিতি সংখ্যা সব কিছু ঠিক থাকলে আরো বাড়বে আশা করি। কারণ, এটি এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে রুপ নিয়েছে। চট্টগ্রামের ইতিহাসে জশনে জুলুস এক অবিচ্ছেদ্য কালচারের বহিঃপ্রকাশ। এখানকার মানুষ এক জুলুস শেষ হতেই পরবর্তী বছরের জুলুসের অপেক্ষায় থাকে। মানুষ চায়, এটি শুধু চট্টগ্রামের ঐতিহ্য হিসেবে নয় বরং বিশ্ব ঐতিহ্য world heritage হিসেবে স্থান পাক। গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ডে এর জায়গা হলে তা চট্টগ্রামকেও সম্মানিত করবে।
পবিত্র জশনে জুলুসে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দরুদ) – ২০২৩ ইং প্রদক্ষিণের রাস্তাসমূহ: হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মাঃ জিঃ আঃ)’র নেতৃত্বে প্রধান মেহমান আল্লামা পীর সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহ (মাঃ জিঃ আঃ) ও বিশেষ মেহমান সাহেবজাদা আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ কাসিম শাহ (মঃ জিঃ আঃ)’র অংশগ্রহণে পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.) র জশনে জুলুস ২০২৩ ইং সকাল ৮টায় চট্টগ্রাম ষোলশহরস্থ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন আলমগীর খানকা-এ-কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়ারিয়া হতে আরম্ভ হয়ে বিবিরহাট, মুরাদপুর, মির্জারপুন, কাতালগঞ্জ হয়ে অলিখা মসজিদ চকবাজার, প্যারেড ময়দানের পশ্চিম পার্শ্ব হয়ে চট্টগ্রাম কলেজ, গণি বেকারী (ডানে মোড়), খাস্তগীর স্কুল (ডানে মোড়), শহীদ সাইফুদ্দীন খালেদ রোড, আসকার দিঘী, কাজীর দেউরী (ডানে মোড়), আলমাস (বামে মোড়) ওয়াসা (ডানে মোড়), জিইসি, ২ নম্বর গেইট প্রদক্ষিণ পূর্বক পুনরায় মুরাদপুর, বিবিরহাট হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে জমায়েত- দুপুর ১২টায় মাহফিল এবং মাহফিল শেষে নামাজে যোহর ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। ইনশাআল্লাহ।
ঢাকার জুলুস ৯ রবিউল আউয়াল, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সোমবার সকাল ৯ টা, মুহাম্মাদপুর জয়েন্ট কোয়ার্টারস্থ কাদেরিয়া তৈয়বিয়া আলীয়া মাদ্রাসা হতে।