চবকে ক্রেন ক্রয়ে কারসাজি, ক্ষতি কোটি কোটি টাকা

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) ৭০ কোটি টাকা মূল্যের মোবাইল ২৩ টি মোবাইল ক্রেন ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। টেন্ডার দরপত্রে আগেই ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেন্ডার ডকুমেন্টের শর্ত পরিবর্তন করে ৪ মিটার ১০ টন বাদ দিয়ে ডিপিপি ২০১৯ কারিগরি শর্তে ৪.৫মিটার ১০ টন বড় ধরনের পরিবর্তন আনায় ক্রয় কাজের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে চবক। অভিযোগ আছে উচ্চমূল্যে কাজ দিতে প্রথম থেকেই বন্দরের দীর্ঘদিনের প্রচলিত নীতিমালা উপেক্ষা করে ৪.৫মিটার ১০ টন নির্ধারণ করে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বন্দরে সফলতার সঙ্গে দীর্ঘদিন ব্যবহার হচ্ছে এমন বিশ্ব খ্যাত ক্রেন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দরপত্র দাখিলের অযোগ্য হওয়ায় প্রতিযোগিতা সীমিত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি মনোনীত লোকাটেলি ক্রেন এস আর এল ইটালি প্রতিষ্ঠান উচ্চ দর দেওয়ার সুযোগ পাবে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আরডেন্ট মেরিন লিঃ, গোপনে সমঝোতা করে চলতি বছর লোকাটেলি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতেই এমন সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেছেন দরপত্রে অংশ নিতে চাওয়া প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিযোগ এতে একদিকে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি দরপত্রের বাইরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে রাখায় আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
ওই সকল ক্রেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার কারণে তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারেনি। এই সকল শর্তের ব্যাপারে বলতে গিয়ে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি বলেন, এ ধরনের দরপত্র বন্দরের দরপত্র ক্রয়ের জন্য একটি নজির। শর্তের কারণে অনেকে তাদের দরপত্র দাখিলের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। তারা আরও জানান,’দরপত্র দাখিল প্রতিযোগিতামূলক হবে না এমন আশংকায় কোনো প্রিন্সিপালের শর্ত পরিবর্তনের মাধ্যমে দরপত্র দাখিলের সুযোগ রাখেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, যে লোকাল এজেন্ট আরডেন্ট মেরিন লিমিটেড’র মালিক হাসান আরিফ প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করিয়ে একচ্ছত্রভাবে ৭০ কোটি টাকার কাজ ৭৫ কোটি টাকায় হাতিয়ে নেওয়া জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে, সে প্রতিষ্ঠানের মালিক এর আগে মেরিন ডিপার্টমেন্ট একচ্ছত্র কাজ করেন। বিগত ০৩/১১/২০২২ কার্যপত্রে প্যাকেজ নম্বর জি-১৪ এ আওতায় ১০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২৩ টি মোবাইল ক্রেন ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। এতে ৪টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহন করলেও লোকাটেলি এস আর এল প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। লোকাটেলি প্রতিষ্ঠান সময় মতো ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিতে না পারায় ৩য় বারের মত টেন্ডার আহবান করা হয়। শর্ত ভঙ্গ করায় লোকাটেলি চট্টগ্রাম বন্দরে কালো তালিকা ভুক্ত কোম্পানি হওয়ার কথা কিন্তু অদৃশ্য কারণে তাদের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের টেন্ডার অংশ নিতে কোনো বাধা নেই।
গত ১৬ এপ্রিল ২০২৩ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ১০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২৩ টি মোবাইল ক্রেন ক্রয়ের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। উক্ত টেন্ডারের দুটি ক্রেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে যার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান জার্মানির সেনেবোগেন মেশিন ফেব্রিক অন্য প্রতিষ্ঠানটি লোকাটেলি ক্রেন এস আর এল ইটালি।
উক্ত টেন্ডার টেকনিক্যাল সেকশনে উল্লেখ আছে ৪.৫ রেডিয়াসে ১০ টন নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে। জার্মানির ক্রেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সেনেবোগেন মেশিন ফেব্রিক টেন্ডারে অংশগ্রহনকৃত ক্রেনের মডেলটির ৪.৫ মিটারে ১০ নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে যা তাদের অনলাইনে প্রকাশিত ক্যাটালগে ও আন্তর্জাতিক পরিক্ষা টিমের রিপোর্টে উল্লেখ আছে।
জার্মানির ক্রেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দশটি ১০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন মোবাইল ক্রেন সরবরাহ করে। প্রায় ১০ বছরের পুরানো এ ক্রেনগুলো এখনো সম্পূর্ণরূপে সচল রয়েছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরের মালামাল লোডিং আনলোডিং এর জন্য গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে যে জার্মানির সেনেবোগেন মেশিন ফেব্রিকের টেন্ডারে অংশগ্রহনকৃত ক্রেনের মডেলটি আকারে ছোট এবং যার পরিচালনা ব্যয় অন্যান্য সরবরাহকারী ক্রেনের তুলনায় অনেক কম এবং চট্টগ্রাম বন্দরে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ ধরনের ছোট ক্রেন খুবই উপযোগী। অন্য ক্রেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটি ৩০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন দিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহন করে। এ ধরনের ক্রেন আকারে বড় এবং পরিচালনা ব্যয় অনেক বেশি। এছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এ ধরনের অনেকগুলো বড় ক্রেন ইতিমধ্যে ক্রয় করা হয়েছে। তাই এ ধরনের ক্রেন ক্রয় করলে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনা ব্যয় অনেক বৃদ্ধি পাবে।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি কারিগরি ত্রুটি দেখিয়ে ক্রেন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান সেনেবোগেন মেশিন ফেব্রিককে ননরেস্পন্সিভ হিসেবে বিবেচিত করলে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান রেস্পনসিভ হিসেবে বিবেচিত হবে। তখন এটি একক দরপত্র হিসেবে বিবেচিত হবে। এভাবে সমঝোতার ভিত্তিতে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিলে বন্দর কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিগত সালের দরপত্র আহবানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ৪মিটার ১০ টন ২০১৩ মোট ক্রেনের সংখ্যা ১০টি, ৪মিটার ১০ টন ২০১৭ মোট ক্রেনের সংখ্যা ১২ টি, ৪.৫ মিটার ১০ টন ২০১৯ মোট ক্রেনের সংখ্যা ০৮ টি, ৪.৫ মিটার ১০ টন ২০২০ মোট ক্রেনের সংখ্যা ২৩ টি, ৪.৫ মিটার ১০ টন ২০২২ –মোট ক্রেনের সংখ্যা ২৩ টি,৪.৫ মিটার ১০ টন ২০২৩ মোট ক্রেনের সংখ্যা ২৩ টি।

মন্তব্য করুন