সবুজ ও ন্যায্য রুপান্তরের দাবীতে কক্সবাজারে র‌্যালি ও মানববন্ধন

মহেশখালী প্রতিনিধি: কক্সবাজারের মহেশখালীতে বেল্ট অ্যান্ড রোড ফোরাম এর সম্মেলনকে সামনে রেখে সবুজ ও ন্যায্য রূপান্তরের দাবিতে ১৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বিকাল ৪টার সময় ইউনুছখালী বাজার সংলগ্ন এলাকায় র‌্যালি ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন) সংশপ্তক এবং মহেশখালী সুরক্ষা কমিটির যৌথ আয়োজনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে উপস্থিত ছিলেন কোহেলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ও মহেশখালী সুরক্ষা কমিটির সদস্য নুরুল কাদের, কোহেলিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ছফুর আলম, জয়নাল আবেদীন জনু, আব্দুল কাদের, মোঃ করিম, সাংবাদিক ইমরান নাজির, লবন ব্যবসায়ী করিম সহ স্থানীয় মৎস্যজীবী, পরিবেশকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, পান ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পেশার লোকজন এতে অংশগ্রহণ করেন।
এ মানববন্ধনে বক্তারা বলেন , চীনা ঋণের সকল চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। চীনা ঋণের আওতায় জীবাশ্ম জ্বালানিতে সকল বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বাস্তবায়িত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকার রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে ক্ষতিগ্রস্ত, নিহত ও আহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে ২০৫০ সাল নাগাদ শতভাগ নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিনিয়োগ করতে হবে। তারা আরো বলেন, ১৭ অক্টোবর থেকে চীনের বেইজিংয়ে তৃতীয় সম্মেলন শুরু হবে। ১৯০টিরও বেশি দেশকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে এই সম্মেলনে। ২০১৬ সালে চিনের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে যোগ দেয় বাংলাদেশ। অনেকের ধারণা চীন এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্বল্পোন্নত এবং দরিদ্র দেশগুলোতে বিশাল অর্থ বিনিয়োগ করে দেশগুলোকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে চায়। এর জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ শ্রীলঙ্কার হামবানটোটা বন্দর। এছাড়াও লাওস, অ্যাংগোলা, জিবুতি, কেনিয়া, মালদ্বীপ, পাকিস্তান ইতোমধ্যে চীনের ঋণের ফাঁদে পড়ে গিয়েছে। এই প্রকল্পের অর্থায়নে যাতে বাংলাদেশকে কোনও ঋণের জালে জড়িয়ে না ফেলে সে দিকেও বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে। এইআইয়ের চায়না গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ট্র্যাকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীনা ঠিকাদারদের কাজের ব্যাপ্তি ৯০২ কোটি ডলার। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮১১ কোটি ডলারের কাজ পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। আবাসন, কৃষি, প্রযুক্তি ও ইউটিলিটি খাতে এর পরিমাণ যথাক্রমে ২৩৬, ১২৮, ১১৩ ও ১০৪ কোটি ডলার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২৭ কোটি ডলার। বিআরআই (বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) উন্নয়নের নামে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্তৃত্ত প্রতিষ্ঠা ও চীনের নিজস্ব বাণিজ্য সুসংহত করার পরিকল্পনায় মত্ত। উন্নয়নের নামে বাংলাদেশকে প্রকাশ্য ও গোপন ঋণের ফাঁদে ফেলে সুদ বাণিজ্য হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত। জ্বালানী স্বয়ংসম্পূর্ণ করার নামে জীবাশ্ম জ্বালানিতে তার বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলার পাশাপাশি দেউলিয়করণের দিকে ধাবিত করানো। বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে পরিবেশ প্রতিবেশ মানবাধিকার শ্রমাধিকারের দিকে তোয়াক্কা না করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। প্রায় ২০০০ বছর আগে হান রাজবংশের সময় প্রতিষ্ঠিত ‘সিল্ক রোড’ এর ধারণা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ২০১৩ সালে চীন বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) নামে একটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় বিশ্বজুড়ে দরিদ্র দেশগুলোর অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে চীন আধিপত্য বিস্তার করে চলছে।

মন্তব্য করুন