নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ঐক্য ও সম্প্রীতির দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এদেশকে রংধনু নেশনে পরিণত করতে চায়। অর্থাৎ একটি রংধনুতে যেরকম অনেকগুলো রং থাকে সে রঙের মধ্যে আমাদের ১৭-১৮টি নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী যারা আছে, বাঙ্গালি যারা আছে সবাই এক একটি রঙ। সব রং মিলে কিন্তু রংধনু অর্থাৎ রেইনবো নেশন বাংলাদেশ। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ হচ্ছে বিএনপির মূলমন্ত্র। অনেকেই এটা হৃদয়ে ধারণ করে না। হৃদয়ে ধারণ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। আর যারা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে তারাই বৌদ্ধদের মন্দিরে আগুন লাগিয়েছে। তারা হিন্দুদের মন্দির ভাঙ্গে।
তিনি মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) বিকালে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্নিমা উদযাপন উপলক্ষে কাজীর দেউরী নাসিমন ভবনস্থ বিএনপি কার্যালয়ের মাঠে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ঐক্য ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়ার সভাপতিত্বে ও উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক ঝন্টু কুমার বড়ুয়ার পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, বান্দরবান জেলা বিএনপির সভাপতি মা ম্যা চিং, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়া, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ ধর্ম সম্পাদক দিপেন দেওয়ান, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, ব্যরিষ্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাভেদ রেজা। সম্প্রীতি সমাবেশ উদ্বোধন করেন বাবু চন্দ্রগুপ্ত বড়–য়া।
এসময় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আপনারা যারা জাতীয়তাবাদী শক্তিকে বিশ্বাস করেন এটার মূল উৎস হচ্ছে যে যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি পালন করবে। যার যার ভাষা ও ঐতিহাসিক ভূমিকা আছে, ইতিহাস আছে সেটাকে পালন করবেন। এটার বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের একটি অংশ। এর মধ্যে সব ধর্মের মানুষ আছে। সব সম্প্রীতির মানুষ আছে। সব ইতিহাসের মানুষ আছে। সব ভাষার মানুষ আছে। সবাই মিলে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ।
তিনি বলেন, আমাদের বিপক্ষে যারা আছে তারা বলে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ। শুধু যারা বাঙ্গালি তাদের জন্যই কি বাংলাদেশ হয়েছে। সমস্ত বাংলাদেশের মধ্যে যারা বসবাস করে সকলের জন্য বাংলাদেশ। সকলেই সমানভাবে রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা, অধিকার পাবে। এটা আমাদের ধারণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে বিএনপির মূলমন্ত্র।
তিনি বলেন, যারা বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের কথা বলে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মন্দির ভেঙ্গেছে। ২০১২ সালে রামু মন্দিরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় ছবি আছে। আমরা দেখেছি সব। এটার কোনো বিচার হয়নি। উখিয়াতে মন্দিরে আক্রমণ করেছে আওয়ামী লীগের লোকজন কোনো বিচার হয়নি। হিন্দুদের মন্দিরে আক্রমণ করেছে কুমিল্লায়। মিথ্যা মামলা দিয়েছে অন্য মানুষের নামে। করেছে এ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। সুতরাং এদের থেকে যদি বাঁচতে হয় আজ সম্মিলিত ভাবে আমরা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে একটি ঐক্যবদ্ধ জায়গায় যেতে হবে।
আমীর খসরু বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বৌদ্ধদের মূল বসবাসের জায়গা। আপনাদের মধ্যে যদি ঐক্য থাকে, আপনারা যদি সমর্থন দেন আগামী দিনে যে রেইনবো নেশনের কথা বলছি সেটা করতে আমাদের অনেক সহজ হবে। সকলেই রাষ্ট্রের সমান অধিকার ভোগ করবে। আমরা চাই আপনাদের মধ্যে থেকে রাজনীতিতে উঠে আসুন। বিএনপিতে আপনারা অংশগ্রহণ করেন। আপনারা নেতৃত্বে আসেন। আপনাদেরকে কাউন্সিলর হতে হবে, চেয়ারম্যান হতে হবে, উপজেলা চেয়ারম্যান হতে হবে, এমপি ও মন্ত্রী হতে হবে। বিএনপি সেটাতে বিশ্বাস করে। জাতিকে আজ ঐক্যবদ্ধ করে এই ফ্যাসিস্ট সরকার থেকে আমাদের মুক্তি লাভ করতে হবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে সেলিমা রহমান বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে দেশকে গ্রাস করে ফেলেছে। বর্তমান সময়টা জাতির জন্য সবচেয়ে সংকটময়। এ সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও শান্তি প্রতিষ্ঠা অনেক চ্যালেঞ্জের। এই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য সকল ধর্মের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। আজকে প্রতিহিংসার কারণে শাসকগোষ্ঠী বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা চিকিৎসায় মুমূর্ষু অবস্থায় রেখেছে। বিরোধী কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেই নির্বাচনী পরিকল্পনা সরকার তৈরি করেছে। তার অংশ হিসেবে বিএনপি নেতাকর্মীদের ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে, যাতে তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। সব রাজনৈতিক দল এখন সরকারের পদত্যাগ চাইছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দাবি আদায় করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধ অহিংসা ও মানুষে মানুষে গভীর ভালোবাসার বাণী প্রচার করে গেছেন। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না, বরং শরণ নিতে হয় অহিংসার। আজকে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব রক্তপাত, সংঘাত ও সংঘর্ষে মানবজাতি ক্ষতবিক্ষত। এ শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তে গৌতম বুদ্ধের হিতোপদেশ মানুষকে অহিংসার পথে, ন্যায়ের পথে চালিত করবে। তাই আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদই সবাইকে একই বন্ধনে আবদ্ধ করে। শত বাধা বিপত্তির মধ্যেও আমাদের দীর্ঘ প্রত্যাশিত গণতন্ত্র ও শান্তি ফিরে আসবেই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শামা ওবায়েদ বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এই চমৎকার অনুষ্ঠানটি হচ্ছে ঐক্য সম্প্রীতির সম্মেলন। আজকে দেশের মানুষ শান্তিতে নাই। গত ১৭ বছরে কর্তৃত্ববাদী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অন্যায়ের শিকার হয়েছে বিএনপি। তাই দেশে শান্তি ও সম্প্রীতি আনতে হলে আওয়ামীলীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে। শান্তি তখনই আসবে যখন আওয়ামী লীগ বিদায় হবে। আগামীতে আমরা এমন শান্তির সুন্দর বাংলাদেশ চাই, যেখানে মানুষ গুম হবে না, খুন হবে না।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, বিএনপি এখন গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছে। তবে এই যুদ্ধ শুধু বিএনপির জন্য নয়, এটা এ দেশের জনগণেরও যুদ্ধ। দেশে মানুষের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার নেই। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস এম সাইফুল আলম, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. কামরুল ইসলাম, বৌদ্ধ ঐক্যফ্রন্টের নেতা প্রবীন চন্দ্র চাকমা, অনিমেষ চাকমা রিঙ্কু, অংজা প্রু চাকমা, প্রকৌশলী দিপু বড়–য়া, কমল জ্যোতি বড়–য়া, প্রীতম বড়–য়া, সাচিং মারমা, উত্রাসিং মারমা, সুজন বড়–য়া, বরুন বড়–য়া, রুবেল বড়–য়া, মোহন বড়–য়া, সজল বড়–য়া, জুয়েল বড়–য়া, চয়ন বড়–য়া, দীক্ষিত বড়ুয়া, তন্ময় বড়–য়া প্রমুখ।