‘ডিটেইলড মাস্টার প্ল্যান ভিত্তিক পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে ১৩ দাবি’

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু টানেল: দক্ষিণ চট্টগ্রামের উন্নয়ন সম্ভাবনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আজ (৩১ অক্টোবর ২০২৩ ইংরেজি) মঙ্গলবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের আলহাজ্ব সুলতান আহমদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুল আলম খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব অধ্যক্ষ স.উ.ম. আবদুস সামাদ। দক্ষিণ জেলা সেμেটারি আলী হোসাইনের সঞ্চালনায় এতে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইসলামী ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ সোলাইমান ফরিদ। এতে আলোচনায় অংশ নেন দৈনিক পূর্বকোণের সহকারী সম্পাদক অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল, ডায়মন্ড সিমেন্ট গ্রুপের ডি.জি.এম মোহাম্মদ আবদুর রহিম, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সোহেল মোহাম্মদ ফখরুউদ্দিন, সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান ক্সসয়দ এয়ার মোহাম্মদ পেয়ারু, মাস্টার মোঃ আবুল হোসাইন, মোঃ মহিউল আলম চৌধুরী, এম বেলাল উদ্দিন আলমদার, সৈয়দ মোঃ আমান উল্লাহ সমরকন্দি, কাজী সাকের আহম্মেদ চৌধুরী, ডি আই এম জাহাঙ্গীর আলম, মাস্টার মোঃ আলী খান, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, মোঃ কলিম উদ্দিন, যুবনেতা মোঃ মামুন উদ্দিন সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় ছাত্র-নেতা, মোঃ তারিফ হোসেন, ছাত্র-নেতা মোঃ নুরুদ্দিন, ডাঃ মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। প্রধান অতিথি অধ্যক্ষ সামাদ বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক মেঘা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের মেঘা প্রজেক্ট গ্রহণকে আমরা সাধুবাদ জানাই। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে একটি নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য যে, টানেল উদ্বোধনী জনসভায় কোন মন্ত্রী, এমপি কিংবা আওয়ামী লীগের কোন নেতা টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলীর দু’পাড়ে ওয়ান সিটি টু টাউন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কথা বলেন নাই। চট্টগ্রামের নেতারা ভুলে গেছেন যে, চট্টগ্রামে পাঁচটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটিও নেই। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী এক হাজার একর জমি μয় করে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য রেখে গেছেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আমূল পরিবর্তন হবে এ বিষয়ে কোন ঘোষণা বা বক্তব্য না আসায় জনগণ বিস্মিত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্য চট্টগ্রামের দুঃখ কালুরঘাট সেতুর কথাও কারো বক্তব্যে পেলাম না, এমনকি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক ছয় লাইন করার কথা ভুলেও উচ্চারণ করেন নাই। চট্টল দরদী নেতারা তৈলশাসত্র চর্চায় ব্যস্ত ছিলেন। তারা জনতার দাবীর কথা বেমালুম ভুলে গেছেন। এতে জনগণ আশাহত হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর দুইপাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতেই যদি কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করা হয়। তবে তা মাস্টার প্লান নিয়ে এগুতে হবে। ডিটেইলড মাস্টার প্ল্যান ভিত্তিক পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন হলেই টানেলের সুফল আসবে। লিখিত প্রবন্ধে সোলাইমান ফরিদ দক্ষিণ চট্টগ্রামের কাক্সিক্ষত উন্নয়নের জন্য ১৩ দফা পেশ করেন, যথাμমে-(১) ওয়ান সিটি টু টাউন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামে শিল্পায়ন ও পর্যটনের অপার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে কর্ণফুলী, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, পটিয়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী ও মহেশখালী ঘিরে একশত বছরের একটি ডিটেইলড মাষ্টার প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। (২) কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। (৩) μমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চতর শিক্ষার সহজ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিশাল দেয়াং পাহাড়ে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর নামে দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (৪) দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী প্রফেসর ডাঃ নুরুল ইসলামের নামে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজ/একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। (৫) টানেলের পরিপূর্ণ সুফল দ্রুত পেতে হলে টানেলের পূর্বাংশে তথা কর্ণফুলির দক্ষিন পাড়ে, কর্ণফুলী, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, বাঁশখালী অংশে পরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়নসহ ওয়ান সিটি টু টাউন বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। (৬) সাবেক পটিয়া মহকুমাকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলায় রুপান্তর করতে হবে। (৭) দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য দোহাজারী, কক্সবাজার রেললাইনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মান করতে হবে। (৮) বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন জোন বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যাতায়াত দ্রুত ও সহজ করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক প্রকল্প ছয় লেইনের দ্রুত বাস্তবায়ন করা। (৯) সমুদ্র পাড় ঘেঁষে মীরসরাই, আনোয়ারা হয়ে টেকনাফ পর্যন্ত মেরিন-ড্রাইভ মহাসড়ক প্রকল্প বাস্তবায়নসহ চট্টগ্রাম-বাঁশখালী- টইটং সড়ককে কক্সবাজার পর্যন্ত মহাসড়কে রুপান্তর করতে হবে। (১০) পটিয়া শ্রীমাই খালের উপরে ব্রিটিশ আমলের উৎপাদনকৃত স্থানে খনিজ গ্যাস সম্পদ পুনরায় উৎপাদনের দাবী। (১১) পটিয়া, বোয়ালখালী, চন্দনাইশ পাহাড়ী এলাকায় অমূল্য খনিজ সম্পদ হোয়াইট স্টোন তথা সাদা পাথরের পাহাড়কে সংরক্ষণ করে উৎপাদনমুখী করার দাবী। (১২) চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনা কবলিত লোকদের জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানী, জাতীয় অধ্যাপক ডা: নুরুল ইসলামের নামে একশ শয্যা বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল গড়ে তোলা যাহা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মেডিকেলের উপর চাপ কমাবে। (১৩) পটিয়া হাইদগাঁও-রাঙ্গুনীয়া বাঙ্গালহালিয়া সড়ক বাস্তবায়ন করে বিশাল পার্বত্য অঞ্চল-রাঙ্গুনীয়া ও বান্দরবান কেন্দ্রিক সবজি বাজারজাতকরণে সহজ ও সাশ্রয়ের মাধ্যমে নি¤œবিত্ত জনশ্রেণীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম করা।

মন্তব্য করুন