নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৪৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা রেডিসন ব্লু হোটেল চট্টগ্রাম বে-ভিউ (মোহনা হল, লেভেল-৪) আজ ১৬ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১ টায় অনুষ্ঠিত হয়। উল্লিখিত সাধারণ সভায় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি সভাপতিত্ব করেন। এছাড়ও বার্ষিক সাধারণ সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের মোঃ মোস্তফা কামাল এবং বিএসসি পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
৪৬তম বার্ষিক সাধারণ সভায় বিএসসি’র সুযোগ্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মোঃ জিয়াউল হক শেয়ারহোল্ডার ও উপস্থিত সুধীবৃন্দ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের সামগ্রিক কর্মকান্ডের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বিএসসি’র পরিচালনা আয় ছিল ৫১৫.৪৩ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১৫১.৮০ কোটি টাকা। সর্বমোট আয় হয়েছে প্রায় ৬৬৭.২৩ কোটি টাকা।
অন্যদিকে পরিচালনা ব্যয় ছিল ২৮৬.৮২ কোটি টাকা এবং প্রশাসনিক ও আর্থিক খাতে ব্যয় ছিল ৮৮.৮২ কোটি অর্থাৎ সর্বমোট ব্যয় হয় ৩৭৫.৬৪ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কর সমন্বয়ের পর সংস্থার নীট মুনাফা হয়েছে ২৪৬.২৯ কোটি টাকা। গত ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিএসসি’র মোট আয় হয়েছিল ৫১৭.৩৯ কোটি টাকা ও মোট ব্যয় হয়েছিল ২৪৪.৩২ কোটি টাকা এবং কর সমন্বয়ের পর নীট মুনাফা হয়েছিল ২২৫.৮১ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বিএসসির নীট আয় বেড়েছে প্রায় ২০.৪৮ কোটি টাকা। বিএসসি পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারগণকে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের নীট লাভ হতে ২৫% (পঁচিশ) হারে নগদ লভ্যাংশ (ক্যাশ ডিভিডেন্ট)প্রদানের সুপারিশ করা হয়েছে মর্মে তিন সভায় অবহিত করেন।বিএসসির লাভের ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আরো বেশি লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করা হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিএসসি বর্তমান সরকারের সুযোগ্য দিক নির্দেশনা ও সক্রিয় সহযোগিতায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং ব্লু-ইকোনমির ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এসডিজি গোলস-২০৩০ এবং রুপকল্প-২০৪১ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক শিপিং সংস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে মিশ্র বাণিজ্যিক জাহাজ বহর সৃষ্টিসহ আনুষাঙ্গিক নানাবিধ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চীন সরকারের ঋণ সহায়তায় গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৬ টি নতুন জাহাজ (প্রতিটি প্রায় ৩৯,০০০উডঞ সম্পন্ন ৩টি নতুন প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ও ৩টি নতুন বাল্ক ক্যারিয়ার) ক্রয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে যার মধ্যে বর্তমানে ০৫টি জাহাজ বিএসসির বহরে আছে। উক্ত জাহাজসমূহ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকভাবে নিয়োজিত করা হয়েছে। যার মাধ্যমে আয় হওয়া বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছে। দেশে আমদানিতব্য ক্রুড অয়েল বিএসসির নিজস্ব জাহাজের মাধ্যমে পরিবহনের জন্য ও দেশের জ্বালানী নিরাপত্তার স্বার্থে কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য যেমন: খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, ক্লে এবং বাল্ক কার্গো ইত্যাদি পরিবহনের টহরহঃবৎৎঁঢ়ঃবফ ংঁঢ়ঢ়ষু পযধরহ গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রতিটি ১,১৪,০০০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২ (দুই) টি নতুন ক্রুড অয়েল মাদার ট্যাংকার ও নতুন প্রতিটি ৮০,০০০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন ২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার অর্জনের জন্য গৃহীত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ “জি টু জি ভিত্তিতে ০২টি ক্রুড ওয়েল মাদার ট্যাংকার এবং ০২টি মাদার বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ সংগ্রহ” শীর্ষক প্রকল্পটি গত ১৮-০৪-২০২৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় অনুমোদন লাভ করেছে। এছাড়া, এ প্রকল্পের অধীনে ০৪টি জাহাজ ক্রয় সম্পর্কিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিজিপি)’র প্রস্তাব/সুপারিশ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গত ১৭-০৭-২০২৩ তারিখে অনুমোদিত হয়েছে। উক্ত অনুমোদনের আলোকে ইতোমধ্যে ঈযরহধ ঘধঃরড়হধষ গধপযরহবৎু ওগচ. ্ ঊঢচ. ঈড়ৎঢ়ড়ৎধঃরড়হ এর সাথে জাহাজ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। উক্ত ৪টি জাহাজ বিএসসির বহরে শীঘ্রই যুক্ত হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) প্রতি বছর ৩৫ লক্ষ মেট্রিক টন ডিজেল অয়েল এবং ৪ লক্ষ মেট্রিক টন জেট ফুয়েল আমদানী করে, যা বিদেশী জাহাজের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ঝরহমষব চড়রহঃ গড়ড়ৎরহম (ঝচগ) রিঃয উড়ঁনষব ঢ়রঢ়বষরহব শীর্ষক প্রকল্প সমাপ্ত হলে আমদানিকৃত ডিজেল ও জেট ফুয়েল পরিবহনের জন্য ২ (দুই)টি ৮০,০০০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন মাদার প্রোডাক্ট অয়েল ট্যাংকার ক্রয় প্রকল্প/ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এবং ন্টেইনার পরিবহন বাণিজ্যে বৈশ্বিক ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় বিএসসির লাভজনক ও সফল অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণে নতুন ১২ টি সেলুলার কন্টেননার জাহাজ (প্রতিটি ২,৫০০ থেকে ৩,০০০ ঞঊটং)অর্জনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, ভবিষ্যৎ চাহিদার ভিত্তিতে নিজস্ব ও বৈদেশিক অর্থায়নে আরো বিভিন্ন আকার ও ধরণের জাহাজ ক্রয় প্রকল্প এবং দেশে আন্তর্জাতিক মানের জাহাজ নির্মাণ, ডকিং, মেরামত ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের শিপইয়ার্ড নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের ৪৬তম বার্ষিক সাধারণ সভা আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন, উপ-সচিব ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন), বিএসসি, চট্টগ্রাম।