নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিশ্ব এইডস দিবস-২০২৩ উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে র্যালি পরবর্তী আলোচনা সভা আজ ১ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘কমিউনিটি আমন্ত্রণ, এইডস হবে নিয়ন্ত্রণ’। এনজিও সংস্থা-ছায়াপথ, বন্ধু, ব্র্যাক, ঘাসফুল, মমতা, এফপিএবি, ইমেজ, ইপসা ও পদক্ষেপ’র সহযোগিতায় দিবসটি পালন করা হয়। শুরুতে বেলুন উড়িয়ে ও র্যালির মাধ্যমে বিশ্ব এইডস দিবসের শুভ উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপ-পরিচালক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খানের সভাপতিত্বে ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গোলাম মোস্তফা জামাল ও সীতকুন্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মোঃ নূর উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বক্ষব্যাধি ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডা. মোস্তফা নুর মোর্শেদ। বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ডিএসএমও (টিবি) ডা. আবদুল্লাহ-হির রাফি অঝোর, বন্ধু সোস্যাল ওয়েল ফেয়ারের কো-অর্ডিনেটর নুরুল হাসেম, ব্র্যাক’র জেলা ম্যানেজার জামাল উদ্দিন ও ডিআইসি’র ম্যানেজার শ্যামল মন্ডল। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা থোয়াইনু মং মারমা, জেলা ইপিআই সুপারিন্টেন্ডেন্ট জয়নাব বেগম, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইপিআই) কাজল কান্তি পাল, প্রধান সহকারী তাপস কান্তি রায়, হেলথ এডুকেটর প্রবীর মিত্র, জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মোঃ মাসুদুল আলম, স্যানিটারী ইন্সপেক্টর টিটু কান্তি পাল, স্টোর ইনচার্জ জাহেদুল ইসলাম, পরিসংখ্যানবিদ গীতাউশ্রী দাশ, স্বাস্থ্য পরিদর্শক শক্তি বড়–য়া, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার গাজী মোঃ নূর হোসেনসহ সর্বস্তরের নার্স ও কর্মচারীরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভার পূর্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। র্যালিতে চিকিৎসক, নার্স, এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ গ্রহণ করেন।
বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এইডস সংক্রমণের একটি বড় অংশ প্রবাসী। বাংলাদেশে এইডস সংক্রমণের হার .০১ শতাংশ হলেও আত্মতৃপ্তির কোন কারণ নেই। পাশ্ববর্তী দেশ ভারত, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে অনেক এইডস রোগী আছে। যারা শিরায় ইনজেকশন নেয় তারাই বেশী এ রোগে আক্রান্ত হয়। নিরাপদ যৌনজীবন, নিরাপদ রক্ত, নিরাপদ ইনজেকশন ও নিরাপদ মাতৃত্ব-এ চারটি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে এইচআইভি এইডস থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে এইচআইভি এইডসের চিকিৎসা দিচ্ছে। কোন লোক এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত কি না তা খোঁজ-খবর রাখতে হবে। নেতিক চরিত্র নীতিভ্রষ্ট হলেই এইডসে আক্রান্ত হবে। আমাদেরকে সচেতন হতে হবে।
বক্তারা বলেন, অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে সন্তানেরা সোস্যাল মিডিয়ায় আসক্ত হয়ে ইনজেকশনের মাধ্যমে ড্রাগ নিচ্ছে। ফলে তারা বিপথে ধাবিত হচ্ছে। এইডস হলো একধরণের ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ। এই রোগ এইচআইভি ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। এ ভাইরাস মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়। প্রাণঘাতী এই রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকদের মাঝে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। এইডস থেকে বাঁচতে হলে শুধু জানলে হবে না, অন্যকে জানানোর মাধ্যমে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে একযোগ কাজ করতে হবে। এইডস নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুস্থ ও সুন্দর জাতি গঠন সম্ভব। আমরা এইডসমুক্ত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে কোন প্রয়োজনে মানবদেহে রক্তসঞ্চালনের পূর্বে তাতে এইচআইভি ভাইরাসের উপস্থিত আছে কিনা তা অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে। অসমতা দূর করে এইডস নির্মূল করতে হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে দিন দিন এইচআইভি এইডস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে এইডস প্রতিারোধ করা সম্ভব। এইচআইভি এইডস সনাক্ত হলে সাথে সাথে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। এর প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির কোন বিকল্প নেই। সরকারের পাশাপাশি এইডস প্রতিরোধে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান বক্তারা।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোহাম্মদ নুরুল হায়দার জানান, বিগত ২০২২ সালে সারাদেশে এইচআইভি এইডস রোগে আক্রান্ত ছিল ৯৪৭ জন, তন্মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ২৩২ জন। চলতি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত নতুন চট্টগ্রামে এইচআইভি এইডস রোগী সনাক্ত হয় ৪২ জন।