নিউজগার্ডেন ডেস্ক: গায়েবি মামলায় গ্রেফতার হয়ে বন্দি কয়েকজন নেতাকর্মী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় গভীর উদ্বেগ ও তাদের জীবনহানির শঙ্কা প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
তারা বলেন, কারাগারে অসুস্থ হয়ে মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. ইকবাল চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতাকর্মী মানবেতরভাবে দিনাতিপাত করছেন। অসুস্থ নেতাকর্মীরা যথাযথ কারাবিধি অনুযায়ী সুযোগ সুবিধা ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের সুচিকিৎসা এবং দ্রুত জামিনে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশী হামলার পর থেকে চট্টগ্রামে দেড় হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ও আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. ইকবাল চৌধুরী, মহানগর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা, বায়েজিদ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউছুপ, বাকলিয়া থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আলমগীর, চকবাজার থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুজ্জামান জুনু ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ওয়াকিল হোসেন বগাসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গত ২৯ অক্টোবর ইকবাল চৌধুরীকে রাহাত্তার পুলস্থ আহাদ কমিউনিটি সেন্টারে আত্মীয়ের বিয়ে অনুষ্ঠান থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করে পাহাড়তলী থানার একটি ভাংচুর মামলায় কারাগারে প্রেরণ করে। উক্ত মামলার এজাহারে বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার বাসিন্দা ইকবাল চৌধুরীর নামও ছিল না। কারও জবানবন্দিতেও তার নাম আসেনি। অথচ তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তার ছেলে আহনাফ চৌধুরী জানিয়েছে, তার বাবাকে গত রবিবার চট্টগ্রাম আদালতে মামলার হাজিরার জন্য আনা হলে তিনি সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি হার্টের সমস্যা, প্রেসার ও এলার্জি সহ নানাবিধ রোগে ভুগছেন। তাছাড়া বিএনপি নেতা খায়রুজ্জামান জুনু ও মো. আলমগীর গত সপ্তাহে আদালত থেকে জামিন পেলেও পুলিশ তাদেরকে পুনরায় কারা ফটক থেকে গ্রেফতার করে অন্য মামলায় কারাগারে পাঠিয়েদেন। এরপর থেকে তারা কারাগারে অসুস্থ হয়েপড়েছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রাম কারাগার এখন বন্দী বিএনপি নেতাকর্মীতে ঠাসা। কারাবিধি অনুযায়ী, একজন বন্দীর থাকার জন্য ন্যূনতম ছয় ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের জায়গা থাকতে হয়। কারাগারে সেটা দেওয়া হচ্ছে না। কারাবিধিও মানা হচ্ছে না। কারাগারে চিকিৎসকের সংখ্যাও কম। ফলে বন্দীদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া কারাগারে টয়লেটের সংকটও রয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক থেকে দেড়শ বন্দীর বিপরীতে টয়লেট রয়েছে মাত্র একটি। ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি বন্দী থাকায় ওয়ার্ডগুলোতে বসবাসের মানবিক পরিবেশ সংকটে পড়েছে। বন্দীরা গাদাগাদি করে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জেলের ভেতরে থাকার কোনো পরিবেশ নাই। ওয়ার্ডগুলোতে শুয়ে কেউ পাশ ফিরবে এমন অবস্থাও নেই। টয়লেট যেতে হলেও লম্বা সিরিয়াল লাগে।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গত ২৫ নভেম্বর কাশিমুপর কারাগারে বন্দি মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির সহ সভাপতি গোলাপুর রহমান মারা গেছেন। স্বৈরাচার হাসিনা সরকার বিরোধী আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিক বিএনপির ৪-৫ জন নেতাকর্মী ইতোমধ্যে বন্দী অবস্থায় মারা গেছেন। সুচিকিৎসা এবং দ্রুত জামিনে মুক্তি না দিলে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দি ইকবাল চৌধুরীসহ অসুস্থ নেতাকর্মীদেরও এমন পরিণতি বরণ করতে হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। ফ্যাসিস্ট সরকার মানবতাকে পদদলিত করে তাদের কারাগারে আটকে রেখে চিকিৎসা সেবা ও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত করে ক্রমাগত মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা এর অবসান চাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যেকোনো গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসন থাকা দেশে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচার শেষে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কারাভোগ শুরু করেন। বাংলাদেশে এক তৃতীয়াংশ বন্দী বিচার চলা অবস্থায় কারাভোগ করেন। এ দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র নেই বললেই এটা সম্ভব হচ্ছে।ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা এখন রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম কারাগারে বিএনপি নেতাকর্মী সহ সকল বন্দীদের সুচিকিৎসা ও আইনগত ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের দ্রুত জামিনে মুক্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।