নিউজগার্ডেন ডেস্ক: ভোটের মাঠে থাকা সব প্রার্থীকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন জানিয়ে চট্টগ্রাম-১০ আসনে নৌকার প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেছেন, কে কার প্রতিদ্বন্দ্বী সেটা জনগণের ভোটেই প্রমাণ হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে সাংবাদিকদের সঙ্গে নগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনজুর আলমের এক এগারোর সময়ে ভূমিকা এবং মেয়র হিসেবে অর্জন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে বলেও মন্তব্য করেন।
চট্টগ্রামের এই আসনে বাচ্চুসহ প্রার্থী রয়েছেন নয় জন। অন্যরা হলেন মোহাম্মদ মনজুর আলম (স্বতন্ত্র-ফুলকপি), মো. ফেরদাউস বশির (তৃণমূল বিএনপি, সোনালী আঁশ), আবুল বাশার মুহাম্মদ জয়নুল আবেদীন (ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, চেয়ার), জহুরুল ইসলাম রেজা (জাতীয় পার্টি, লাঙ্গল), মিজানুর রহমান (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, একতারা), ফরিদ মাহমুদ (স্বতন্ত্র, কেটলি), মো. আনিছুর রহমান (বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, মশাল) ও মুহাম্মদ আলমগীর ইসলাম বঈদী (বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, মোমবাতি)। এদের মধ্যে নৌকার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে সাবেক সিটি মেয়র মনজুর আলমকেই ভাবছেন অনেকে।
তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন কিনা- একজন সাংবাদিকের এ প্রশ্নে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, “সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কিছু না কিছু যোগ্যতা আছে বলে আমি মনে করি। তিনি আমাদের সংসদীয় এলাকায় কাউন্সিলর ছিলেন না। বাইরের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন।
“তিনি সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তা নিয়ে জনমনে ক্ষোভ আছে। আমাদের নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীও ১৭ বছর মেয়র ছিলেন। তিনি মানুষের হৃদয়ে আজও অমলিন হয়ে আছেন। আর এক এগারোর সময়ে উনার (মনজুর আলম) যে ভূমিকা, সেটা বলতে চাইনি। আপনি প্রশ্ন করেছেন বলে বলতে হল। উনার সেই ভূমিকা চট্টগ্রামের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের হৃদয়ে বেদনার দাগ ফেলে গেছে।”
আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন গত ৩০ অগাস্ট হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এবার ভোটার উপস্থিতি কতটা বাড়বে এবং কাকে তিনি মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন?
জবাবে মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, “আমি সকল প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি। জনগণ ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে কে কার প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমীক্ষায় দেখা গেছে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোতে ভোটার উপস্থিতি খুব বেশি হয় না।
“আমার উপ-নির্বাচন ছিল একাদশ জাতীয় সংসদের একদম শেষ পর্যায়ে, তাই ভোটার কম ছিল। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেশের ভাগ্য নির্ধারণের ভোট, এবার ভোটাররা সবাই ভোটকেন্দ্রে হাজির হবেন।”
আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদের করা ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। আমার নেত্রী ও দল ঘোষণা করেছে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে যেন নির্বাচন হয়। আমি এর ব্যত্যয় ঘটাতে পারি না।
“তিনি যে অভিযোগ করেছন তা আমি জ্ঞাত নই। আমাদের আসন এমন একটি নির্বাচনী এলাকা যেখানে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেও কোনো বাগবিতণ্ডা হয়নি। এখনো কোনো অভিযোগ আমরা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও পাইনি।”
কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অবস্থান ও অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাচ্চু বলেন, “কারো নিজস্ব মতামত দেয়ার অধিকার আছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়ত নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কিছু লিখেছেন কেউ। সে অনুযায়ী মহানগরের নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থা নিলে হয়ত উনি অবস্থান পরিবর্তন করবেন।”
নির্বাচনী এলাকায় মসজিদে অনুদান দিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলমের করা এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেয়েছি সাড়ে ৩ মাসের কিছু বেশি। সংসদ সদস্য হিসেবে সরকারি অনুদান বিতরণের দায়িত্ব ছিল আমার। সেসব চেক বিতরণ করা হয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে। যে প্রতিষ্ঠান অনুদান পেয়েছে তাদের কোনো একজন প্রতিনিধি সাক্ষর করে সেই চেক নিয়েছেন। সেখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার বিষয় নেই।”
মহিউদ্দিন বাচ্চু বলেন, “আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা ডা. আফসারুল আমীনের মৃত্যুর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমি নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছি। এবার আবারও নেত্রী ও দল আমাকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে মনোনয়ন দিয়েছে।
“মাত্র কয়েকমাস আগে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে আমি সমাধানের উপায়সহ জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উপস্থাপন করেছি। নিজ এলাকাতেও সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থেকেছি। আমার সংসদীয় আসনের মানুষের কাছে আমার অনেক দায়বদ্ধতা আছে।”
৭ জানুয়ারি কেন্দ্রে এসে নির্ভয়ে ভোটারদের ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বাচ্চু বলেন, “চট্টগ্রামের মানুষের কল্যাণে অব্যাহত আত্মনিয়োগে আমি সংকল্পবদ্ধ। বিগত দিনগুলোর মতো জনস্বার্থে সবসময় একজন সেবকের ভূমিকায় সক্রিয় থাকব।”
সভায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, “উপ-নির্বাচনে ভোটাররা উনাকে ভোট দিয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু তিনি মাত্র তিন-চার মাস সময় পেয়েছেন। এত অল্প সময়ে এলাকার সমস্যা সমাধান কারো পক্ষেই সম্ভব না। তারপরও এতে কারো প্রত্যাশা পূরণ না হলে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।
“উন্নয়নের অগ্রযাত্রার জন্য সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। সকল ভোটারের কাছে বিনীত আহ্বান আপনারা প্রধানমন্ত্রী মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়ী করুন।”
সভায় উপস্থিত ছিলেন নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, নগর কমিটির নেতা বদিউল আলম, একেএম বেলায়েত হোসেন, আহমদুর রহমান সিদ্দিকী, বখতেয়ার উদ্দিন খান, সাইফুদ্দিন খালেদ বাহার ও দেলোয়ার হোসেন খোকা।