রেজাল্টশিটে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ ফরিদ মাহমুদ’র

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: নির্বাচনের দিন সকালেই অধিংকাশ এজেন্টের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর নিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম-১০ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
ফরিদ মাহমুদ বলেন, নির্বাচনের দিন সকালে কেন্দ্রে প্রবেশের সময় অধিকাংশ এজেন্টের কাছ থেকে রেজাল্ট শিটে প্রিজাইডিং অফিসার স্বাক্ষর নিয়ে নিয়েছেন। কয়েকটি ওয়ার্ডের কেন্দ্রগুলোতে আমার এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। যেসব কেন্দ্রে এজেন্ট ছিল সেসব কেন্দ্র থেকে কিছু এজেন্টকে সকাল ১০ টায়, কিছু এজেন্টকে ১২ টার পরে বের করে দেওয়া হয়। একটি মহল আমার ভোটের পরিমাণ কম দেখানোর জন্য ভিলেজ পলিটিক্স করেছেন। তারা আমার ভোটের রেজাল্ট জালিয়াতি করেছেন। তারা ভেবেছেন এতে করে তারা আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘ভোটের ফলাফলে বেশিরভাগ কেন্দ্রে ১০-১২ ভোট করে দেখিয়েছেন। ভোটের রেজাল্ট শিটে খেয়াল খুশিমতো সংখ্যা বসিয়ে দিয়েছেন। কিছু কিছু রেজাল্ট শিট ছিল এজেন্টদের স্বাক্ষর ছাড়া। আবার কিছু কিছুতে একহাতের লেখায় এজেন্টদের নাম লিখে একই কলমে একজন সবার স্বাক্ষর করে দিয়েছেন।’

নির্বাচনের দিন উপস্থিত সাংবাদিকদের এজেন্টদের স্বাক্ষরবিহীন পেন্সিলের লেখা রেজাল্ট শিট ও একই কলমের লেখা ও সব প্রার্থীর এজেন্টদের সাইন জাল করা এক ব্যক্তির হাতের লেখা রেজাল্ট শিটের কপি দেখিয়েছেন উল্লেখ করে ফরিদ মাহমুদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১০ আসনে ২ হাজার ৩৮৫ ভোট বাতিল দেখানো হয়। বাতিল দেখানো ভোটগুলো কোন প্রতীকের ছিল, এটা একটা কৌতূহল থেকে গেল। ভোটের দিন সকালে দুই প্রতীকের এজেন্টদের থেকে মোবাইলগুলো জব্দ করে নিলেও একটি প্রতীকের এজেন্টদের মোবাইলগুলো জব্দ করা হয়নি। এছাড়াও ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, প্রার্থীর এজেন্ট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া অন্য কোনো মানুষের থাকার কথা না থাকলেও একটি প্রতীকের ব্যাজধারী ৫-৬ জন নেতাকর্মী কেন্দ্রের ভেতরে সারাদিন অবস্থান করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম-১০ আসনের ভোটারদের ডোর টু ডোর গিয়ে আমি গণসংযোগ করেছি। আমার সাথে ধর্মপ্রাণ মুসলিম, সনাতন সম্প্রদায়, সাংস্কৃতিক কর্মী, নারীনেত্রী ছাড়াও আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক ৩৫০০ সহকর্মী নির্বাচনী কাজ করেছে। তাদের ভোট, তাদের পরিবারের ভোট, কিছু এজেন্টদের ভোটের হিসেব ধরলে আমার ভোটের ফলাফল যা হওয়ার কথা তা না দেখিয়ে ব্যাপক গড়মিল দেখানো হয়। ১৪ নং লাল খান বাজার ওয়ার্ডের আমি স্থায়ী বাসিন্দা। এই ওয়ার্ডের সজ্জ্বন মানুষ ও অহিংস রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দলমত নির্বিশেষ আমাকে ভোট দেওয়ার কথা। এখানে আমার ভোটের পরিমাণ বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। ফরিদ মাহমুদ বলেন, ২৪ নং উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ডে ৩০ বছর ধরে আমার দুইটি ব্যবসায়িক কার্যালয় আছে। রাজনৈতিক দুর্দিনের সময় আমি সেখানে ১৫ বছর বসবাস করেছি। এই ওয়ার্ডে আমি সন্তোষজনক ভোট পাওয়ার কথা। ৮ নং শুলকবহর ওয়ার্ডের কয়েকটি কেন্দ্র, ১২ নং সরাইপাড়া ওয়ার্ডের দুইটি কেন্দ্র, ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডের একটি অংশ, ১১ নং দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ডে একটি কেন্দ্র, ২৬ নং হালিশহর ওয়ার্ডের দুইটি কেন্দ্রে আমার জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল। এসব কেন্দ্রের রেজাল্ট শিটে গড়ে ভোট সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ ভোটারদের সমর্থন ও রায় পাব; এমন একটা আস্থা আমার ছিল।

ভোটের আগের দিন ও ভোটের দিন একজন প্রার্থী যে কৌশল অবলম্বন করেছেন, এতে করে সাধারণ ভোটাররা ছিল দ্বিধা ও সংশয়ে। সেদিন নিরাপদে ভোট দিতে পেরেছেন কিনা সেটা তারাই বলতে পারবেন। যারা আমাকে রাজনৈতিকভাবে দূরে রাখতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন, তাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হবে না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে আমি এই আসনের সাধারণ মানুষের হয়ে কাজ করে যাব।’ মতবিনিময় সভায় এসময় উপস্থিত ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ মাহমুদের নির্বাচনি এজেন্ট পলাশ খাস্তগীর, সমর্থনকারী জাকির হোসেন রিপন, নগর যুবলীগ সাবেক নেতা নেছার আহমেদ, শেখ নাছির আহমেদ, আশরাফুল গনি, শওকত হোসেন, ফিরোজ আলম সবুজ, আশরাফুল আলম টিটু, দেলোয়ার হোসেন দেলু, রাশেদ চৌধুরী, নাজমুল হাসান রুমি প্রমুখ।

মন্তব্য করুন