
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহযোগিতায় এ বইমেলা হচ্ছে। বইমেলার জন্য এবার ৫০ লাখ টাকা বাজেট। সৃজন ও মননশীল, বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে বইমেলা বড় ভূমিকা রাখবে। তিনি বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিআরবি শিরীষতলায় চসিক আয়োজিত অমর একুশে বইমেলার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, সম্মিলিত উদ্যোগে বইমেলা আয়োজন চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। শুক্রবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পাঁচটায় বইমেলা উদ্বোধন হবে। এবার বইমেলায় ৪৩ হাজার বর্গফুটে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৯২টি প্রকাশনা সংস্থার ১৫৫টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে ডাবল স্টল ৭৮টি, সিঙ্গেল ৭৭টি। নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ, বঙ্গবন্ধু কর্নার, লেখক আড্ডাসহ নারী কর্নার ও সেলফি কর্নার থাকবে। জাতীয় জীবনে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র বলেন, চারদিকে সমৃদ্ধ চট্টগ্রাম, পথ দেখায় কিন্তু এবার বিজয়মেলা করতে পারিনি। বইমেলা করার মাঠ নেই। বাধ্য হয়ে সিআরবিতে এসেছি। সিআরবি বইমেলার স্থায়ী ভেন্যু হলে ভালো হবে। স্থায়ী স্টেডিয়াম বা মাঠ চসিকের আছে বাকলিয়ায়, কিন্তু সেখানে মেলা জমবে না।
মেয়র জানান, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং বিপ্লবের তীর্থভূমি বীর চট্টগ্রারে জ্ঞান ও মননের আকাঙ্খা পূরণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক রুযদ, চট্টগ্রাম নাগরিক সমাজ, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্য- সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় ঢাকা ও চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশকদের অংশগ্রহণে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শুরু’র থেকে চট্টগ্রানের ফুসফুসখ্যাত অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত এলাকা সিআরবিতে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা-২০২৪ শুরু হতে যাচ্ছে। যা ২ মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত চলবে। চট্টগ্রাম ও ঢাকা শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা গুলোর অংশগ্রহণ এবং কবি- সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, সংস্কৃতি কর্মীসহ নানান শ্রেণি পেশার মানুষের অংশ গ্রহণের মধ্যদিয়ে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেল ৫টায় বইমেলা শুভ উদ্বোধন করা হবে।
এবারের বইমেলা অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি লেখক-পাঠক সমাগমে ভরপুর হয়ে উঠবে। সিআরবি চট্টগ্রামের অপরূপ নৈসর্গিক একটি জায়গা। শত বছরের বৃক্ষরাজির ছায়ায় ঘেরা, ফুলের সুশোভিভ এবং পাখির কুজনে ভরপুর নির্জন কোলাহলমুক্ত এমন একটি এলাকায় লেখক- পাঠকের মেলবন্ধনে বইমেলা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, প্রাণ ফিরে পাবে। বইমেলাসহ যে কোনো শিল্প-সংস্কৃতিধর্মী অনুষ্ঠানের জন্য এমন স্থান এমট উপযোগী। যেখানে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শত শত নানা বয়েসী মানুষ শান্ত শীতল পরিবেশে সময় কাটাতে আসেন। ইতোমধ্যে মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মেয়র আরো জানান,প্রতিবারের মতো এবারও মেলা প্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণার’, লেখক আড্ডাসহ নারী কর্ণার এবং ওয়াইফাই জোন। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেল প্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত থাকবে। মেলা কার্যালয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকবে। মাসব্যাপী বইমেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে- ররীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরনী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবি সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় দেশের প্রথিতযশা লেখক-কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবেন।
এছাড়াও মেলা মঞ্চে প্রতিদিন শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন, রবীন্দ্র-নজরুল-(লোক সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোক নৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। মেলাকে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে চট্টগ্রামের লেখক, সাহিত্যিক, সংস্কৃতি কর্মী ও বইপ্রেঃ দের নিয়ে বিভিন্ন উপ-পরিষদ গঠন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় প্রতিদিনের অনুষ্ঠানমালা সাজানো য়েছে। মেলা মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের জাগরণী ও দেশাত্ববোধক গান পরিবেশিত হবে।
মেয়র জানান, এই মেলায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লেখক-পাঠক ও সৃজনশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি ও মননের উৎকর্ষের পাশাপাশি ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে। এছাড়াও জাতীয় জীবনে যেসব ব্যক্তি কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের একুশে সম্মাননা স্মারক পদক ও সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করা হবে। যে মেলাকে ঘিরে আমাদের এতো আয়োজন সেই মেলায় যাতে লেখক-পাঠক দর্শনার্থীরা প্রাণ খুলে ঘুরে বেড়াতে পারে এবং বই ক্রয় করতে পারে সেজন্য মেলায় প্রচুর খোলা জায়গা রাখা হয়েছে।
মেয়র জানান, এবার মেলায় ৪৩ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল সিআরণির শিরীষ তলার মাঠ জুড়ে মোট ১৫৫টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ডাবল স্টল ৭৮টি এবং সিঙ্গের স্টল ৭৭টি। চট্টগ্রামের পাশাপাশি ঢাকার সৃজনশীল অভিজাত প্রকাশনী সংস্থা গুলো মেলায় অংশ নিচ্ছে এবং তাদেরকে স্টলও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ঢাকা এবং চট্টগ্রামসহ মোট ৯২টি প্রকাশনা সংস্থা মেলায় অংশ নিচ্ছেন। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি পেশাদার একটি নিরাপত্তা সংস্থা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। এছাড়াও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে মেলা সার্বক্ষণিক পুলিশের সহযোগিতার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যস্থা থাকবে। সমগ্র মেলা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। মেলার নিরাপত্তার জন্য সিরীষ তলার পাশের রাস্তাটি বও রাখা হবে।
প্রতিবারের মতো এবারও মেলায় থাকছে- নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ ও সেলফি কর্ণার। এছাড়াও নতুন প্রজন্মের সামনে মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য ৫২’র ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতার আন্দোলনের উপর প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মেলার সার্বিক দিক মনিটরিংয়ের জন্য মেলা পরিষদের কক্ষ, মেলার মিডিয়া উপ কমিটিসহ সাংবাদিকদের জন্য সুপরিসর মিডিয়া সেন্টার, হেলথ কর্নার, ফায়ার সার্ভিস অভ্যর্থনা কক্ষ, বিটিভির বুধ, এটিএম ব্যাংকের বুথসহ সার্বক্ষণিক সেবা ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস বুথ থাকবে।
মেয়র আরো জানান, বাংলাদেশে ঢাকার পর চট্টগ্রাম দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী। শুধু নয়, বাণিজ্যিক রাজধানীও। চট্টগ্রামের লেখক- প্রকাশক-পাঠক এবং নাগরিক সমাজের দীর্ঘকালের আগক্ষা ছিল ভাষার মাসে বইমেলা আয়োজনের। সম্মিলিত উদ্যোগে একটি বইমেলার আযোজন ছিল চা গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙক্ষা। সে আকাঙক্ষা থেকেই এবারও চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং লেখকদের সাথে ২০২৪ নালের শুরু থেকেই মতবিনিময় সভা করে সম্মিলিত উদ্যোগেএকটি বইমেলা অনুষ্ঠানের প্রয়াস নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ আয়োজনে সবাইকে সম্পৃক্ত করে এগিয়ে যাচ্ছে, এ যাত্রায় সকলের সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি।
উল্লেখ্য যে, আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই আজকা মোবাইলে ও মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। সময় অর্থ, স্বাস্থ্য সবই শেষ করছে এর পেছনে। এতে তারা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বই অন্যতম বন্ধু যা তাদের মোবাইল ও মাদকের আসক্তি থেকে বের করে সৃজনশীল মেধাবী প্রজনন্ম হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে মা-বাবা, শিক্ষক ও সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাই বইমেলা আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করা আমাদের ওপর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বর্তেছে। এ মেলার প্রচার প্রসারের সার্থকতায় সাংবাদিক সমাজের সহযোগিতা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আপনাদের মাধ্যমে পাঠক সমাজ, বইপ্রেমী, সুধীজন, সুহৃদ, তরুণ সমাজ, যুব সমাজসহ সব বয়সী সর্ব রের শ্রেণি পেশার মানুষকে সপরিবারে বন্ধু-বান্ধবসহ মেলায় আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। এবার নানা কারণে আমরা সিআরবিতে মাসব্যাপী বইমেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সিআরবিতে বইমেলা আয়োজনের জন্য স্থান বরাদ্দ দেয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জিএমসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ বইমেলা আমার, আপনার সমগ্র চট্টগ্রামবাসীর। আমি বিশ্বাস করি সাংবাদিকদের ইতিবাচক প্রচারণা বইমেলার কলেবর যেমন বাড়বে, তেমনি লেখক, পাঠক-প্রকাশকদেরও উৎসাহিত করবে। সৃজনশীল, মননশীল, বিজ্ঞানমনস্ক প্রজন্ম গড়তে বড় ভূমিকা রাখবে। মেলায় প্রতিদিন আপনাদের সবান্ধব উপস্থিতি ও পদচারণায় মুখর হবে এই প্রত্যাশা করি।
উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, বইমেলার আহ্বায়ক ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, সদস্যসচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম নীপু, সংস্কৃতি সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ, কবি কামরুল হাসান বাদল, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি সাহাবউদ্দিন হাসান বাবু, প্রজ্ঞালোকের প্রকাশক রেহানা চৌধুরী, আশেক রসুল চৌধুরী টিপু। আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা চলবে।