নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রামের ষ্টেশন রোডস্থ বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার দখল করে রাখার অভিযোগে ৪ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে (মামলা নং সি আর ৩৫৫/২০২৪)। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতের এ মামলা করেন। শাহ আলম ও শাহনেওয়াজ গং চট্টগ্রামের ১৬ নং ষ্টেশন রোড চট্টগ্রামস্থ বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দখল করে ৩৭ হাজার বর্গফুটের গাড়ির পার্কিং এ ৮৪টি দোকান সহ সিডিএর নকশা বহির্ভূত বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য করছে। মার্কেটের প্রায় ৪ শত গ্রাহক শাহ আলমের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে নিরুপায় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। চট্টগ্রামের সিএমএম আদালতে দায়েরকৃত মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, শাহ আলমের ভয়ে গ্রাহকেরা মার্কেটে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন, বোয়ালখালী উপজেলার পূর্ব গোমদন্ডী বণিক পাড়ার স্বর্গীয় মহেষ সরকারের পুত্র রনজিত সরকার।
মামলার আবেদনে রনজিত সরকার অভিযোগ করেন, “দি রেলওয়ে মেন্স ষ্টোর লিমিটেড” পক্ষে প্রধান নির্বাহী ও “মেসার্স রিয়্যাল এস্টেট (প্রাঃ) সিন্ডিকেট” তথা মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজের মধ্যে বিগত ২৫/০৯/২০০২ ইং তারিখে বিগত ১৮/০৮/২০০২ ইং ও ১৮/১২/২০০৪ ইং তারিখে চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। “মেসার্স রিয়্যাল এস্টেট (প্রাঃ) সিন্ডিকেট” মার্কেটের নির্মাণ কাজের ব্যয়বহুল হওয়ায় উক্ত নির্মাণ কাজ তরান্বিত করার জন্য মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ “মেসার্স এটকো হোল্ডিং লিমিটেডকে সহ-অংশীদার নিয়োগ করে বিগত ১৯/০২/২০০৬ ইং তারিখে “দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লিমিটেড” মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির শর্ত মতে “মেসার্স রিয়্যাল এস্টেট (প্রাঃ) সিন্ডিকেট” ও “মেসার্স এটকো হোল্ডিং লিঃ” তাদের বিভিন্ন আভ্যন্তরিন ও আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় “মেসার্স বসুধা বিল্ডার্স লিমিটেড”কে ডেভেলাপার নিয়োগের প্রস্তাব করলে উভয়ের মধ্যে সম্যক আলোচনা ক্রমে বিগত ২০/১১/২০০৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রীকৃত ১৩৩০৮ নং চুক্তিপত্র ও বিগত ২০/১১/২০০৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রীকৃত ১৩৩০৯ নং সাধারণ আমমোক্তার নামা প্রদান পূর্বক ক্ষমতা অর্পন করে। “মেসার্স রিয়্যাল এস্টেট (প্রাঃ) সিন্ডিকেট” ও “মেসার্স বসুধা বিল্ডার্স লিমিটেড” এবং “মেসার্স এটকো হোল্ডিং লিঃ” এর মধ্যে বিগত ০৮/০৯/২০১০ ইং তারিখে রেজিষ্ট্রীকৃত ১৭২৩২ নং সম্পূরক চুক্তি হয়। মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজসহ মেসার্স রিয়্যাল এস্টেট (প্রাঃ) লিমিটেড পক্ষে চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডাইরেক্টর বিগত ০৬/০৩/২০১০ ইং তারিখে যৌথ ভাবে অনাপত্তি এবং বিগত ০৭/০৩/২০১০ ইং তারিখে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর হিসাবে একক ভাবে দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লিমিটেড” কর্তৃপক্ষের বরাবরে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মানের জন্য “মেসার্স বসুধা বিল্ডার্স লিমিটেড” এর সাথে মূল চুক্তি সম্পাদনের জন্য অনাপত্তি প্রদান করে।
অভিযোগে আরো জানা যায়, বসুধা বিল্ডার্স ডেভেলাপার বিগত ২০/১১/২০০৭ ইং তারিখে রেজিস্ট্রার্ড চুক্তিপত্রের আলোকে চউকের অনুমোদিত নকশা মোতাবেক “বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টার” মার্কেটের নির্মাণ কাজ আরম্ভ করে। সেই সংগে “বসুধা বিল্ডার্স লিমিটেড” রনজিত সরকারের নিকট বিগত ২৪/০৭/২০০৮ ইং তারিখে ফাইল নং-১৭৬, দোকান নং-৪৪৮, স্পেস-১৫০ বর্গফুট, ফ্লোর লেভেল-০৪ এর মূল্য বাবদ ১২,৭৫,০০০/-(বার লক্ষ পঁচাত্তর হাজার) টাকা বিগত ০২/০৬/২০১৯ ইং তারিখ ফাইল নং-৫২২, দোকান নং-৫২২ (মোট ৯টি দোকান), স্পেস ১৫০০ বর্গফুট, ফ্লোর লেভেল ০৫ এর মূল্য বাবদ ৬৭,৫০,০০০/- (সাতষট্টি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকায় বিগত ১৯/০৭/২০১৯ ইং তারিখে ফাইল নং-৪৬১, দোকান নং-৪৬১, স্পেস ৫০০০ বর্গফুট, ফ্লোর লেভেল-০৬ এর মূল্য বাবদ ১,২০,০০,০০০/- (এক কোটি বিশ লক্ষ) টাকা এবং রনজিত সরকার তার স্ত্রীর নামে বিগত ১০/০৫/২০২২ ইং তারিখে ফাইল নং-৫৬২, দোকান নং-৫৬২, স্পেস ১৭২+ ১৫৩+ ১২৮+ ৬৫ = ৫১৮ বর্গফুটের (চারটি দোকান), ফ্লোর লেভেল ০৩ এর মূল্য বাবদ ২৬,৯৩,৬০০/- (ছাব্বিশ লক্ষ তিরানব্বই হাজার ছয়শত) টাকা এবং বিগত ২৩/০৭/২০২২ ইং তারিখে ফাইল নং-৫৬৪, দোকান নং-৫৬৪, স্পেস-৩৪২ বর্গফুটের (একটি দোকান), ফ্লোর লেভেল- ০৪ এর মূল্য বাবদ ১৮,৮১,০০০/- (আঠার লক্ষ একাশি হাজার) টাকা বসুধা বিল্ডার্স লিঃ হতে চুক্তিপত্র মূলে খরিদ করে দোকানে নিজ নামে সাইন বোর্ড লাগান। রনজিত সরকার ও তার স্ত্রী এবং মোঃ জাফরুল আলম, অহিদুল আলম, মাহাবুবুর রহমান, মোঃ ইব্রাহীম, শেলী দে, মিনহাজ আহাম্মদ, তানভীর ফাহাদ, আফরিন সুলতানা’র নামে “দি রেলওয়ে মেন্স স্টোরস লিমিটেড” পক্ষে-প্রধান নির্বাহী, নিকট হতে “দীর্ঘ মেয়াদী ভাড়ানামা” দলিল প্রাপ্ত হই।
ঘটনার তারিখ ও সময়ে রনজিত সরকার স্বাক্ষী সজিব সরকার, আকতার হোসেন, নিপু দে, উত্তম ধর, তানভীর ফাহাদসহ তার খরিদা দোকান গৃহাদীর সংস্কার করার জন্য ঘটনার সময় মার্কেটে গেলে মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও শাহ আলমসহ তাদের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রনজিত সরকারের খরিদা দোকান জোর পূর্বক লোহার এঙ্গেল দিয়ে দোকানের মুখ বন্ধ করে রাখে। মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও শাহ আলম উক্ত মার্কেটের সিঁড়ির মুখে কতেক বখাটে সন্ত্রাসীদেরকে সব সময় বসিয়ে রাখে এবং মার্কেটের সিঁড়িতে লোহার গেইটে তালা বন্ধ করে মার্কেটে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজের নির্দেশে শাহ আলম, রিপন ও স্বপন দাশ হুমকি দেয় এবং মার্কেটে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে রনজিত সরকারসহ তার পরিবারকে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।
খরিদা দোকানে আসতে হলে প্রতি দোকানে পাঁচ লক্ষ টাকা করে মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও শাহ আলমকে প্রদান করতে হবে এবং মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও শাহ আলমের নিকট হতে লিখিত ভাবে দোকান বুঝে নিতে হবে। অন্যথায় দোকান গৃহাদিতে প্রবেশ করতে পারবে না। ১ ও ২ নং বিবাদী গণ হুমকি স্বরুপ বলে যে, দি রেলওয়ে মেন্স কিংবা বসুধা বিল্ডার্স হতে কোন রুপ চুক্তিপত্র সম্পাদন করলে উক্ত চুক্তিপত্র মূলে দোকান দখল করতে দেবে না। কেবল মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ ও শাহ আলমের সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করলে মেন্স সিটি সেন্টারের দোকান
মামলার বাদী রনজিত সরকার বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। তাই আদালতের কাছে যেতে বাধ্য হয়েছি। তাই আদালতে মামলা দায়ের করেছি।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় চট্টগ্রামের ১৬ নং ষ্টেশন রোডস্থ বসুধা রেলওয়ে মেন্স সিটি সেন্টারের দোকান দখল ও সিড়িতে লোহার গেইট লাগিয়ে মার্কেটে উঠতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাহ আলম ও শাহনেওয়াজ গং এর বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাহ আলম জানান, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি মার্কেটটির ডেভেলাপার হিসেবে কাজ করছি।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে মেন্স স্টোরস এর প্রধান নির্বাহী সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম সাহেবের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তাদের অন্যায় কাজে বাধা দিলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করছে।
বসুধা বিল্ডার্স এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমার কর্মচারী প্রনয় বিশ্বাস ও রায়হানকে হাত করে আমার অফিস সহ অনেক স্পেস শাহ আলম গং দখল করে নেয়। বর্তমানে তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীর কাছে আমি নিজেও অসহায়।