নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাতকানিয়ার এক নারীকে বিয়ে করে দুবাই পাচার ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করার অভিযোগে স্বামীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা ঠুকে দেয়া হয়।
আজ ১৪ মার্চ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম মানবপাচার অপরাধ দমন ট্র্যাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস আলেয়ার আদালত ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণপূর্বক মামলার আবেদনটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গণ্যের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন, ওই নারীর স্বামী বাঁশখালী থানার দক্ষিণ বরুমছড়া গ্রামের মো. আবুল ফজলের ছেলে এইচএম কাউছার উদ্দিন (৩৫), একই এলাকার মোহাম্মদ আলভির স্ত্রী শামিমা আক্তার (৩০), ওমর আলীর ছেলে মোহাম্মদ হোসেন (৩২) ও আবুল ফজলের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৪৭)। এছাড়াও আরও ৪ থেকে ৫ জন জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাঁশখালী থানার দক্ষিণ বরুমছড়া গ্রামের মো. আবুল ফজলের ছেলে এইচএম কাউছার উদ্দিন সঙ্গে সাতকানিয়া থানার রুপনগর গ্রামের ২১ বছর বয়সী নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। শামিমা আক্তার, মোহাম্মদ হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও ৪ থেকে ৫ জন মিলে অভিভাবকদের মধ্যপ্রাচ্যের দুবাই সিটিতে মেয়ের বিয়ে দিতে রাজি করায়। ২০২২ সালের ১০ জুলাই ৮ লাখ টাকায় বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি হয়।
অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে পাসপোর্ট করে ভিকটিমকে স্বামী দুবাই প্রবাসী কাউছার উদ্দিনের কাছে ২০২৩ সালের ২৩ অক্টোবর নিয়ে যায়। দুবাই সিটির ইতালি ক্লাস্টার-১ নামের ভবনের একটি নির্জন ফ্ল্যাটে ভিকটিমকে একাকী রেখে বন্ধু পরিচয়ে অজ্ঞাত দেশি-বিদেশি পুরুষের মনোরঞ্জনে ভিকটিমকে বাধ্য করা হয়। এতে ভিকটিম সম্মত না হওয়ায় তাঁর মোবাইল কেড়ে নেয় এবং মারধর করে গৃহবন্দী করে রাখে।
এক পর্যায়ে ভিকটিম লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইলে প্রতিবেশীরা তাকে তালা ভেঙে উদ্ধার করে। বিষয়টি ফ্ল্যাটের আশেপাশের লোকজন জেনে গেলে তাদের চাপের মুখে স্বামী এইচ এম কাউসার উদ্দিন ভিকটিমকে ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দেশে পাঠিয়ে দেন। ভিকটিম চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছালে পূর্ব থেকে অবস্থান নেয়া মামলার অন্য আসামিরা ভিকটিমের হাতে থাকা পাসপোর্ট কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে যায়। এছাড়াও ভিকটিমকে এসব প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
ভিকটিমের পক্ষে মামলাটি করেন মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাইন্ডেশন (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্সান, সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার সরকার, অ্যাডভোকেট এএইচএম জসীম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ হারুন, অ্যাডভোকেট মো. সাইফুদ্দিন খালেদ, অ্যাডভোকেট মো. হাসান আলী, অ্যাডভোকেট মো. বদরুল হাসান, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন আরমান ও অ্যাডভোকেট কে এম শান্তনু চৌধুরী।
উল্লেখ্য, ভিকটিমের অভিভাবকগণ বিষয়টি বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন-সাতকানিয়া শাখার সভাপতিকে অবহিত করলে তথ্যানুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। থানায় অভিযোগ করতে গেলে থানার পরামর্শে অদ্য মানবপাচার আদালতে মামলাটি দায়ের হয়।