নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রামে পিএস শিপিং কর্তৃক অন্যের লিজপ্রাপ্ত জায়গা অবৈধভাবে দখলে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার প্রতিবাদে আজ ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১২ টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ভূক্তভোগী জানান, পিএস শিপিংকে ৩ বছরের জন্য লিজ দেয় সরকার। তাদের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এরপর প্রতিষ্ঠানটির সাথে পুনরায় চুক্তি নবায়ন না হওয়ায় বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) নতুনভাবে টেন্ডার আহ্বান করে। এতে তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ ১১৬ টাকা সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে জায়গার লিজ পায়। প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ২০২৩ সালের ১ নভেম্বর সাইফুল ইসলাম ইচ্ছাপত্র অনুসারে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৫১০৮ টাকা পে-অর্ডারে বাংলাদেশ জুট করপোরেশনকে পরিশোধ করে।
চট্টগ্রাম নগরের বাংলা বাজার স্ট্যান্ডরোডস্থ এপিসি রেলী ঘাটসহ ৯০ হাজার স্কোয়ার ফিট জায়গা সরকার হতে দেড় কোটি টাকা চুক্তিমূলে ভাড়া নেয়ার পরও একটি ভূমিদস্যু চক্র কর্তৃক তা জবর দখল করে রাখা ও হত্যার হুমকির কারণে দীর্ঘ দিন ধরে ঘাটে ভিড়তে পারছে না লিজপ্রাপ্তরা। ইজারাদার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে জোরালো ভূমিকা নিচ্ছে না। এতে অবৈধ দখলদারচক্রটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিষয়গুলো জানাতে আজকের সংবাদ সম্মেলন।
ভূক্তভোগী আরো জানান, বাংলাদেশ জুট করপোরেশন (বিজেসি) থেকে ইজারা পাওয়ার ৫ মাস অতিবাহিত হলেও তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ ঘাটে ভিডতে পারছে না। পিএস শিপিং এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার আশরাফুল আলম মাসুদসহ তার সাঙ্গপাঙ্গরা অবৈধভাবে পেশীশক্তি খাটিয়ে ঘাটটি দখল করে রেখেছেন। তারা আদালতকে হাতিয়ার বানিয়ে এবং সন্ত্রাসী দিয়ে তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ’র ইজারা পাওয়া জায়গাটি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভূক্তভোগী জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) তসলিমা কানিজ নাহিদা স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিজেসি মালিকানাধীন ২৭৫০ একর জায়গা অবৈধ দখলদার মেসার্স পিএস শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা অংশীদার আশরাফুল আলম মাসুদকে ৭ দিনের মধ্যে সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য 'উচ্ছেদ নোটিশ' দেয়। কিন্তু আশরাফুল আলম মাসুদগং সরকারি সম্পত্তিটি বিজেমি'র কাছে হস্তান্তর না করে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে সিডিল রিডিশন ৬১৫৮/২৩ দায়ের করেন। ওই মামলায় বিচারপতি মোঃ জাকির হোসেনের একক বেঞ্চ ৪ মাসের স্থিতি অবস্থা আদেশ জারি করেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে বিজেসি পিটিশনার হয়ে সিভিল পিটিশন ফর লীভ টু আপীল নং ৩৭৯৫/২৩ দায়ের করেন। যা গত ১৭ ডিসেম্বর চেম্বার বিচারপতি এম. এনায়েতুর রহিমের আদালতে শুনানীকালে হাইকোর্টের ৪ মাসের স্ট্রে আদেশকে স্থগিত করা হয়। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত দখল হয়ে যাওয়া বিজেসি'র সম্পত্তিগুলো উদ্ধারে অভিযানে যান। এসময় মেসার্স পিএস শিপিং এর অনুরোধে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের মালামাল সরিয়ে নিতে সময় বেধে দেন। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ১২ ফেব্রুযারি আশরাফ উল আলম মাসুদ উচ্ছেদ অভিযান বন্ধে হাইকোর্টে রিট করে পিটিশন দায়ের করেন। ফলে দীর্ঘ সময় তারা জায়গাটি দখলে রাখে। সর্বশেষ ১১ মার্চ তাদের আবেদন সিভিল রিভিশন নং ৪১২-এ হাইকোর্ট বিভাগ ভর্কিত আদেশটি ৮ সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। ফলে বাংলাদেশ জুট কর্পোরেশন কর্তৃক মেসার্স পিএস শিপিং-কে বিজিপি'র সম্পত্তি থেকে উচ্ছেদ করতে আর কোন বাধা নেই। তবে প্রশাসন ১১ মার্চের পর থেকে কোন আইনী বাধা না থাকার পরও অদৃশ্য কারণে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেনি।
ভূক্তভোগী আরো জানান, বাংলাদেশ জুট করপোরেশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) তসলিমা কানিজ নাহিদা তাঁর অফিস আদেশে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের জায়গাটি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে বর্তমান ইজারাদারকে জায়গাটি বুঝিয়ে দিতে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনাকারী প্রশাসনের নানা অসহযোগিতার কারণে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে আমরা কোটি টাকা খরচ করে লিজ পাওয়া জায়গা ব্যবহার করতে পারছি না।
ভূক্তভোগী জানান, সমস্ত নিয়ম মেনে তৈয়ব শাহ এন্টারপ্রাইজ এপিসি রেলী ঘাট ইজারা নিই। তবে এ ঘাটের পূর্বের ইজারাদার পিএস শিপিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল আলম মাসুদ আমি ও আমার ভাই মাসুদুল ইসলাম, শাহিদুল ইসলাম ও মো. জাহিদুল ইসলামকে ইজারাকৃত জায়গায় যেতে বাঁধা দিয়ে আসছেন। আমাদেরকে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের দিয়ে মহড়া দিচ্ছে। আমরা লিজ পাওয়া জায়গায় গেলে জীবননাশের হুমকি দিচ্ছেন। ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশ্যে তারা আমাদের হুমকি দেয়। পরে ৩১ ডিসেম্বর জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ডবলমুরিং খানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নং-১৯৩৪) দায়ের করি। পুলিশ প্রশাসন সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু চক্রটিকে সতর্ক করে দিয়েছেন। তারপরও তাদের হুমকি ধমকি বন্ধ নেই। এখন আমি ও আমার ভাইয়েরা জীবন শঙ্কায় রয়েছি।
প্রশাসনের উচিত হাইকোর্টের আদেশ মেনে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে আমাদের কাছে জায়গাটি হস্তান্তর করা। আমি এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাসুম, রফিক উল্লাহ, এস এম সায়েম, আশরাফুল আলম মাসুম।