নিউজ ডেস্ক

বদলি প্রাণ কেড়ে নিলো, অসুস্থ দুদক কর্মকর্তার

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: দুর্নীতি দমন কমিশনের বিভিন্ন কার্যালয়ে বছরের বছর কর্মরত থাকার পরও শীর্ষকর্তার আশির্বাদে বদলি ঠেকানোর অসংখ্য উদাহরণ থাকলেও ব্যতিক্রম চাঁদপুর কার্যালয়ে কোর্ট সহকারী (এএসআই) গোলাম মোস্তফার ক্ষেত্রে। অসুস্থ অবস্থায় অন্যায্য বদলি আদেশ শেষ পর্যন্ত তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্র একমাস আগে মিরপুরের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে হার্টে রিং পড়ানো হয় দূর্নীতি দমন কমিশনে কর্মরত এএসআই গোলাম মোস্তাফার। এরই মধ্যেই আসে পাবনায় বদলি আদেশ। বদলি আদেশ প্রত্যাহার করার আবেদন নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সেখানেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্ট রাখা হয়। শুক্রবার ২৯ মার্চ ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় গোলাম মোস্তফার।

গোলাম মোস্তফার স্বজনরা জানান, দুর্নীতি দমন কমিশন চাঁদপুর কার্যালয়ের কোর্ট সহকারী (এএসআই) হিসেবে কর্মরত অবস্থায় তার হার্টে জটিলতা ধরা পড়ে। গত ২২ শে ফেব্রুয়ারী হার্টে রিঙ পড়ানো হয়েছিলো দুদকের এএসআই গোলাম মোস্তফাকে। রিঙ পড়ানোর মাস না যেতেই গত ২১ শে মার্চ তাকে বদলি করা হয় পাবনায়। অসুস্থ অবস্থায় নতুন কর্মস্থলে বদলির আদেশ প্রত্যাহারে দুইজনের কাঁধে ভর করে দারস্থ হয়েছিলেন দুদকের পরিচালক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামানের। কিন্তু মেডিকেল গ্রাউন্ডে বদলি আদেশ প্রত্যাহার না করে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি। মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক হয় তার।

স্বজনরা জানান, দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অসুস্থ গোলাম মোস্তফাকে বৃহস্পতিবার বিকেলে তড়িঘড়ি করে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করানো হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। শুক্রবার সকালে তার মৃত্যু হয়। স্বজনদের দাবি, হার্ট রিঙ পড়ানোর সার্টিফিকেট আমলে না নিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবার চাপে ‘হার্ট অ্যাটাক’ হয় তার।

 

ডেট সার্টিফিকেট অনুযায়ী বুধবার (২৮ মার্চ) বিকেল চারটায় তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে ভর্তি করা হয়। আর পরদিন সকাল নয়টা পাঁচ মিনিটে তার মৃত্যু হয়। গোলাম মোস্তফার বাড়ি লক্ষিপুর জেলার শমসরাবাদে। গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর খবরে শোকাভিভূত হয়ে পড়ে পুরো গ্রামবাসী ।

দূর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের সুত্রমতে, গোলাম মোস্তফা সকাল এগারোটার দিকে কার্যালয়ে আসেন বদলি আদেশ প্রত্যাহার করার আবেদন নিয়ে। বদলি আদেশ প্রত্যাহার না করার সংবাদেদুপুর দুইটায় সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুদক কার্যালয় থেকে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে নিয়ে যান সাথে থাকা স্বজনরা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দুদক কর্মকর্তা জানান, ‘ উঁচুস্তরের কর্মকর্তাদের বদলির চাপ কম। কনস্টেবল, এএসআই, এসআইদের উপর বদলির খগড় চাপানো হয় নিয়মিত। মারাত্মক অসুস্থতার মাঝেও গোলাম মোস্তফাকে বদলির বিষয়টি ছিলো অন্যায়। দুজনের কাঁধে ভর করে অফিসে এসে বদলি আদেশ প্রত্যাহার করাতে না পারা-অনেক কিছুই বলে দেয়। ‘

অভিযোগের তীর দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক মনিরুজ্জামান বকাউলের দিকে। তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের অনেক কর্মকর্তার উপরই বদলি খগড় চাপিয়েছেন। দূর্নীতিবাজদের ভিত কাঁপানো কর্মকর্তা দুদকের সাবেক উপ সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনের অপসারণের আদেশেও স্বাক্ষর করেছিলেন এই মনিরুজ্জামান বকাউল।

সুত্রমতে, সামান্য কারণে লালন নামের একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটরকে নারায়ণগঞ্জ থেকে উত্তরবঙ্গে বদলি করা হয়েছে । উচ্চমান সহকারী এমদাদুল হককেও হবিগঞ্জ বদলি করেছিলেন পরিচালক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান । তিনি ঢাকায় আসতে অনেক চেষ্টা করেছিলেন। গত কুরবানির ঈদের আশা বুকে নিয়েই দুর্ঘটনায় মৃত্যু বরণ করেন।

এই বিষয়ে জানতে দুদকের পরিচালক (প্রশাসন) মনিরুজ্জামান বকাউলের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেন নি।

এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন চাঁদপুর কার্যালয়ের কোর্ট সহকারী গোলাম মোস্তফার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়। তার চার মেয়ে সন্তানের দুজনেরই বাবা হারানোর কস্ট বুঝার বয়স হয় নি। মোস্তফার স্ত্রীও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা বুকে চেপে স্বামী হারানোর শোক পালন করছেন।

 

মন্তব্য করুন