নিউজগার্ডেন ডেস্ক: ১৪তম আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৪ আয়োজন উপলক্ষ্যে আজ ১৯ এপ্রিল (শুক্রবার) সকাল ১১ টা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করেছে চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন উইম্যান চেম্বার সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ চাইছেন। সেই লক্ষ্যে কাজ করছি আমরা। বিজনেস হাব চট্টগ্রাম। এখানে একটি মেলার স্থায়ী ভেন্যু দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এক্সপো চেয়ারপার্সন ও চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সিনিয়র সহ সভাপতি আবিদা মোস্তফা জানান, আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে চট্টগ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের যে পথচলা শুরু হয়েছিল সে অগ্রযাত্রায় আপনাদের সর্বাঙ্গীন সাহায্য-সহযোগিতা আমাদের পথচলাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় এতদঞ্চলের নারী সমাজ শিক্ষা-দীক্ষা, সমাজের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু আজকে আমরা আমাদের সৃজনশীলতা ও কর্মোদ্দীপনার মাধ্যমে সেই অচলায়তন ভেঙ্গে ক্রমাগতভাবে নারী সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী জাতির মেধা ও প্রতিভার বিকাশ এবং উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে হাটিহাটি পা-পা করে একটি অবস্থানে এসে পৌঁছেছি।
নারীদের ক্ষমতায়নে এবং অধিকার রক্ষায় আমরা অনেকে বিভিন্নভাবে জড়িত। বিক্ষিপ্তভাবে আমাদের কাজগুলোকে একতাবদ্ধ হয়ে আমরা সুসংগঠিত হয়েছিলাম ব্যবসা ক্ষেত্রে নারীদের অংশ গ্রহণ বৃদ্ধিতে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রসারে নারীদের অংশগ্রহণকে আরো বেগবান করতে। সার্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ অত্যন্ত কম।
এই অংশগ্রহনের মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে- নারী শিক্ষার প্রসার না হওয়া, সামাজিক ব্যবস্থা, ধর্মীয় অনুশাসন, নারী-পুরুষ বৈষম্য, সম-অধিকার নিশ্চিত না হওয়া, নারীর প্রতি পারস্পরিক সম্মানের অভাব। নারীদের দ্বারা ব্যবসা সম্ভব এবং সুযোগ পেলে নারীরা যে এগিয়ে যেতে পারে তার বাস্তব উদাহরণ আজকের চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।
লিখিত বক্তব্যে এক্সপো চেয়ারপার্সন আবিদা মোস্তফা আরো জানান, ইতিমধ্যে আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে সব চাইতে বড় ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছি। দফায় দফায় করোনা মহামারী পৃথিবীব্যাপী লক্ষ লক্ষ লোকের জীবন হানির পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক ভিত-কে নড়বড়ে করে ফেলেছে। করোনা মহামারীর কারণে বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশসমূহ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনা মহামারীর এই ক্রান্তিকালে দেশের এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিপুল পরিমান লোকসান দিয়ে দিগ-বিদিগ শূন্য্য হয়ে পড়েছে। করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করে এসএমই খাতের উদ্যোক্তারা নিজেদেরকে কিছুটা সামলে নিয়ে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এসএমই খাতের উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও ঐক্যাস্তিকত প্রচেষ্টার ফলে এই খাতের উদ্যোক্তারা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে। ঝ এসএমই খাতের উন্নয়ন ও সহযোগিতার লক্ষ্যে সরকারের নানার কর্মকান্ডের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে এই খাতের উন্নয়নে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশের মত জনসংখ্যা অধ্যূষিত দেশে বিশাল জনগোষ্ঠীকে জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে এসএমই খাতের উন্নয়নের বিকল্প নাই।
দুই দফা করোনা মহামারী এবং জাতীয় নির্বাচনের জন্য গত চার বছর আমরা আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ আয়োজন করতে পারিনি। তাই এবছর আমরা আরো বর্ধিত কলেবরে এই মেলা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহন করেছি। আমাদের দীর্ঘ দিনের কর্ম প্রচেষ্টা এবং নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ধারাবাহিক কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে আমরা চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর উদ্যোগে ঝগঊ উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্যসহ ঝগঊ পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ, প্রচার, প্রসার, আয় বৃদ্ধি, ভোক্তা-উদ্যোক্তাদের মাঝে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেডিয়াম পলোগ্রাউন্ড চট্টগ্রামে মাসব্যাপী ১৪তম আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ আয়োজন এর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ড. হাছান মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কাল ২০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ শনিবার বিকেল ৪ টায় মেলার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু এমপি এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মাননীয় মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় সাংসদ দিলওয়ারা ইউসুফ, শামীমা হারুন লুবনা ও দি ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি এর প্রেসিডেন্ট মো. মাহবুবুল আলম।
অত্র অঞ্চলের মহিলা উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে আমরা ২০০২ সাল থেকে পর পর ৫ (পাঁচ) বছর স্থানীয় বাওয়া স্কুল মাঠে মাসব্যাপী উইই ঈদ বাজার আয়োজন করেছিলাম এবং পরবর্তী ১৩ বছর যাবৎ বাংলাদেশ রেলওয়ে স্টেডিয়াম পলোগ্রাউন্ড চট্টগ্রামে ধারাবাহিকভাবে ১৪তম আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ আয়োজন করে আসছি। বর্তমানে এই মেলা বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে আয়োজিত সর্ববৃহৎ মেলায় রূপলাভ করেছে। এছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ায়ও এই মেলা নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে আয়োজিত একমাত্র মেলা। এবছর এই মেলায় ইরান, ভারত, চায়না, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের উদ্যোক্তাগণ তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন।
চতুর্দশ বারের মত আয়োজিত এই মেলায় ছোট-বড় প্রায় তিনশত পঞ্চাশটি স্টল এবং পনেরটি প্যাভেলিয়ন অংশগ্রহনসহ নারী উদ্যোক্তাদেরকে স্বল্প মূল্যে অংশগ্রহনের সুযোগ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়ে উইম্যান জোন, ফুড কোড ও স্ট্যাটাপদের জন্য আলাদা জোন রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা হস্তশিল্প পণ্যকে বর্ষপর্ণ ২০২৪ ঘোষণা করেছেন। তার এই ঘোষণাকে কার্যকর করতে হস্তশিল্পজাত পণ্য উৎপাদনকারী উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং তাদের জন্য আলাদা জোন রাখা হয়েছে। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ক্যাম্প, সিসি টিভি ক্যামেরা, বেসরকারী নিরাপত্তা রক্ষী, ফায়ার সার্ভিস-সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন ও সার্বক্ষনিকভাবে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, সার্বক্ষনিক পানি সরবরাহ, সিটি কর্পোরেশন এর সহযোগিতায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শিশুদের বিনোদনের জন্য আকর্ষণীয় বিনোদন পার্কসহ নগরীর স্কুল গুলোতে শিশুদের জন্য বিনামূলে টিকেট সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলার সৌন্দর্য্য বিকাশের জন্য আকর্ষনীয় তোরণ, দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা ও সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। মেলার সার্বিক কর্মকান্ড সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য সার্বক্ষনিকভাবে মেলার অভ্যন্তরে মেলা কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
আবিদা মোস্তফা জানান, আমাদের এবারের আয়োজনে এ্যাসোসিয়েট পার্টনার হিসেবে আছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এসএমই ফাউন্ডেশন, এছাড়াও এই মেলা আয়োজনে সহযোগিতায় রয়েছে রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, দি ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বার্স অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও আইএলও প্রগ্রেস প্রজেক্ট। এসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই ব্যাংক সমূহের সাথে সেতু বন্ধন তৈরী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এর সার্বিক সহযোগিতায় আয়োজন করা হচ্ছে “৭ম এসএমই ব্যাংকিং ম্যাচ-মেকিং ফেয়ার- ২০২৪”। যেখানে তাৎক্ষনিক ভাবে ঋণ গ্রহনে আগ্রহী এসএমই নারী উদ্যোক্তাদের নির্বাচন করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ঋণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে এবং ঋণ গ্রহনে যোগ্য সংখ্যক উদ্যোক্তাকে ঋণ প্রদান করা হবে। পরিশেষে আগামী ২০ এপ্রিল ২০২৪ তারিখ শনিবার থেকে মাসব্যাপী আয়োজিত দক্ষিণ এশিয়ায় মহিলা উদ্যোক্তাদের সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সম্মিলন ১৪তম আন্তর্জাতিক উইম্যান এসএমই এক্সপো বাংলাদেশ সফলভাবে আয়োজন করার জন্য চট্টগ্রামের সর্বস্তরের জনগণ, সাংবাদিক, সুশীল সমাজসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উইম্যান চেম্বারের সহ সভাপতি নিশাত ইমরান, শামিম মোরশেদ, সীমা খাতুন, পরিচালক রুহী মোস্তফা, বেবি হাসান, লুদমিলা ফরিদ, সদস্য চৌধুরী জুবাইরা সাকি, রেখা আলম চৌধুরী, খালেদা আক্তার চৌধুরী প্রমুখ।