নিউজ ডেস্ক

নাইক্ষ্যংছড়িতে শফি উল্লাহর প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে রিট, নির্বাচন কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বিবাদী

বান্দরবান প্রতিনিধি: সরকারি চাকরিজীবি হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিধি নিষেধ থাকলেও তথ্য গোপন করে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল্লাহর বিরুদ্ধে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। মনোনয়ন ও সরকারি চাকুরী চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের আবেদনটি প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ইতিমধ্যে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো.আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল ইস্যু করে আদেশ দিয়েছেন। আদেশে আগামী ৪সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে রিট আবেদনে মোহাম্মদ শফিউল্লাহর পাশাপাশি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

জানাযায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি অধ্যাপক শফি উল্লাহ সরকারী চাকরিজীবি হিসেবে প্রচারিত বাংলাদেশ গেজেট থাকলেও এ তথ্য গোপন করে তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হয়েছেন। তিনি নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারী কলেজের সরকারি চাকরীজীবি হিসেবে প্রচারিত বাংলাদেশ গেজেট ও এমপিও রয়েছে। তবে তিনি আয়ের উৎস হিসেবে দোকানের নাম উল্লেখ করলেও সরকারী চাকুরী উল্লেখ না করে পেশায় অবৈতনিক শিক্ষক উল্লেখ করেছেন। এসব তথ্য গোপন করার পরও হলফনামায় যাচাই-বাছাইয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক শফিউল্লাহ হলফনামায় সরকারী চাকুরীজীবির তার নাম রয়েছে এবিষয়টি তিনি উল্লেখ করেননি।

স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি জানান, অধ্যাপক মোহাম্মদ শফি উল্লাহ বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান থাকার পরও সবাই তাকে অধ্যাপক হিসেবেই চিনে। নিজেও সকলের কাছে উপজেলা চেয়ারম্যানের পাশাপাশি অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে তিনি কোন বেতন নেননা বলে দাবি করেন। তারা বলেন, তিনি অত্যান্ত ধূর্ত ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে কলেজে ক্লাস করান না, বেতনও নেননা। আবার গোপনে চাকুরীটাও ঠিক রেখেছেন। পরবর্তীতে কৌশল অবলম্বন করে সরকারী এ অর্থ ঠিকই আদায় করে নিবেন। এ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিও তুলেছেন তারা।

সূত্রে জানাযায়, শফিউল্লাহ নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এম এ কালাম সরকারী কলেজের শিক্ষক হওয়া স্বত্বেও আসন্ন ৬ষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। অথচ ২০২৩ সনের ২৫জুলাই প্রকাশিত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারী কলেজ-৫ শাখার প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মোহাম্মদ শফিউল্লাহর নাম রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রভাষক হিসেবে ১০নম্বর ক্রমিকে অর্ন্তভুক্ত রয়েছে। যার ইনডেস্ক নং-৮৩৪৯১৯।

এই প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হলে অধ্যাপক মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, আমি গত উপজেলা নির্বাচনে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। এখনো তালিকায় নাম থাকলে সেটা আমি জানিনা, সেটা কলেজ কর্তৃপক্ষ জানবে। অব্যাহতির প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন কাগজ পত্র নেই। এগুলো আমি সংগ্রহে রাখার প্রয়োজন মনে করিনাই। আপনি কলেজ কর্তৃপক্ষের থেকে জানতে পারেন।

যোগাযোগ করা হলে হাজী এম এ কালাম সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো জাফর আলম বলেন, অধ্যাপক শফিউল্লাহ একসময় কলেজে ছিলেন। গেজেটেও তার নাম আছে। তবে তিনি কলেজ থেকে বেতন নেন না বা ক্লাসও করান না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষের নজরে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে রয়েছি, আপনি শফিউল্লার সঙ্গে কথা বললে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

বান্দরবান জেলা নির্বাচন অফিসার এস. এম. শাহাদাত হোসেন বলেন, তিনি মনোনয়নের সময় কেউ অভিযোগ করেনি। এছাড়া শুনেছি তিনি কোন বেতনও গ্রহন করছেন না শিক্ষকতার পেশা থেকে। তাই তার মনোনয়ণ বাতিল করা হয়নি।

উল্লেখ্য যে, তার বিরুদ্ধে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে পাহাড় কেটে ও সরকারী পুকুর ভরাট করে জায়গা দখল করে বিলাসবহুল প্রাসাদ নির্মাণসহ নানা ধরণের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে পরিবেশ চট্টগ্রাম পরিবেশ আদালতে মামলা নং-০৩/২০১৩, ঢাকার লালবাগ থানার মামলা নং-০২/২০১৪, কক্সবাজার মডেল থানার মামলা নং-৭৪/২০১২, পরিবেশ আদালতে মামলা নং-১৫, জেলা ও দায়রা জর্জ আদালত কক্সবাজারে এস টি মামলা নং-১১০৩/২০১০, বান্দরবান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সি.আর মামলা নং-১০৮/২০১৩ রয়েছে।

 

মন্তব্য করুন