নিউজগার্ডেন ডেস্ক: আজ শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা, ২৫৬৮ বুদ্ধাব্দ, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ৬২৩ খ্রিঃ পূর্বাব্দের এই দিনে নেপালের তরাই অঞ্চলের তৎকালীন কপিলাবস্তুর লুম্বিনী উদ্যানে মহামানব গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন। গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও পরিনির্বাণ লাভ এ ত্রিস্মৃতি বিজড়িত পূণ্যময় দিনটি পৃথিবীর সকল বৌদ্ধদের কাছে মহা পবিত্র ও তাৎপযপূর্ণ একটি দিন। আজ ২৪ মে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধ বিহারের দায়ক-দায়িকা ও পূন্যার্থীদের ব্যাপক অংশগ্রহণে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায়, যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যের সাথে উদযাপিত হলো বুদ্ধ পূর্ণিমা। সকালে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়।
বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত বিজয়ানন্দ মহাথেরোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম ফ্রিপোর্টস্থ হিল চাদিগাং বৌদ্ধ বিহারের বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত সাধনা জ্যোতি মহাথের, ভদন্ত প্রজ্ঞা দর্শন ভিক্ষু, কীর্তি পাল ভিক্ষুসহ প্রমুখ প্রাজ্ঞ ভিক্ষু সংঘ।
অনুষ্ঠানে দায়ক-দায়িকাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাবু হেম চন্দ্র চাকমা, সহ-সভাপতি মহেন্দ্র চাকমা, সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রিকন দেওয়ান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইজ্ঞিনিয়ার জ্ঞানমিত্র চাকমা, অর্থ সম্পাদক সুভাগ্য চাকমা, সিয়ং বিষয়ক সম্পাদক সমর কান্তি চাকমা, পূজা বিষয়ক সম্পাদক মিসেস গীতা রানী চাকমা, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বাবু হেলেন দেওয়ান, সহ-পূজা বিষয়ক সম্পাদক জগত তারা চাকমা, ভাষা ও ধর্মীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক বাবু সম্পদ চাকমা, বাবু রিটেন চাকমাসহ অগনিত পূণ্যার্থী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিহার পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু সুস্বপন চাকমা।
বিহারাধ্যক্ষ ভদন্ত বিজয়ানন্দ মহাথের বলেন, বুদ্ধের শিক্ষা মেনে চলে লোভ, হিংসা, অজ্ঞানতা ত্যাগ করে জ্ঞান বুদ্ধি কৌশল নিয়ে জীবনযাপন করতে পারলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি উন্নতি হবে। তাই সকল প্রাণীর হিতসুখ মঙ্গল কামনায় বুদ্ধের বাণী মেনে চলার আহবান জানান তিনি।
এছাড়া স্বধর্ম দেশনা পরিবেশন করেন হিল চাদিগাং বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সাধনাজ্যোতি মহাথেরো। তিনি বলেন, বর্তমান এ সংঘাতময় বিশ্বে দরকার মহামতি গৌতম বুদ্ধের আহিংসা নীতি। অহিংসা ও মৈত্রীই পারে এ উন্মত্ত পৃথিবীকে শান্ত করতে। পুণ্যার্থীদের মধ্যে বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হেম চন্দ্র চাকমা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন।
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। গৌতম বুদ্ধের শুভ জন্ম, বোধিজ্ঞান ও মহাপরিনির্বাণ লাভ এই তিন স্মৃতিবিজড়িত বিশ্বের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমা নামে পরিচিত। ত্রি স্মৃতি বিজড়িত এ দিনটিকে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বৈশাখ দিবস, বুদ্ধ পূর্ণিমা কিংবা বুদ্ধ জয়ন্তী ইত্যাদি হিসেবে উদযাপন করে।
গৌতম বুদ্ধত্ব লাভের জন্য ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগ করেন এবং ৬ বছর কঠোর তপস্যার পর ৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধত্ব লাভ করেন। অতপর ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার শেষে ৮০ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। আর তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যময়। প্রতিবছর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে তাই নানা আয়োজনে বৌদ্ধ পূর্ণিমা পালন করে থাকেন।