নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রাণ গেল এক দুর্ঘটনায় আহত রোগীর। তিনি হলেন কাট্টলীর বাসিন্দা আবদুস সালাম (৭৮)। আজ রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সাড়ে ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে। এঘটনায় রোগীর স্বজনরা বিচার দাবি করেন।
নিহতের পরিবার সূত্রে জান গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর কাট্টলীর নিজ বাস ভবন থেকে এশার নামাজের পর ঔষুধ কিনতে গেলে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে পা ভেঙ্গে পেলে পরে পরিবার ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
তাকে ২৬ নং ওয়ার্ডের ফ্লোরে রাখে, সেখানে ১১ দিন থাকার পর ৪৬ নম্বর সীটে তোলা হয়, কোনো ধরনের চিকিৎসা না দেয়ায় পরের দিন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আবদুস সালাম।
লিখিত কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে সাংবাদিক মো: ছরওয়ার কামাল নামক এক মারধরের রোগী ২৬ নাম্বও ওয়ার্ডে গত ২৩ আগস্ট ভর্তি হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অপারেশনের তারিখ দেন ডা: হাবিবুর রহমান। রোগী সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত অপারেশন রূমে অপেক্ষা করে সীটে চলে আসেন। পরে জানা যায় ডা: হাবিবুর রহমান প্রাইভেট রোগী দেখার জন্য চলে যান। এভাবে কত রোগী অবহেলার শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে তার কোন হিসেব নেই। আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায় ডাক্তারেরা নিজ রূমে বসে আড্ডা দিচ্ছে, রোগীদের দেখার তাদের কোন আগ্রহ নেই। এভাবেই চলছে সরকারী হাসপাতালগুলো। ডাক্তারদের রোগী দেখার আগ্রহ বেশী প্রাইভেট চেম্বারে।
এ ব্যাপারে পরিচালকের পিএস শাহনেয়াজকে বার বার জানানোর পরও সাংবাদিক মো. ছরওয়ার কামালকে দেখার কোন প্রয়োজন বোধ করেনি, কোন ডাক্তারও তাকে দেখেনি। যারা দেশের সচেতন নাগরিক তাদের এ অবস্থ্ াহলে সাধারণ রোগীদের কি অবস্থা তাতেই অনুমেয়।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশে চিকিৎসক এবং রোগীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি, বিতণ্ডা এমনকি সংঘর্ষের ঘটনা প্রায়ই শোনা যায়। এসব কারণে মারামারি, হাসপাতাল ভাংচুর এবং মামলা ঘটনাও ঘটে।
রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসকরা তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন না, প্রশ্নের জবাব দেন না এবং যথেষ্ট সময় দেন না। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাও তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য পান না।
অপরদিকে চিকিৎসকদের অভিযোগ, অনেক সময় রোগীরা তাদের রোগের ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেন না।
হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার সময় একজন রোগীর কী কী অধিকার থাকে? বাংলাদেশে রোগীরা সেসব অধিকারের ব্যাপারে কতটা সচেতন? বাংলাদেশে এসব অধিকার রক্ষার চর্চায় বা কতটা হয়?
রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কী করা উচিত?
কয়েকটি ঘটনা
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বাসিন্দা মো: ছরওয়ার কামাল দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি বলছিলেন, ‘প্রতিদিন সকালে যখন বড় ডাক্তার রাউন্ডে আসতেন, তখন আমাদের সবাইকে ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যেতে বলা হতো। তিনি চলে যাবার পর একজন জুনিয়র ফাইলে ওষুধ, টেস্ট ইত্যাদি লিখে দিতেন। পরে সেটা দেখে নার্স আমাদের ওষুধ আনতে বলতেন। কিন্তু রোগীর উন্নতি কতটা হচ্ছে, কোন ওষুধ কেন দেয়া হচ্ছে, সেটা কখনোই আমাদের বলা হতো না। জুনিয়রদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তারাও বিরক্ত হতেন। এরকম অভিজ্ঞতা যে শুধু তার একার হয়েছে তা নয়। বাংলাদেশের রোগীরা চিকিৎসকদের কাছ থেকে যথাযথ চিকিৎসা তথ্য পান না বলে অভিযোগ রয়েছে।
শুধু সরকারি হাসপাতালেই নয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকে অর্থ খরচ করে যেসব বেসরকারি হাসপাতালে যান, সেখানেও রোগীদের অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের চিকিৎসা, ওষুধ বা অপারেশনের ব্যাপারে ঠিক মতো অবহিত করা হয় না। এমনকি চেম্বারে চিকিৎসকরাও রোগীদের কথা ভালো ভাবে না শুনেই চিকিৎসাপত্র দেন বলে অভিযোগ আছে।
চিকিৎসক এসে রোগী দেখে যাওয়ার পর তার জুনিয়র এসে আমাদের জানাতেন, এই করতে হবে, ওই টেস্ট করতে হবে। কিন্তু মূল চিকিৎসক কখনো ভালোভাবে কথাও বলতেন না। প্রতিদিন অনেকগুলো করে টেস্ট করতে দিতেন। কিন্তু সেসব টেস্ট কেন করা হচ্ছে, আদৌ দরকার আছে কিনা, তার কোন ব্যাখ্যা কখনো পাই নি।