
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, জাগপার সহ-সভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেছেন, আগামীর বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, শিক্ষা ও প্রযুক্তিনির্ভর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, যেখানে প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের সমাজে সমতা, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি। এর জন্য নতুন প্রজন্মকে সচেতন এবং সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং উন্নত সমাজ গড়তে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জাতির উন্নয়নে শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা এবং সামাজিক মূল্যবোধের গুরুত্বও অপরিসীম। তিনি বলেন, এমন নিরস্ত্র গণ-অভ্যুত্থান। কোথাও নেই! যে জাতির সন্তানেরা হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে- ও বলছে- স্বৈরাচারীর পতন হয়েছে? আমাদের কি মুক্তি হয়েছে? সে জাতি কখনও পরাজিত হতে পারে না। আমাদের সজাগ থাকতে হবে- প্রতিবিপ্লব যেন না ঘটে, কারণ পরাজিত শিবির চাইবেই যেন এই গণঅভ্যুত্থান কোনোদিনও সফল হতে না পারে। বাংলাদেশ যেন কখনো মাথা উঁচু করে না দাঁড়াতে পারে। বিপ্লবের অপর পিঠেই থাকে- প্রতিবিপ্লব- নিউটনের তৃতীয় সূত্রের মতো। যারা প্রতিবিপ্লব করে, তারা সবসময়ই আত্মঘাতী হয়, কেননা তাদের আর হারাবার কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রতিবিপ্লব দেখি- যেমন তিউনিশিয়ার বিপ্লব ও তারপর প্রতিবিপ্লব। শেষ পর্যন্ত সেই বিপ্লবটি সফল হয়নি। তেমনি রুশ বিপ্লব। তাহলে সমাধান কি? এই বিপ্লবী সরকারকে দুটি জিনিসের ওপর খুব সতর্কভাবে নজর দিতে হবে- একটি হল জনতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, আরেকটি হল সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা যেন গুজব না ছড়ায়। এ দুটি কাজ অবিলম্বে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতেই হবে।
তিনি শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) ৩ টায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হল মিলনায়তনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ছাত্র জনতার স্বরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু মোজাফফর মোঃ আনাছ’র সভাপতিত্বে ও চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন’র পরিচালনায় এ কে আজাদের কোরআন তলোয়াতের মাধ্যমে সূচিত অনুষ্ঠিনে আবু মোজাফফর মোঃ আনাছ বলেন, ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকার হত্যা ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছিল। আ’লীগের সন্ত্রাসীদের নামিয়ে দিয়ে সমগ্র দেশকে রণক্ষেত্রে পরিণত করেছিল। কিন্তু ছাত্র জনতার দুর্বার প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আ’লীগের দাম্ভিকতা, দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণেই তাদের পতন হয়েছে। আজকে আ’লীগ জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনা ও আ’লীগ গণ ধিকৃত দলে পরিণত হয়েছে। তাই আমাদেরকে জনগণের মন জয় করে চলতে হবে। স্বৈরাচারী হাসিনার পতনে প্রথমিক বিজয় অর্জন হলেও পরিপূর্ণ বিজয়ের জন্য নির্বাচনে জনগণের সমর্থনে সফল হতে হবে।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, বিএনপি চট্টগ্রাম মহানরের সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বিজয়! বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান-এর মধ্যে দিয়ে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। জন মানুষের ক্ষোভ ও আক্রোশের মুখে হাসিনা দেশ থেকে পালিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এটা ছিল এক বিরল দৃষ্টান্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধের পর এটাই ছিল এদেশের ইতিহাসে সব থেকে গৌরবময় ঘটনা। সব থেকে প্রথমে যে নামটি মনে পড়ছে- বীর সন্তান আবু সাঈদ। আসলেই উনি একজন মহাকাব্যের নায়ক- একজন বীরসেনা। ইতিহাসে অনেক যোদ্ধা দেখেছি; কিন্তু আবু সাঈদ এর মতো এমন অসীম সাহসী, নির্ভীক মানুষ খুব কম দেখা মেলে- যিনি স্বেচ্ছায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন শত্রুর বন্দুকের সামনে। সেদিনই বাংলাদেশের এই গৌরবগাঁথা গণঅভ্যুত্থানের সূচনা।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরের এসিসট্যান্ট সেক্রেটারী, মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, আমরা অনেক তাজা রক্ত দিয়ে এই দ্বিতীয় স্বাধীনতা পেয়েছি, এখন প্রত্যাশা অনেক। আমাদের বাংলাদেশ আমাদেরই গড়তে হবে, যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো, মনে হল এদেশের তরুণেরা সেটাই আরেকবার মনে করিয়ে দিল। একেই মনে হয় বলে- ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি! সমাজের সব স্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কাজটা অনেক কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। এদেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা এক দানবীয় স্বৈরশাসকের পতন ঘটিয়েছে, সুতরাং সদিচ্ছা থাকলে রাষ্ট্র সংস্কার এখন সময়ের ব্যাপার। এটি সময়ের দাবিও বটে!
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে চট্টগ্রাম মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের নিরীহ, নিরস্ত্র ছাত্র জনতা তাদের জীবনের মায়া ত্যাগ করে এক দানবের সাথে যুদ্ধ করে সুমহান বিজয় অর্জন করেছে। সেই দানবের ত্রাস থেকে শিশুরাও রক্ষা পায়নি। এই মহান ত্যাগ কখনই বিফলে যেতে দেয়া হবে না, আর একটিও প্রাণ যেন এভাবে অকাতরে ঝরে না যায়, তার জন্য যত প্রকার সংস্কার আবশ্যক, তাই করতে হবে।
আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোতোয়ালী থানা সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ, চট্টগ্রাম জেলা নেত্রী বকুল বেগম সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ।