
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: গত ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত ‘বিএনপি নেতার বাসার পার্কিং এ এস আলমের গাড়ি’ সংক্রান্ত প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর আওয়াতাধীন কোতোয়ালী থানার বিএনপির সভাপতি মনজুর রহমান চৌধুরী।
শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে কোতোয়ালী থানার বিএনপির সভাপতি মনজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘গত ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে আমার পৈতৃক নিবাস নগরীর জামালখান চেরাগী মোড়ের সানমার স্প্রিং গার্ডেনের গাড়ির পার্কিং থেকে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধিত গাড়ি পুলিশ উদ্ধার করে। এরপরেই আমার নাম জড়িয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদে আমাকে জড়ানো হলেও এ ঘটনায় আমার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই।’
‘ঘটনার বিবরণীতে আমার বাড়ি বলা হলেও মূলত ২০০৩ সালে আমার পৈতৃক জায়গাটি সানমার কোম্পানির ডেভেলপারের কাছে হস্তান্তর করি। বর্তমানে এ বাড়িতে ২৪টি ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উক্ত ভবনে আমাদের পরিবারের চারটি ফ্ল্যাট ছাড়া বাকিগুলো বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে সানমার গ্রুপ বিক্রি করেছে। এ ভবনের ৪-বি নামীয় ফ্ল্যাটে আমি বসবাস করি। ২৪টি ফ্ল্যাটের ২৪টি পাকিং বরাদ্দ রয়েছে। আমার ব্যাক্তিগত কোন গাড়ি নেই এবং যার কারণে পার্কিংয়ে কার কি গাড়ি রাখে সে সম্পর্কেও আমি কখনো অবগত না। কিন্তু গত ৫ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। এতে করে আামার রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।আমি প্রকাশিত সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে গাড়িটি উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গাড়ি উদ্ধারকালে আমি বাসায় অবস্থান করলেও কোতোয়ালী থানা পুলিশ আমার সাথে কোনো প্রকারের যোগাযোগ করেনি। গাড়িটি পার্কিং এর কোন জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে এবং কার কাছ থেকে চাবি নিয়েছে সে বিষয়েও আমি অবগত না। যে পার্কিং এ আলোচ্য গাড়িটি পাওয়া গিয়েছে সেটাও আমার মালিকানাধীন নয়। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমাকে দায়ী করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।’
মূলত কোতোয়ালী থানা গাড়ি উদ্ধারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওইদিন রাতে থানায় যে জিডি করেছে তাতেও আমার নাম ও সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ নেই বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি। মূলত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপিকে জনসম্মুখে হেয়প্রতিপন্ন ও অজনপ্রিয় করতে একটি স্বার্থন্বেষী মহল এসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসররা ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনের ফসল বিনষ্ট করার জন্য সুগভীর ষড়যন্ত্রেও অংশ হিসেবে এসব প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যম ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহবান জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে জড়িয়ে মিথ্য সংবাদের কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বর আমি পবিত্র ওমরা হজ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্য স্ত্রীসহ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে গেলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী আমাকে বাঁধা দেয়। এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এবং আমি তার যথাযথ উত্তর প্রদান করি। পরবর্তীতে বর্তমানে দেশ ত্যাগ না করার পরামর্শ প্রদান করলে আমি আমার ওমরাহ হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা স্থগিত করে বাসায় চলে আসি। যদিও গত ১৩ আগস্ট সস্ত্রীক ওমরা হজ্বের জন্য আল মুনতাজিন হজ্ব কাফেলায় টাকা জমা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, সানমার স্প্রিং ভবনে এস আলম গ্রুপে চাকরি করে এমন কেউ বসবাস করে কিনা এবং এই গ্রুপের সঙ্গে অন্য কারও যোগাযোগ ছিল কিনা যাচাই করতে পারেন আইনশৃংখলা বাহিনী। কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ ছাড়া আমাকে জড়ানো হয়েছে। আমি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি করি বলেই কী অপরাধ? ২০১৭ সাল থেকে কোতোয়ালী থানার দায়িত্ব পালন করছি অসুস্থ শরীর নিয়ে। বেশ কয়েকবার আমার শরীরে অপারেশন হয়েছে।’
‘এরপরও স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে অন্তত ১০টি মামলা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। স্বৈরাচারী দলের সন্ত্রাস ও পুলিশের নানা নির্যাতন সয়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। ছাত্রজীবন থেকেই আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আছি। আমি রাজনীতিকে রাজনীতি হিসেবেই নিয়েই এত বছর জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েও কখনও নিজের লালিত নীতি আদর্শ থেকে এক পা বিচ্যুত হইনি। আর যখন সেই স্বৈরাচার সরকারের পতন হলো, ঠিক সেই মুহূর্তে দেশবাসীর চোখে ঘৃণিত, স্বৈরাচারী সরকারের লুটপাটের দোসর এস আলম গ্রুপের একটি মাত্র গাড়ি সরানোর সাথে আমার এবং আমার দলের নাম জড়িয়ে যাবে- এটা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। আমাকে এবং আমার দলের নাম জড়িয়ে এহেন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।’
এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘যে ঘটনার সাথে আমি কোনোভাবেই জড়িত না সে ঘটনার দায়ভার আমার কাঁধে নেয়ার কোন কারণ নাই। আমি সেই সাথে এ বিষয়ে সরকারি সংস্থা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট উদাত্ত আহ্বান জানাই এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করুন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাকে এবং আমার দলকে এই ঘটনা থেকে দায়মুক্তি দিন। ১৬ বছর নির্যাতন সহ্য করার পর দ্বিতীয স্বাধীনতার এই লগ্নে এমন ঘটনার সাথে জড়িয়ে আমার, আমার পরিবার এবং আমার দলের সুনাম নষ্ট না করার জন্য করজোড়ে অনুরোধ করছি।’
‘উক্ত ঘটনায় আমার ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নাই। পার্কিং এ গাড়ি রাখার ঘটনায় কারা জড়িত তা তদন্ত করে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনির প্রতি আহবান জানাচ্ছি। এবিষয়ে আমার কোন সহযোগীতার প্রয়োজন হলে আমি সর্বাতœক সহযোগীতা করতে সদাপ্রস্ত