নিউজগার্ডেন ডেস্ক: কে বি আমান আলী রোডের গ্রীণ ভিউ এলাকায় ময়লা-আবর্জনার কারণে ঘরের সিঁড়ি দিয়ে চলাচল দায় হয়ে পড়েছে, দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঘরের বাসিন্দাদের, আশপাশের এলাকাবাসীদেরও। ক্রমেই ময়লা ফেলায় ভরে যাচ্ছে ভবনের আশপাশ। ময়লায় আটকে যাচ্ছে পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি। পয়োবর্জ্য, তরকারির খোসা, অব্যবহৃত পানির বোতল, অব্যবহৃত কাচের বোতলসহ নানা ধরনের ময়লা ফেলা হচ্ছে এই ভবনের ভেতর। ভবনের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ ও শৌচাগার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন কে বি আমান আলী রোডের গ্রীণ ভিউ ভবনের বাসিন্দারা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে পরীক্ষা শুরু করলেও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। আইনের প্রয়োগ তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে বায়ু দূষণ যাতে না হয়, পানি বা শব্দ দূষণ না হয়, সে ব্যাপারে আমাদের নিজেদের সতর্ক হতে হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অনেকেই।
সিরাজুল ইসলাম গং এর সাথে পাওয়ার অব এটর্নি দলিল নং ২৫৮৮ তা-২৮/৭/৮ ইং মুলে ম্যানেজিং ডাইরেক্টর-জাকির হোসেন ইম্পালস প্রপাইটিস লিঃ রোড নং-১ হাউস-১৬ খুলশি আবাশিক এলাকা চট্টগ্রাম এর সাথে আবাসিক ভবনের চুক্তি হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর অতিবাহিত হওয়ায় পরও অদ্যাবধি ভবনের অনেক কিছু তৈরী করা হয়নি ফলে ভবনটিতে বসবাস করার অযোগ্য হয়ে পড়ে।
চুক্তিনামা অনুযায়ী লিফট থাকার কথা থাকলেও লিফেটর ঘর করা হয়েছে কিন্তু লিফট স্থাপন করা হয়নি। প্রয় প্রনালী, নিচের পার্কিং জায়গার কার্পেটিং করা হয়নি। ভবনের বাহিরের আস্তর ও রং করা হয়নি, সিঁড়ির টাইলস সিঁড়ির জানালার গ্লাস না থাকায় বৃষ্টির পানি ভিতরে ঢুকে টপ ফ্লোরে রূপ টাইলস / জলছাঁদ করার কথা থাকলেও তা না করায় পানি চুয়ে ঘরের ভেতরে পানি ঢুকে। বয়-বৃদ্ধ অসুস্থ রোগীদের ৬/৭ তলা থেকে মুমূর্ষ অবস্থায় কোলে করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। এক কথায় বসবাসরত ব্যক্তিবর্গ ও উচ্চ শিক্ষিত লোক হওয়ায় আবাসন অবস্থার দুর্দশার কারণে বন্ধু-বান্ধবদেরকে লজ্জায় বাসায় আনতে পারে না। ভবনটি সিডিএ এর নিয়ম বর্হিভূত হয়েছে বলে অনেকের ধারণা, পরিবেশের কোন ছাড়পত্র বা তদারকির অভাব পরিলক্ষিত হয়। রিহ্যাব/ পরিবেশ/ সিডিএ এর কর্তৃপক্ষের তদারকির মাধ্যমে অসহায়দের সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান ভবনের বাসিন্ধারা/
সরেজমিন দেখা যায়, ভবনের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমে রয়েছে। পাশাপাশি ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থাও ভালো না হওয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এছাড়া ভবনটির শৌচাগার ও বেসিনও অপরিষ্কার হয়ে আছে। ভবনটি অপরিষ্কার, অপরিচ্ছন্ন, নালার ব্যবস্থাপনা ঠিক নেই। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়মিত শৌচাগার পরিষ্কার না করায় ও নষ্ট কলগুলো সময়মত মেরামত না করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ভবনের নীচে এমন ময়লা আবর্জনার স্তূপের করণে পচা গন্ধে চলাচলকারী ব্যক্তিদের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে বোমি বোমি ভাব ও পচাঁগন্ধের অস্বাস্থ্যকর অক্সিজেনে শাররিক ভাবে ক্ষতির সম্মূখিন হচ্ছে। পরিবেশ দূষন ও এরকম দূর্গন্ধে জিবনমান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি হুমকির মূখে পড়তে পারে বলে জানান ভবনের বাসিন্দারা। ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই, কর্তৃপক্ষ জলছাদ না দেয়ায় ভবনের মালিকদের রূমগুলো পানিতে ভাসিয়ে যাচ্ছে।
অনেক দিন ধরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে না এই ভবন। ফলে এই ভবনের ভেতর-বাহির ময়লা-আবর্জনায় এক নোংরা পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। নানান জটিলতায় বিল্ডিং চত্বরে ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ গড়ে উঠলেও এদিকে দৃষ্টি পড়ছে না কর্তৃপক্ষের।
বিল্ডিংয়ে সঠিক ময়াল আবর্জনা নি:ষ্কানের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন না করায় বিল্ডিংয়ে ময়লা ফেলার জায়গার অভাবে অপরিচ্ছন্নতা বেড়ে যাচ্ছে। দেশের অন্যান্য বিল্ডিংগুলোর সাথে তুলনা করলে আয়তনে অনেক ছোট এই বিল্ডিং। যেন ময়লার ভাগাড়, অপরিচ্ছন্নতাই চিরাচরিত চিত্র। ভবনের ভিতর খুবই নোংরা এবং তীব্র দুর্গন্ধ। ভবনের ভিতর ময়লার ভাগাড়, পিছনে ড্রেনে ময়লা জমে থাকতে দেখা যায়। পুরো রাস্তা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা জমা হয়ে আছে।
এই এলাকা খুবই অপরিচ্ছন্ন। যত্রযত্র ময়লার ভাগাড় হয়ে আছে, দেখে বুঝা যায়, দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয় না। এখানে ময়লা স্থানান্তরের কোনো ব্যবস্থাও নেই।
সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এই বিল্ডং কমপ্লেক্সে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে কেউ নেই। বছরের পর বছর ধরে কাজের কাজ কিছুই হতো না। টয়লেট, বারান্দা, প্রথম ও দ্বিতীয়তলার প্রতিটি কক্ষ এবং পুরো বিল্ডং চত্বরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজগুলো দায়সারা, কেউ দেখার নেই।
বিল্ডিংয়ের একজন মালিক বলেন, ভবনটি সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে চকচকে রাখতে হবে। ময়লা জমে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ।
শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ তাদের বেশিরভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন, যেখানে সীসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়ুবিক ক্ষতি হতে পারে।
দূষণে বিপর্যস্ত পরিবেশ শরীর আর মনের ওপর প্রভাব ফেলে। শরীরে নানা রোগ বাসা বাধে, মানসিক অস্থিরতা বাড়ে। সুস্থ শরীর আর সুস্থ মনের জন্য দরকার শুদ্ধ বাতাস, শুদ্ধ পরিবেশ। কেবল তাই নয়, বায়ু দূষণের সঙ্গে অপরাধ প্রবণতাও বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বায়ু দূষণের পর শব্দ দূষণেও বিশ্বের শীর্ষে বাংলাদেশের নাম ওঠে এসেছে। চলতি বছর অর্থাৎ, ২০২৪ সালেও বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শীর্ষে চলে আসে বাংলাদেশের নাম। বিশ্বের ৬ হাজার ৪৭৫টি শহরের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাংলাদেশের বাতাস। আর স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, এসব অসংক্রামক রোগে মৃত্যু হচ্ছে ৬৭ শতাংশ। চিকিৎসকরা বলছেন, স্বাস্থ্য হচ্ছে শারীরিক-মানসিক এবং সামাজিকভাবে ভালো থাকা। কিন্তু এসবই বিঘ্নিত হয় দূষণের কারণে। তার মধ্যে অন্যতম বায়ুদূষণ এবং শব্দ দূষণ। তাই শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো থাকতে হলে এসব দূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। দূষিত বাতাসে যেসব রাসায়নিক পদার্থ থাকে সেগুলো শরীরের ক্রিয়া-বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। যেহেতু দূষিত বায়ুর কারণে দেহের কোষ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, ফলে শরীরে ক্লান্তি এবং দুর্বলতা তৈরি হয়।
আবার শব্দদূষণের কারণে শ্রবণেন্দ্রিয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শহরে বসবাস করা একটি জনগোষ্ঠীকে মৃদু বধিরতায় ভুগতে দেখা যাচ্ছে, এবং এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
বায়ু দূষণ, শব্দ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ যে কোনও দূষণ একদম প্রত্যক্ষভাবে স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত এবং এর প্রভাব ক্ষণস্থায়ী নয়, দীর্ঘমেয়াদি বলে জানান জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ।
শব্দ দূষণের কারণে মানুষের কনস্ট্রেশন, অ্যাটেনশন যখন নষ্ট হয়, তখন সেখান থেকে স্বল্প মেয়াদে স্ট্রেস আর দীর্ঘ মেয়াদে বিষণ্ণতা তৈরি হয়। অপরদিকে, বাতাসে যদি সিসার পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
আবার বাতাসে যদি অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে কিংবা দূষিত থাকে তাহলে সেটা মস্তিষ্কে গিয়ে আমাদের ধীরগতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, উদ্দীপনা কমিয়ে দেয়। সেই সঙ্গে বায়ুদূষণের সঙ্গে অপরাধও বাড়ে এটাও প্রমাণিত।