
মো: নজরুল ইসলাম (টিটু), বান্দরবান: বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা নেয়া ঠিকাদার আনিছুর রহমান সুজন। একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরালেও আওয়ামী সরকারের ১৫বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন তিনি। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ণ বোর্ড ও পার্বত্য জেলা পরিষদের বেশির ভাগ কাজই হাতিয়ে নিয়ে অত্যান্ত নিম্নমানের কাজের মাধ্যমে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন সরকারের শত কোটি টাকা। নিজের লাইসেন্স থাকার পরও সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিতে বেশির ভাগ কাজই করছেন পাহাড়ী লাইসেন্সে।
বর্তমানে এখনো তার রুমা ও থানচিসহ বিভিন্ন উপজেলায় চলছে পাহাড়ী লাইসেন্সের মাধ্যমে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার কাজ। ১৫বছরে তিনি থানচি ও রুমা সদরে দুটি অবৈধ ইটভাটা, বালাঘাটা শৈলশোভা মাঠে নির্মাধীন একটি বিলাস বহুল বহুতল ভবন, ক্যায়ং এর মোড়ে পাঁচতলা ভবন, ৩নম্বরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার মূল্যের ২০গন্ডা জায়গা, সুয়ালকে বন বিভাগ থেকে দখল করা কয়েক কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২একর জায়গা এছাড়া ২০টিরও বেশি ট্রাক, পাহাড় কাটার জন্য নিজস্ব স্কেভেটরসহ নামে বেনামে রয়েছে প্রায় কয়েশ কোটি টাকার সম্পদ ও নগদ অর্থ। ইতিমধ্যে দূর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবরে দেয়া এক স্মারকলিপিতে সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের সহযোগি দূর্নীতিবাজদের তালিকার ২১নম্বরেও রয়েছে তার নাম।
স্থানীয়দের মতে, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা কালীন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী বীর বাহাদুরের হাতের স্পর্শ পান তিনি। সাবেক মন্ত্রীর হাতের ছোঁয়া পেয়েই শুরু হয় তার উত্থান। একসময় কিছু না থাকলেও ঠিকাদারী কাজে নানা অনিয়মের মাধ্যমে আজ তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক। তাদের মতে, তার সম্পত্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকেও হার মানাবে। তদন্ত করে এসব সম্পদের হিসাব বের করে সকল সম্পত্তি সরকারী কোষাগারে জমা করার দাবীও জানান স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ঠিকাদার জানান, বান্দরবানে অনেক ঠিকাদার রয়েছে। তার মত দূর্নীতিবাজ ঠিকাদার নাই বললেই চলে। সে যতগুলো কাজ করেছে তার অধিকাংশরই বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নাই। যেগুলোর অস্তিত্ব আছে সেগুলোও অত্যান্ত জরাজীর্ণ এবং যান চলাচল অনুপযোগি। তার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে ঠিকাদার মহলেও।
কালাঘাটার জামাল জানান, আনিছুর রহমান সুজন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে উন্নয়ণ বোর্ড ও জেলা পরিষদের সব বড় বড় কাজগুলো বাগিয়ে নিয়েছে। অত্যান্ত নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেছে। অনেক কাজের অস্তিত্বও নাই। নানা অনিময়ের মাধ্যমে সরকারী কোটি কোটি টাকা আজ তার পকেটে। বর্তমানে সে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক।
বান্দরবানের বাসিন্দা আলী আকবর জানায়, বর্তমানে বালাঘাটায় একটি বহুতল ভবন করছে। সেখানে ছাদে হেলিপ্যাড ও সুইমিং পুল করছে যার মূল্য প্রায় ৫০কোটি টাকারও বেশি। একসময় তার কিছুই ছিলনা। গত ১৫বছরে হঠাৎ করেই সে আলালের ঘরের দুলাল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তার সম্পত্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রীকেও হারমানাবে।
এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদার আনিছুর রহমান সুজনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
দূর্নীতি দমন কমিশন (দূদক) এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মো: আবুল হোসেন বলেন, আমরা উপরের নির্দেশনা পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিব। দূর্নীতিবাজদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা বলেও জানান তিনি।