মদিনাতুল আউলিয়া চট্টগ্রাম মুসলমান ইতিহাস উৎসব সম্পন্ন

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাহাবায়ে কেরামের পদধুলীধন্য প্রাচীন চট্টগ্রাম, বারআউলিয়ার শহরখ্যাত চট্টগ্রাম, মদিনাতুল আউলিয়া চট্টগ্রাম এর মুসলমানদের ইতিহাস ঐতিহ্যগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার প্রত্যয়ে চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র (সিএইচআরসি) প্রথম বারের মতো মুসলমান ইতিহাস উৎসব ২০২৪ গতকাল (২৯ অক্টোবর ২০২৪) মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর এশিয়ান এসআর হোটেল এর অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সহ-সভাপতি, ইসলামিক গবেষণামূলক পত্রিকা আল-ইরফান এর নির্বাহী সম্পাদক আলহাজ্ব আবদুর রহিম এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড মুসলিম হিস্ট্রি এসোসিয়েশনের সভাপতি লায়ন মুহাম্মদ শওকত আলী নূর।

উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ সউম আবদুস সামাদ।

প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক আলহাজ্ব এম.এ সবুর।

মহিনাতুল আউলিয়া চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মুসলমান শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি ইতিহাসবিদ সোহেল মুহাম্মদ ফখরুদ-দীন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আল্লামা রুমি সোসাইটির মহাসচিব শাহাজাদা এসএম সিরাজ উদ দৌলা, আগ্রাবাদ জাতিতাত্ত্বিক যাদুঘরের উপ-পরিচালক, বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. আতাউর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন ডিজিএম মোহাম্মদ একরাম হোসেন, বিশিষ্ট মানবাধিকার সংগঠক ও লেখক মাওলানা জহুরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের উপ-প্রকৌশলী হেলাল হোসেন, আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি পীরে ত্বরিকত আলহাজ্ব মাওলানা শাহ্ নুর মোহাম্মদ আলকাদেরী।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ রানা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বেলাল হোসেন, ডা. মোহাম্মদ রাশেদ, জুঁই ফুলের পরিচালক জিএম মামুুনুর রশীদ, মরমী কবি নাজমুল হক শামীম, তারিফ হোসেন, লেখক এস এম ওসমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, বিশিষ্ট্য লেখক মোহাম্মদ শাহজাহান, লেখক-গবেষক মো. হানিফ মান্নান কাদেরী প্রমূখ।

উৎসবে চট্টগ্রামসহ সমগ্র বাংলাদেশ ও ভারত উপ-মহাদেশের ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হযরত বদর শাহ (রহ.) (চট্টগ্রামের মুসলমান আগমনের প্রবাদপ্রতিম মহাপুরুষ ও মুসলমান মিশনারী), হযরত শাহ আমানত (রহ.) (মহান অলিয়ে কামেলকে বলা হয় চট্টগ্রাম শহরের কুতুব,কুতুবুল আকতাব), হযরত শাহ মোহছেন আউলিয়া (রহ.), সাগরপথে পানিতে ভেসে আসা আধ্যাত্বিক সাধ ও অলিয়ে কামেল), হযরত খাজা গরীব উল্লাহ শাহ (রহ.), (বারা আউলিয়ার অন্যতম অলি ও আধ্যাত্মিক ভাবে অর্থনীতি উন্নয়নের ধনকুবের মালিক ও সাধক পুরুষ ও যোদ্ধা), মধ্যযুগের কবি আবদুল হাকিম (বাংলা ভাষার প্রতিবাদী কবিতার প্রবাদ প্রতিম মহাপুরুষ ও কবি। যিনি বঙ্গজননী কবিতার মাধ্যমে বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন), মহাকবি আলাওল (আরকান রাজ সভার প্রধান কবি, পুঁথিপত্র রচনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য ও বাঙালি জাতির আত্মমর্যাদা প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রজন্মের কাছে স্মরণীয় মহাপুরুষ), কবি কোরেশী মাগন ঠাকুর (আরকানের মুখ্যমন্ত্রী, সাহিত্য সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক, মহাকবি আলাওলকে পূঁথিপত্র রচনা ও প্রকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন), সৈয়দ শমসের খাঁ (প্রাচীন ভারতবর্ষে মুসলমান শাসনামলে গৌড়েশ্বরীর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন) , কবি সুফি ফতেহ্ আলী ওয়াইসী (রাহ:) (তিনি মহান সাধক ছিলেন, ফার্সিভাষা, আরবি উর্দু হিন্দি ভাষা সহ ১৫ টি ভাষার পন্ডিত ছিলেন। ফার্সি ভাষায় লিখিত দিওয়ানে ওয়াইসি কালজয়ী একটি সাহিত্য সাধনা, এতে তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমে বিভোর ছিলেন। তাঁকে রাসুলনামা পীর বলা হয়), কবি আলি রজা কানু শাহ (রাহ:)(তিনি কালজয়ী কবি ও সাধক ছিলেন, তাঁর অনেক মূল্যবান পুঁথিপত্র বাংলা একাডেমিতে সংরক্ষিত রয়েছে, কবি বহু ভাষায় বলতে ও লিখতে পারতেন, তিনি জ্ঞান সাধক ছিলেন), হাবিলদার রজব আলী খাঁ (ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যাক্তি ছিলেন, সিপাহী বিপ্লবে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম থেকে, তাঁর ইতিহাস বিশ্বব্যাপী পরিচিত), মাওলানা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (রাহ:) (তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেমেছেন, বারে বারে কারাগারে নির্যাতিত হয়ে কারাভোগ করেছেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন, উপমহাদেশে মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম মুসলমান দৈনিক পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন), কবি মাওলানা আবুল হাসান (রাহ:) (তিনি বহু ভাষাবিদ ও পণ্ডিত ছিলেন, সুলেখক গবেষক ছিলেন, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন, মুনসেফ/বিচারক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন, টিপু সুলতানদের পারিবারিক শিক্ষক ছিলেন, চট্টগ্রামে প্রথম মক্তব কেন্দিক মাদ্রাসা ও এতিমখানা প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন তিনি), নওয়াব মৌলভী হামিদুল্লাহ খাঁ (রাহ:) (তিনি চট্টগ্রামের প্রথম ইতিহাস রচয়িতা হিসেবে প্রসিদ্ধ ব্যক্তি, ফার্সিভাষায় তারিখে চাটলাম বা তারিকে হামিদী রচনার মাধ্যম তিনি প্রথম চট্টগ্রামের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন।চট্টগ্রামের অতি প্রাচীন আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ ব্রিটিশ সেন্যরা অবরুদ্ধ করে অস্ত্রগার হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। নওয়ার হামিদুল্লাহ খাঁ তাঁর পীরছাহেব সুফি নূর মোহাম্মদ নিজামপুরীর আদেশক্রমে কলকাতায় গিয়ে ব্রিটিশদের বড় লাটের সাথে কথা বলে, আবেদন নিবেদন করে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ কে পুনরায় নামাজ পড়ার জন্য উপযুক্ত করে তুলেন, যা আজও গৌরব নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ), ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ( চট্টগ্রামের ইতিহাসে তিনি কালজয়ী মানুষ। সাপ্তাহিক কোহিনুর পত্রিকা পরবর্তীতে দৈনিক আজাদী পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে চট্টগ্রামের গৌরবময় ইতিহাস বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছেন এই মনীষী), কবি আবদুর রশিদ সিদ্দিকী (কবি ও সাহিত্যিক হিসেবে সুপরিচিত এবং কালজয়ী মানুষ, রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি সফল ছিলেন, এক সময়ে তাঁর রচিত উপন্যাস সমগ্র ভারতবর্ষে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রিয় উপন্যাসিক ছিলেন, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণে এই মহাপুরুষের অবদান সরঞ্জাম যোগ্য), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (মধ্যযুগে বাঙালি মুসলমান শিক্ষিত ও সমৃদ্ধ জাতি ছিল, তা তাঁরই অবদানে আজ প্রতিষ্ঠিত, বিশেষ করে পুঁথিপত্র আবিষ্কারের মাধ্যমে ও সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে তিনি গৌরবের ইতিহাস, সমৃদ্ধময় জাতি হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিতি তুলে ধরেছেন) স্মারণীয় এই মনীষিদের স্মরণপূর্বক জীবন কর্মের ইতিহাস আমাদের মুসলমান জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রচার-প্রসারের মাধ্যমে ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরতে হবে। সভায় সাহাবী হযরত সাদ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রহ.) এর মাধ্যমে চট্টগ্রামে ইসলামের দাওয়াত আশায় আজ পর্যন্ত এই অঞ্চলের মুসলমান সমাজ আল্লাহ ও রাসূলের দরবারে লাখ কোটি শোকরিয়াজ্ঞাপন করেন।

 

মন্তব্য করুন