‘সংস্কার কাজে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে জনআকাক্সক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে’

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: দি হাঙ্গার প্রজেক্ট -বাংলাদেশ’র আয়োজনে ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র সহযোগিতায় ভোটার সচেতনতা ও নাগরিক সক্রিয়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিসহ সংস্কার কমিশনের কাছে জন আকাক্সক্ষাভিত্তিক সুপারিশমালা প্রণয়নের দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন সুজন’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় আহ্বায়ক, অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান’র সভাপতিত্বে আজ ২ নভেম্বর ২০২৪ (শনিবার) চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে সূচনা বক্তব্য রাখেন সুজন, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন’র কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী ও দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ’র প্রজেক্ট ম্যানেজার দিলীপ কুমার সরকার। এতে উপস্থিত ছিলেন সুজন, চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ এরশাদ, কোষাধ্যক্ষ মহিউদ্দিন মুকুল, সদস্য নোমান উল্লাহ বাহার, সীতাকু- উপজেলার সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন অনিক, চট্টগ্রাম’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মোঃ মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পর একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করাকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রাধান্য দেওয়া উচিত। আমরা যত ধরণের সংস্কারের পথেই হাটি না কেন, যদি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে কোনো পরিবর্তন না আনতে পারি, তবে কোনো সংস্কারই টেকসই হবে না। তাই, সংস্কারের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ, গণতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী করতে হবে। রাজনীতিতে বিজয়ীদের সবকিছু করায়ত্ত করার যে ব্যবস্থা রয়েছে, তার অবসান ঘটাতে হবে। বিরোধীদের দমন-পীড়িনের সংস্কৃতির অবসান হওয়াও জরুরী। স্থানীয় সরকারের কর্মকান্ডে সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ, নির্দলীয় নির্বাচন এবং জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটের আয়োজন প্রভৃতি সফলকল্পে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে অবিলম্বে স্থানীয় সরকার কমিশন গঠন করা উচিত।

সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি সকল ধরনের বৈষম্যের অবসান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, পুলিশ প্রশাসনকে সম্পূর্নরূপে দলীয়মুক্ত করা, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবকাঠামো গড়ে তোলা, তৃণমূলে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসকের পদায়নসহ কর্মস্থলে অবস্থান বাধ্যতামূলক করা, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির অবসান ঘটানো, সাংবাদিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী কাঠামো তৈরি, অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে ব্যবস্থা, গণমাধ্যম যাতে ভীতিমুক্ত পরিবেশে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে তা নিশ্চিত করা, শ্রমজীবি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নূন্যতম মানসম্পন্ন জীবনযাপন ও পুষ্টি চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সফল বাস্তবায়ন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার উদ্যোগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বলয় থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত করা, সৎ-যোগ্য-দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান, জনপ্রশাসন সংস্কারের লক্ষ্যে দক্ষতা, যোগ্যতা, জৈষ্ঠ্যতা ও সততাকে পদোন্নতির পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া, দলীয় কর্মসূচিতে সরকারি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণ অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন, ধ্বংসের মুখোমুখী নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধ করতে নতুন করে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন, পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও কারসাজিমুক্ত করা প্রভৃতির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

মন্তব্য করুন