নিউজগার্ডেন ডেস্ক: দেশের অন্যান্য পরিবহন সেক্টরের মতই নৌপরিবহন সেক্টরকে নিরাপদ, সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল করার জন্যই সিরিয়াল পদ্ধতিতে লাইটারেজ জাহাজগুলো যেন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন করতে পারে।
এতে আমদানি রফতানি ও ব্যবসা বাণিজ্য স্বাভাবিক ও নিরাপদ থাকার মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীলতা পাবে। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদস্থ বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেল অফিস মিলনায়তনে বার্থিং মিটিং কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর মোহাম্মদ মাকসুদ আলম।
বি.ডব্লিউ.টি.টি.সি সেল এর কনভেনর সাঈদ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চীফ ইন্জিনিয়ার ও শীপ সুপারভাইজার মোহাম্মদ মনজুরুল কবির, সেল কর্মকর্তা হাজী সফিক আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মেহবুব কবির সহ অন্যান্যরা।
বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বছরে হ্যান্ডলিং হয় প্রায় ১০ কোটি টন পণ্য। আমদানীকৃত ভোগ্যপণ্য, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামালসহ নানা শিল্পপণ্য মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) স্থানান্তর করে পরিবহন করা হয় অভ্যন্তরীণ নৌ- রুটে। নতুন সিরিয়াল পদ্ধতির কার্যক্রমে ইতোমধ্যে ২৮০ টি জাহাজ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে এসংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানানো হয় সভায়।
গত ১৫ অক্টোবর প্রণীত এ নীতিমালায় লাইটার জাহাজের সিরিয়ালভুক্তি, বরাদ্দ ও জাহাজের ভাড়া নির্ধারণের একক দায়িত্ব ন্যস্ত করা হয়েছে বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন সেলকে (বিডব্লিউটিসিসি)। নতুন নীতিমালা অনুসারে, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের সুপারভাইজরি কমিটি এ সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে।
নীতিমালার শর্ত অনুযায়ী বিডব্লিউটিসিসির বরাদ্দ ছাড়া কোনো লাইটার জাহাজ বাংলাদেশের কোনো সমুদ্রবন্দরে আসা মাদার ভেসেল (বড় জাহাজ) থেকে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত থাকতে পারবে না। তবে যেসব ফ্যাক্টরী ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব লাইটার জাহাজ রয়েছে সেসব প্রতিষ্ঠান নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের অব্যাহতিপত্র পাওয়া সাপেক্ষে নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। বিডব্লিউটিসিসি কর্তৃক আয়োজিত এই সভায় বার্থিং কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন, কোষ্টাল শীপ ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশন অব চট্টগ্রাম, লোকাল এজেন্ট এসোসিয়েশন, পণ্যের এজেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্যবৃন্দ সহ ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।
সভায় নৌ সেক্টর ও জাহাজ’ শিল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন যারা তাদের সকল এর পক্ষ থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। যার বিচক্ষনতায় দ্রুততার সাথে এই নীতিমালা অনুমোদন করেছেন। ধন্যবাদ জানানো হয় নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাকসুদ আলমকে, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তিহীনভাবে, ধৈর্য্যের সঙ্গে, বিচক্ষনতার সাথে, দৃঢ়তার সাথে নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি এবং তার সহকর্মীদের নিয়ে নৌ সেক্টরে বিরাজমান অস্থীরতাকে নিরসন করে শৃঙ্খলা আনয়নকল্পে সকল ষ্টেক হোল্ডাদেরকে নিয়ে সমন্বয় করে একটি সুন্দর “নৌ পরিবহন অধিদপ্তর হতে অনুমতিপ্রাপ্ত লাইটার জাহাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০২৪” প্রণয়ন করার জন্য।
উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে লিখিত বক্তব্যে কনভেনর সাঈদ আহমেদ বলেন, বিডব্লিউটিসিসির এর মূল লক্ষ্য দুর্নীতিমুক্ত করা ও সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরন। সকল স্টেক হোল্ডারদের সমস্যা দ্রুত সমাধান করুণ। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতামূলক সেল তৈরি করণ। সেলের সকল কার্যক্রম Integration এর মাধ্যমে Digitalized করণ। খরচের অপব্যবহার রোধ করণ। মাদার ভেসেল এর পণ্য দ্রুত খালাসের মাধ্যমে ডেমারেজ থেকে রক্ষা করে বিদেশ দেশের ভাবমুর্তি উজ্জল করণ। বিডব্লিউটিসিসির একটি ব্যবসায়িক সংগঠন। যা হবে রাজনীতিমুক্ত সংগঠন। জাহাজের ভাড়া সকলের সম্বন্বয়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহীতায় এনে নির্ধারন করা।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সকলক্ষেত্রে আকাশ পথে, সড়ক পথে, আর্ন্তজাতিক সমুদ্র পথে দফায় দফায় তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি, Establishment খরচ বৃদ্ধি হয়েছে। কই আমাদের সেক্টরের ভাড়া তো বৃদ্ধি হয়নি। নৌ শ্রমিকদের ৬-৮ মাস বেতন ভাতা দিতে পারিনি। অনেকের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়েছে, শহরের বাসার যাবতীয় খরচ বহন করতে না পেরে গ্রামে চলে গেছেন।
পশু কোরবানী দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, জাহাজ কর্তন করেছে, কর্তন করার অপেক্ষায় আরো রয়েছেন। এই ব্যর্থতা, এই না পারার নাম কি সিন্ডিকেট? যদি আপনাদের মতো বড়দের, সমাজের সচেতন, দেশের প্রবৃদ্ধির রূপকারদের আমাদের মতো ছোট জাহাজ শিল্প মালিকদের প্রতি এই বিমাতাসুলভ আচরন হয় তবে আমরা কোথায় যাবো?
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, পরিবার পরিজন দেশে ফেলে কষ্ট করে বিদেশে অর্জন করে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো অর্থ, কৃষি শিল্পে কষ্টার্জিত অর্থ, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের জীবনের শেষ আশ্রয়ের ভরসার টাকা ব্যাংক হতে লুটপাট করে ব্যাংককে দেউলিয়া বানিয়ে আমাদের ক্ষুদ্র জাহাজ মালিকগণ বেগম পাড়া বানাতে পারিনি। এটাই কি আমাদের অপরাধ?
আমরা যদি শোষিত হই, আমাদের কারণে যদি শিল্প বিনষ্ট হয়, আমাদের কারণে যদি ভোক্তাগণ ক্ষতিগ্রস্থ হন, তবে আসুন-বসুন, পর্যালোচনা করুন, স্বচ্ছতা আনয়নে সাহায্য করুন। জাহাজ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য আমরা সদা প্রস্তুত, আমাদের দরজা উন্মুক্ত। বিগত দিনের আচরনের জন্য, স্বেচ্ছাচারিতার জন্য, আমাদের নবাগতদের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরন না করার জন্য ভুল না বুঝার জন্য অনুরোধ রইল।
বর্তমানে যে পরিমানে জাহাজ আছে তা মাসে ১ ট্রিপ এর বেশি সম্ভব নয়। আপনাদের জ্ঞাতার্থে স্বল্প সময়ে মাত্র একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরলাম ১০০০ মেঃটনের একটি জাহাজ মাসে ২,২৮,২৩৮/- টাকা, বছরে ২৭,২৮,২৫৬/- টাকা বর্তমান ভাড়ার দরে লস করেন।
যদিও নৌ শ্রমিকদের গেজেট অনুযায়ী বেতন-ভাত্যাদি সহ অন্যান্য খরচাদি ধরা হয়নি। তা করলে লসের পরিমান আরও হবে। তবুও লস মেনে নিয়ে জাহাজ মালিকগণ নিরূপায় হয়ে তাদের জাহাজ পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আসলে আমাদের জাহাজ মালিকদের অনেক কষ্ট, অনেক ব্যথা, আমরা অবহেলিত। আমাদের দুঃখ-দুর্দশা বোঝার, দেখার ক্ষেত্রের বড়ই অভাব। গুটিকয়েক দুষ্ট স্বার্থপর, লোভী, বিনষ্টকারী, স্বেচ্ছাচারী জাহাজ মালিকদের কারণে পুরো জাহাজ শিল্পকে দোষারোপ হতে মুক্ত করুন। এই প্রত্যাশা আপনাদের প্রতি রইলো।