আলীকদম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারীর কোটি টাকার সম্পদ থানচিতে

বান্দরবান প্রতিনিধি: থানচির কৃষকের ছেলে সুরেন্দ্র ত্রিপুরা। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের হাত ধরে ২০১০ সালের ১১ই আগষ্ট থানচি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ১৬তম স্কেলে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ পান তিনি। চাকুরী জীবনের ১৪বছরই কাটে থানচিতে। থানচিতে থাকাকালীন মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক বদলী, প্রকল্পের টাকা লুটসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠে তার নামে। এসব অভিযোগ তদন্তে প্রমান হলে চলতি বছরের ১এপ্রিল আলীকদমে বদলী করেন সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা স্বয়ং নিজে।

স্থানীয়রা জানায়, চাকুরীর শুরুর দিকে কোন রকম দিনাতিপাত করলেও কয়েক বছরেই আমুল পরিবর্তণ হয় তার। বর্তমানে থানচিতেই রয়েছে প্রায় ৫০একরেরও বেশি জায়গা যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। এছাড়াও নামে বেনামে রয়েছে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার। তারা আরো জানায়, থানচিতে থাকা কালীন এক আওয়ামী নেতার সহধর্মীনির সাথে নারী কেলেঙ্কারীতে ধরা খায়। পরবর্তীতে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তা দফারফা হয়। অবশেষে চলতি বছরে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক বদলী, ইউএনডিপি শিক্ষকদের থেকে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করে অর্থ আদায়, নারী কেলেঙ্কারী ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে সত্যতা পেয়ে তাকে আলীকদম বদলী করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নকতোহা পাড়ায় ৫একর, সাধু যোশেফ পাড়ায় ৩একর জায়গা, ১টি পুকুর, মরিয়ন পাড়ায় ২০ শতক, শিদুই ম্রোর কাছ থেকে ৫একর, মুনলাই ম্রোর থেকে ৫একর, মাংয়া ম্রো থেকে ৫একর, রেইংচং ম্রো থেকে ৫একর, পদ্দমুখে ৫একর ও শচিন বাড়ির রাস্তার পাশে ৫০শতকের একটি পুকুরসহ তার নিজ নামেই রয়েছে প্রায় ৫০ একরেরও বেশি জমি। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়াও রয়েছে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা। আর এসব করেছেন নানা অপকর্মের মাধ্যমে।

থানচির ভাগ্যরতি ত্রিপুরা জানান, সুরেন্দ্র ত্রিপুরা ১৬ তম গ্রেডের সরকারী চাকুরীজীবি। এই পদে থেকেই তিনি থানচিতে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন যা সকলেই জানে। সরকারী চাকুরী করে এত অর্থ ও সম্পদের মালিক কিভাবে হল তা জানতে এখানকার মানুষেরও কৌতুহল আছে। আশা করছি তদন্ত করে সকল তথ্য এখানকার জনগণেে সামনে উপস্থাপন করবে প্রশাসন।

রনি ত্রিপুরা নামের থানচির আরেক বাসিন্দা বলেন, আমরা রাজনীতি করেও সুরেন্দ্র ত্রিপুরার অর্ধেক সম্পত্তিও করতে পারিনি। সে সামান্য চাকুরি করে কিভাবে এত সম্পত্তি আর টাকার মালিক হল? আমরা চাই এর সঠিক তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক প্রধান শিক্ষক বলেন, আমরা স্বামী স্ত্রী দু’জনে সরকারী শিক্ষকতা করছি দীর্ঘ ২০-২৫ বছর হল। এখনও ব্যাংক লোন নিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা খরচ চালাতে হচ্ছে। সেখানে ১৬তম স্কেলে চাকুরী করে ১৪বছরে এত টাকার সম্পদ গড়াটা আসলেই অবিশ্বাস্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মদক মৌজার এক হেডম্যান বলেন, আমার মৌজাতেও সুরেন্দ্র ত্রিপুরার গাছ বাগানসহ প্রচুর সম্পদ রয়েছে। তিন্দু ও রেমাক্রীতেও কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। এগুলো ক্রয়ের জন্য এত টাকা কোথায় পায় আমি জানিনা। তবে চাকুরী করে অনেক অনিয়ম করেছে বলে শুনেছি।

এদিকে অতি সম্প্রতি থানচি সদরের সাধু যোসেফ পাড়ায় নিজ জায়গার পাহাড় কেটে মরিয়ম পাড়ার নিজ জায়গার নিচু জমি ভরাট করে দুটো জমিই বসত বাড়ির উপযোগি করেছেন। এতে দুটো জমির দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ সম্পর্কে জানতে আলীকদম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী সুরেন্দ্র ত্রিপুরাকে একাধিকবার কল দিলে তিনি বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল বলেন, আমি যেহেতু নতুন এসেছি তাই এখনো কিছু জানা নাই। তবে সুরেন্দ্র ত্রিপুরা এখনো তার সম্পত্তির তালিকা আমার কাছে জমা দেয়নি। জমা দেবার পর খোঁজ নিয়ে আমি অবশ্যই তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নিব।

মন্তব্য করুন