চাঁদার জন্য প্রকৌশলীকে তুলে নেয় রাঙ্গুনিয়ার ‘ইসমাইল বাহিনী’

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: গত ১৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চাঁদা না দেয়ায় একটি ফুটবল টুর্নামেন্টের স্টেজ থেকে তুলে নিয়ে যায় স্থানীয় বিএনপি নেতা ও খেলার আয়োজক প্রকৌশলী ওসমান গনিকে। ওইসময় একদল সন্ত্রাসি অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে খেলার অনুষ্ঠান তুলে নিয়ে নির্যাতন চালায়। টাকা দিতে অস্বীকার করায় আঘাতের একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে ফেলেন ভিকটিম ওসমান। পরে ওই অবস্থায় ভিকটিমকে রেখে পালিয়ে যান সন্ত্রাসিরা। ঘটনার পর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ওসমান গনিকে স্টেজ থেকে তুলে নেয়ার ঘটনা মুল হোতা সন্ত্রাসি ইসমাইল। ১৭ বছর আগে ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ছিলেন এই ইসমাইল। সেসময় নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রযেছে তার বিরুদ্ধে। হত্যা মামলাসহ চাঁজাবাজি, ভূমি দখল, চুরি-ডাকাতির নানা অভিযোগে অস্ত্রসহ র‌্যাবের হাতে একবার গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি। জামিনে মুক্তি পেয়ে ১/১১ সরকারের আমলে আবুধাবিতে চলে যান ইসমাইল। সেখানে গিয়ে ফেনীর শীর্ষ সন্ত্রাসি নিজাম হাজারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন ইসমাইল। তার কাছ থেকে নেন প্রশিক্ষণ। দেশে এসে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন, নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইসমাইল বাহিনী’।

গত ১৬ আগস্টের পর দেশে এসেই আবারও চাঁদাবাজি, অপহরণ, ভূমিদস্যুতার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি করলেও স্থানীয় বিএনপি ও প্রশাসন নিরব ভূমিকায় রয়েছেন।

সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে একটি অভিযোগ দায়ের করেন ভিকটিম মো. ওসমান গনি। তিনি বিএনপির সরফভাটা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগে ইসমাইল হোসেন (৫০)সহ মোট সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়। ইসমাইল হোসেন তিনি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার পশ্চিম সরফভাটা ইউনিয়নের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। ইসমাইল হোসেন আবুধাবিতে বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা গেছে।

অভিযোগপত্রে বিবরণে বলা হয়, ১৮ জানুয়ারি সরফভাটা ইউনিয়নের ভূমিরখীল খেলার মাঠে কর্ণফুলী ফুটবল একাদশ টুর্নামেন্ট কর্তৃক আয়োজিত ফুটবল ফাইনাল খেলার প্রধান আলোচক ছিলেন মো. ওসমান গনি। ওইদিন বিকেলে চারটায় ২০ জনের একদল সন্ত্রাসি অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যান ওসমানকে। একটি নির্জন বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। ওইসময় কাঁধে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ওসমান। জ্ঞান ফেরার দুইঘন্টা পর আশেপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে বাসায় চলে আসেন তিনি। ওইদিন রাত দশটার দিকে বিএনপির নেতা আবছারের সহযোগিতায় চিকিৎসা নেন ভিকটিম ওসমান।

এদিকে ওইদিন ফুটবল ফাইনাল খেলার স্টেজ থেকে তুলে নেয়ার সময় রাঙ্গুনিয়ার উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, সদস্য সচিব আবু আহমেদ হাসনাত, সরফভাটা ইউনিয়নের বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, ২০০২ সালে বিএনপি কর্মি ভোলাসহ দুই খুনের মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন ইসমাইল হোসেন। ২০০৪ সালে তিনি অস্ত্রসহ র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। এ মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন তিনি। জামিনে মুক্তির পর ১/১১ সময়ে দুবাই চলে যান। সেখানে গিয়ে ফেনীর শীর্ষ সন্ত্রাসি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন ইসমাইল। তার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ফ্রেমবন্দিও হয়েছেন ইসমাইল। তার এসব ছবিগুলো প্রতিবেদক সংগ্রহ করেছেন।

জানতে চাইলে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার অফিস ইনচার্জ (ওসি) জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘ওসমান গনিকে স্টেজ থেকে তুলে নেয়ার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মন্তব্য করুন