
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিনের একটি কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এতে তাকে বলতে শোনা যাচ্ছে প্রেসক্লাবে কে কোন পদ পাবে তা আমি ঠিক করব। যারা আমার কথা শুনবে তারা প্রতিষ্ঠিত হবে, আর যারা শুনবে না তারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। এ সময় তিনি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জহিরুল ইসলামকে নিয়ে কটাক্ষ করেন। তাকে টাউট হিসেবে আখ্যা দেন।
গতকাল বুধবার রাত এগারোটার দিকে এ কলরেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে কাজী সালাউদ্দিনকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে সাংবাদিক ও নাগরিক মহলে। সচেতন মহলের অভিমত, কাজী সালাউদ্দিন একজন বিএনপি নেতা হয়ে কিভাবে সাংবাদিকদের প্রেসক্লাব নিয়ে মন্তব্য করতে পারেন। কিংবা রাজনীতির বাইরে গিয়ে তিনি প্রেস ক্লাবের পদ ভাগাভাগির দায়িত্ব নিতে কখনোই পারেন না। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য যেমন হুমকি তেমনি বিএনপির রাজনীতির জন্য ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার মতো কাজ। এতে সাধারণ মানুষ ধরে নেবে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপিও গণমাধ্যমের গলা টিপে ধরার কাজ করে যাচ্ছে। তারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা বিশ্বাস করে না। যেখানে দলটির শীর্ষ নেতারা গণমাধ্যের অবাধ স্বাধীনতার কথা বলছেন, বিগত সময় সাংবাদিকরা লেখালেখি করতে পারেননি তাদের কলম ভেঙে দেয়া হয়েছে। তারা যেন আওয়ামী লীগের সতেরো বছরের ফাঁস করেন এমন কথা বলছেন। সেখানে কাজী সালাউদ্দিনের মতো উত্তর জেলার নেতা প্রেসক্লাবের ফল ভাগাভাগিতে জড়িয়ে পড়েছেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সাংবাদিকদের জন্য বিভ্রান্তিকর। তার এ মন্তব্যে সাংবাদিকদের গ্রুপিং আরও চরমে পৌছবে বলে মনে করেন অনেকে।
জানা যায়, বুধবার (৭ মে) মধ্যরাতে সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের সদস্য সাংবাদিক ইসমাঈল হোসেন সেলিমকে কল করে প্রেস ক্লাবের আহবায়ক কমিটির আহ্বায়ক আমার দেশের সাংবাদিক জহিরুল ইসলামের সঙ্গ ছাড়তে কাজী সালাউদ্দিন চাপ সৃষ্টি করেন। ওই কল রেকর্ডে সালাউদ্দিনকে বলতে শোনা যায়, তুই রাত এগারোটায় আজাদ ভাইয়ের বাসায় দেখা করবি। তুই যদি আমার কথা শুনোস তাহলে তোর একটা ব্যবস্থা হবে। আর আমার কথা না শুনলে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবি। আমি তোকে পছন্দ করি তাই তোকে কথাটা বললাম। যারা যারা আমার পছন্দের তাদেরকে আমি বলে দিয়েছি। প্রেস ক্লাবে কে কোন পদ পাবে, কাকে কিভাবে সেটিং করতে হবে সেটি আমি জানি। আমি এসব ম্যানেজ করছি।
এদিকে বিএনপি নেতা হুমকিদাতা সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম সীতাকুণ্ড থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৭ মে) রাতে দায়ের করা জিডিতে জহিরুল ইসলাম উল্লেখ করেন, সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের মরহুম কাজী ওসমান গণির দ্বিতীয় ছেলে কাজী মো. সালাউদ্দিন আমার দেশ প্রতিনিধি ও প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক সম্পর্কে নানান কুরুচিপূর্ণ কথা বার্তা ও হুমকি দিয়েছেন। প্রেস ক্লাবের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উত্তর চট্টলা পত্রিকার রিপোর্টার ইসমাইল হোসেন সেলিমের মুঠোফোনে দেয়া ওই হুমকিতে বলা হয় জহিরুল ইসলাম কিভাবে প্রেস ক্লাবের কার্যক্রম পরিচালনা করবে তাও দেখে নেবেন সালাউদ্দীন। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির এ নেতা সাংবাদিক সেলিমকে শাসিয়ে বলেন, আগামীকাল সকাল ১১টার মধ্যে পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সামছুল আলম আজাদের বাসায় গিয়ে দেখা করতে এবং সাংবাদিক জহিরুল ইসলামের আহবায়ক কমিটি থেকে সরে আসতে। এ সময় সালাউদ্দিন সাংবাদিকদের কাকে কোথায় সেট করে দিতে হবে তাও আমি জানি বলে হুমকি প্রদান করেন বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির এই নেতার এমন আচরণে সীতাকুণ্ডে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রেস ক্লাবের যুগ্ম আহবায়ক দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম বিএসসি ও সদস্য সচিব দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি সাংবাদিক সুলাইমান মেহেদীসহ সাংবাদিক নেতারা বলেন, প্রেস ক্লাব নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে আদর্শিক দ্বন্দ্ব কিংবা মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু তাতে বহিরাগত কারো অযাচিত হস্তক্ষেপ অথবা আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন চেষ্টা সাংবাদিক সমাজ কখনো মেনে নেবে না। তারা অবিলম্বে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিনকে এহেন আচরণের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় এ নেতার বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ নিউজ বর্জন করা হবে।
সাংবাদিক ইসমাঈল হোসেন সেলিম বলেন, আমাকে তুই তোকারি করেছে কাজী সালাউদ্দিন। একজন সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘ দিন কাজ করছি সীতাকুণ্ড জনপদে। অথচ তিনি কার সাথে কি ব্যবহার করবেন তাও জানেন না। আমি রীতিমতো হতভম্ব। তিনি আরও বলেন, কাজী সালাউদ্দিন ভাই আমাকে ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক বলে ব্যাঙ্গ করেন। তিনি বলেন, তুই আমার সাথে আসলাম চৌধুরী ভাইয়ের কাছে যাবি, তারপর দেখবি ওনি কাকে সমর্থন দিচ্ছে। ওনি ফোরকান আবুকে সমর্থন দিচ্ছে। এরপর তুই কান ধরে আসতে হবে সেখান থেকে।
জানতে চাইলে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। আপনি আমাকে পরে কল করুন।
এ বিষয়ে সীতাকুণ্ড থানার ওসি মুজিবুর রহমান বলেন, আমার দেশের সাংবাদিক জহিরুল ইসলামকে বিএনপি নেতার হুমকির বিষয়ে একটি জিডি নথিভুক্ত হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। কেন তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকার বলেন, সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাব বিএনপির কোন অঙ্গ সংগঠন নয়। তাই এ সংগঠন নিয়ে তিনি মাথা ঘামাতে পারেন না, এটি তার সাংগঠনিক কাজ নয়। বিষয়টি আমরা দেখছি।