নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, প্রকৃত গণতন্ত্র মানেই হচ্ছে জনগণের ক্ষমতা বাড়ানো এবং সরকারের ক্ষমতা কমানো।আগামী দিনে বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনায় এলে ব্যবসার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করে এমন সব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও 'ব্রোকারিজ' প্রথা উপড়ে ফেলা হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণমুক্ত ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে।
তিনি সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে হোটেল রেডিসন ব্লু'র মেজবান হলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে ব্যবসা বাণিজ্য অর্থনীতি ও বিনিয়োগ নিয়ে আয়োজিত "বাণিজ্য সংলাপ" অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সংলাপে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি প্রসঙ্গে আমির খসরু বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সাধারণ নাগরিক বা ব্যবসায়ীদের ফিজিক্যাল কন্টাক্ট (সরাসরি যোগাযোগ) যতো কমবে, দুর্নীতি ততোই হ্রাস পাবে। আমরা এমন এক ব্যবস্থা করতে চাই যেখানে আমদানিকৃত মালপত্র ছাড় করতে কাস্টমস অফিসারের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হবে না। উন্নত বিশ্বের মতো স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে সব পরীক্ষা সম্পন্ন হবে। তিনি বিদেশে কোনো অফিসে না গিয়ে ঘরে বসেই সব সার্টিফিকেট বা অনুমোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের গ্রামের কামার কুমার বা শীতলপাটি শিল্পীদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে হবে। অ্যামাজন বা আন্তর্জাতিক বাজারে যেন তারা পণ্য বিক্রি করতে পারে, সে জন্য ডিজাইনার সাপোর্ট ও ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং শহরমুখী মানুষের ঢল কমবে।
রেমিট্যান্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের রেমিট্যান্স ২৫ বিলিয়ন ডলারের আশেপাশে। কিন্তু সঠিক পলিসি এবং যুব সমাজকে আইটি সেক্টরে (কল সেন্টার, মাইক্রোসফট বা অ্যামাজনের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার উপযোগী) দক্ষ করে তুলতে পারলে এই আয় ৫০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
পুঁজিবাজার ও ট্রিলিয়ন ডলার ইকোনমি দেশের ভঙ্গুর পুঁজিবাজার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমির খসরু বলেন, দেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ধ্বংস হয়ে গেছে। জিডিপির তুলনায় আমাদের মার্কেট খুবই ছোট। আন্তর্জাতিক ফান্ড ম্যানেজারদের সাথে আমাদের কথা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু তার আগে আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। ক্যাপিটাল মার্কেট ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার ছাড়া ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়।
প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রসঙ্গে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক, এসইসি বা বিটিআরসি'র মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করে পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালনা করতে হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা কোনো বিশেষ গোষ্ঠী বা পৃষ্ঠপোষকতার অর্থনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই সবার জন্য সমান সুযোগ বা 'লেভেল প্লেইং ফিল্ড'। চুরির আইন দিয়ে নয়, বরং সিস্টেমের পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা অনিয়ম বন্ধ করতে চাই।
বক্তব্য শেষে তিনি উপস্থিত ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন। তিনি দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে ব্যবসায়ীদের নির্ভয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তারেক রহমান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রেখে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছেন। এটা হচ্ছে বড় সফলতা। একজন নেতা বিদেশে থেকে এতবড় ভূমিকা পালন করতে পারেন এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সবচেয়ে বড় কাজ বিএনপিকে শুধু ঐক্যব্ধ রাখেননি। বিএনপিকে একটি শক্তিশালী দলে পরিণত করেছেন।বিএনপির নেতাকর্মীরা জলে পুড়ে খাটি সোনায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে কেবল দলের নয় দেশের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা চাকরি হারিয়েছে, ব্যবসা হারিয়েছে, অনেকে পঙ্গু হয়েছে। আগামী দিনের যে রাজনীতি সেখানে বাংলাদেশের মানুষের যাতে রাজনীতি হয় সেটা আমাদের দেখতে হবে।
নির্বাচন পিছিয়ে যাবে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন পেছাবে না। কেউ নিজের স্বার্থে পেছাতে চাইলে বাংলাদেশেরন মানুষ সেটা মেনে নেবে না। তবে একটা গোষ্ঠী যারা নির্বাচন চায়না তাদের সম্পর্কে তো জনগণের এই সন্দেহ আছে। নির্বাচন না হলে দেশের মানুষ দেশের মালিকানা ফিরিয়ে না পেলে নির্বাচিত সংসদ না থাকলে যারা লাভবান হবে মনে করছে তাদের সম্পর্কে জনগণের সন্দেহ রয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলী আহম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বানিজ্য সংলাপে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ব্যবসায়ী নেতা সরওয়ার জামান নিজাম, চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল আলম, সংলাপে অংশ নেন চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ সালাম, পিএইচপি গ্রুপের পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, বিজিএমইএ'র সিনিয়র সহ সভাপতি সেলিম রহমান, প্যাসিফিক জিন্সের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, আন্তঃ জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কপিল উদ্দিন, বিজিএপিএমইএ'র সভাপতি মো. শহীদ উল্লাহ, শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক আমীরুল হক, খাতুনগন্জ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মীর আবদুস সালাম, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল মান্নান, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তহিনুর আলম টিটু, মাদার স্টীল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মাষ্টার আবুল কাশেম, বিএনও লুব্রুকেন্টের পরিচালক সালাউদ্দিন ইউছুপ, সিএনজি ফিলিং স্টেশন সমিতির যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম, জুনিয়র চেম্বারের সভাপতি জোনায়েদ আহমেদ রাহাত, ফার্নিচার প্রস্তুত কারক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান, রাঙ্গামাটি চেম্বারের সভাপতি এড. মামুনুর রশীদ, চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক মানিকুর রহমান, বান্দরবান চেম্বারের সদস্য জসিম উদ্দিন প্রমুখ।