নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সারাদেশের ন্যায় আগামী ১ জুন (শনিবার) চট্টগ্রাম জেলায় অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন-২০২৪। অনুষ্ঠিতব্য ক্যাম্পেইনে ৬-১১ মাস বয়সী ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ৮ লাখ ৩২ হাজার ১৭৯ জন শিশুকে একটি করে নীল ও লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঐ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জেলার স্থায়ী, ভ্রাম্যমান ও অস্থায়ী কেন্দ্রে ৬-১১ মাস বয়সী শিশুকে একটি করে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) ও ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানো হবে।
জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময়ে জেলার ১৫ উপজেলায় ২’শ ইউনিয়নের ৬’শ ওয়ার্ড, ১৬টি স্থায়ী কেন্দ্র, ১৫টি ভ্রাম্যমান কেন্দ্র ও ৪ হাজার ৮’শ অস্থায়ী কেন্দ্রে মোট ৮ লাখ ২০ হাজার ৪৮০ জন শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে জেলায় ৬-১১ মাস বয়সী ৯৪ হাজার ৪৭৭ জন শিশুকে একটি নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) ও ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭ লাখ ৩৭ হাজার ৭০২ জন শিশুকে একটি লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় আয়োজিত জেলা পর্যায়ের এডভোকেসী ও পরিকল্পনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় পুষ্টি সেবার বাস্তবায়নে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এডভোকেসী সভার আয়োজন করেন।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওসিএস ডা. মোহাম্মদ নওশাদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস. এম শফিউল্লাহ। রিসোর্স পারসন হিসেবে বক্তব্য রাখেন পরিবার পরিকল্পনা চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জেবিন চৌধুরী, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ ফরিদুল আলম, মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক মাধবী বড়–য়া, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম খীসা, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াজেদ চৌধুরী অভি, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের এমওডিসি ডা. মোঃ নুরুল হায়দার, ইউনিসেফ’র নিউট্রিশন অফিসার ডা. উবা সুই ও ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ’র এরিয়া প্রোগ্রাম ম্যানেজার জনি রোজারিও। সভায় চট্টগ্রাম জেলার ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ ও সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এডভোকেসী ও পরিকল্পনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস. এম শফিউল্লাহ বলেন, ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল শিশুর অপুষ্টি, অন্ধত্ব প্রতিরোধ, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত, হাম ও ডায়রিয়াজনিত মৃত্যুর হার হ্রাসসহ সকল ধরনের মৃত্যুর হার হ্রাস করে। পরিবারের রান্নায় ভিটাামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ ভোজ্য তেল ব্যবহার শিশুর জন্য যথেষ্ট উপকারী। মা ও শিশুর পুষ্টির জন্য গর্র্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি করে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ খাবার খেতে দিতে হবে। শিশুর জন্মের সাথে সাথে মায়ের বুকের শাল দুধ খাওয়াতে হবে এবং ৬ মাস পর্যন্ত বুকের দুধ ছাড়া অন্য কিছু দেয়া যাবে না। শিশুর বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলে দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি পরিমাণমত ঘরে তৈরি পুষ্টি সমৃদ্ধ সুষম খাবার খাওয়াতে হবে। কোন শিশু ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানো থেকে যাতে বাদ না যায় সে দিকে সবাইকে অবশ্যই নজর রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সিভিল সার্জন বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে ৬-১১ মাস বয়সী মোট ৯৪ হাজার ১৯৫ জন শিশুকে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (১ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানো হয়েছিল, চাহিদা ছিল ৯৬ হাজার ৭৯০ জন, যার অর্জিত হার ৯৭ শতাংশ এবং ১২-৫৯ মাস বয়সী ৭ লাখ ২১ হাজার ৫১৫ জন শিশুকে একটি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল (২ লক্ষ আই.ইউ) খাওয়ানো হয়েছিল, চাহিদা ছিল ৭ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৫ জন, যার অর্জিত হার ৯৯ শতাংশ। জেলার বাইরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিতব্য এ ক্যাম্পেইন সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
আগামী ১ জুন শনিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উপজেলাগুলোতে ৫৪ জন স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ২০০ জন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, ৫৪০ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৭৪৮ জন পঃ পঃ সহকারী, ১৯৬ জন পঃ পঃ পরিদর্শক, ৯ হাজার ৬৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক, ১৫ জন স্যানিটারী ইন্সপেক্টর, ৫১১ জন সিএইচসিপি ও ৮৫ জন স্যাকমো জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনে নিয়োজিত থাকবে। ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।
তিনি বলেন, এ কর্মসুচী সফল করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ৬-৫৯ মাস বয়সী সকল শিশু যাতে ঐদিন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাসসুল পায় সে লক্ষ্যে সর্বত্র মাইকিং করে জনগণকে জানান দেয়া হবে। ভ্রমণে থাকাকালীন সময়েও রেল স্টেশন, বাস টার্মিনাল, ফেরী ঘাট ও লঞ্চ ঘাটে অবস্থিত টিকা কেন্দ্রসহ যে কোন টিকাদান কেন্দ্র থেকে শিশুকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়াতে পারবে। জাতীয় ভিটামিন ‘এ’ প্লাস ক্যাম্পেইনের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রাখতে সরকারী প্রতিষ্ঠান, জনপ্রতিনিধি, আনসার-ভিডিপি ও এনজিও সংস্থাগুলো কাজ করবে। সরকারী কর্মকর্তা, মাঠকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী শিশুদেরকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকবে। সকলের আন্তরিক সহযোগিতা পেলে এ কর্মসূচী সফল হবে।