
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাংবাদিকদের শীর্ষ নেতা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ও বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর জানাজা আজ ২৫ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বাদে আছর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্ত্বরে সম্পন্ন হয়।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে চট্টগ্রামে সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ও বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার সহকর্মীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও তার গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন সহস্রাধিক মানুষ।
মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর পান্থপথে বিআরবি হাসপাতালে মারা যান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী। পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রয়াত সাংবাদিকের কফিন চাঁদপুরে গ্রামের বাড়িতে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক দৈনিক সংগ্রামে কর্মরত ছিলেন। সেখানে বিশেষ প্রতিনিধি, চিফ রিপোর্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
চাঁদপুরের গুবিন্দিয়া গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণকারী রুহুল আমিন গাজী শিক্ষাজীবনে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর দৈনিক ইত্তেফাকে ১৯৭৪ সালে রিপোর্টার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।
তিনি বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। শেখ হাসিনার সরকারের সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন টানা ১৮ মাসের বেশি সময়। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও জামিন পাননি তিনি। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, উচ্চ ডায়াবেটিক, ব্যাক পেইন, লবণ ঘাটতিসসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে দুই মেয়ে রেখে গেছেন।
জানাজায় ইমামতি করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ, চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
জানাজা শুরুর আগে আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, রুহুল আমিন গাজী আমৃত্যু জনকল্যাণমুখী সাংবাদিকতা করেছেন। হয়ে উঠেছিলেন সর্বসাধারণের মধ্যমণি। বলা চলে, সারা দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রুহুল আমিন গাজী। নক্ষত্রের বিদায়ে শোকের সাগরে নিমজ্জিত এখন সারা দেশ। বিশ্বের মানচিত্রে যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, মানুষকে ভালোবাসা বা মানুষের জন্য কাজ করে যায় নিরন্তর। তাদের মৃত্যুর পর পৃথিবীর মাটি ‘নাড়ি ছেঁড়া’ ব্যথা অনুভব করে। রুহুল আমিন গাজী তেমনই একজন। তিনি মানুষের মনে দাগ কেটে গেছেন। শুধু নিজের স্বজন নয়; যেখানে যেখানে তিনি পা রেখেছিলেন সেখানেই তৈরি করেছেন নিজের ভালোবাসার আলাদা জগৎ।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনওয়াজ বলেন, রুহুল আমিন গাজী সারাজীবন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদকর্মীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে বিগত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছর স্বৈরাচারের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সরব ছিলেন। সাংবাদিকতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র রুহুল আমিন গাজী। তাঁর বিদায় হলো। তিনি অন্যায়ের সাথে আপস না করা এক নির্ভীক সাংবাদিক। রুহুল আমিন গাজী ভাই প্রমাণ করলেন তিনি অনেকের মনোরাজ্যে সুন্দর জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন। সাংবাদিকতা অনেকেই করে। কিন্তু নিজের কর্মক্ষেত্রের সীমানা ডিঙিয়ে অন্য অনেকের মাঝে একজন হয়ে উঠা একটি কঠিন কাজ। খুব অল্প সময়ে রুহুল আমিন গাজী ভাই সেই কাজটি করতে পেরেছিলেন শুধু ভালোবাসা দিয়ে।
জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিউজগার্ডেন সম্পাদক ইসকান্দর আলী চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সমবায় সমিতি লি: এর সভপতি মুস্তফা নঈম, বিএফইউজে সহ সভাপতি জাহিদুল করিম কচি, সিএমইইজে’র সাবেক সভাপতি শামসুল হক হায়দরী. মাঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম, মোশারফ হোসেন দিপ্তী, এড: মফিজ উল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, মোহাম্মদ উল্লাহ, কামরুল ইসলাম, ডা: সরওয়ার আলম, মাহবুবুর রহমান, কামরুল হুদা, সাইফুল ইসলাম শিল্পী, আরিফুর রহমান, আমিনুল ইসলাম, মাহবুব রশিদ, মাহবুবুল মাওলা রিপন, হাসান মকুল, মজুমদার নাজিম উদ্দিন, আবু সুফিয়ান, শহিদুল ইসলাম, তোহা, ফজলুর রহমান, আলমগীর নূর, মুহাম্মদ ছাগীর, সোহাগ কুমার বিশ্বাস, ওয়াহিদুজ্জামান, বজলুল হক, আরিয়েন লেনিন, আবু হেনা খোকন, এস এম পিন্টু, কামাল পারভেজ, মোহাম্মদ আলী, ইসমাইল ইমন, জাহাঙ্গীর আলম, মোরশেদু আলম, ইমতিয়াজ ফারুকী, রফিকুল ইসলাম, মিনহাজ ঝন্টু, আলী হোসেন, শফিক, তৌহিদ সহ রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।