
এডভোকেট মো: আমান উল্লাহ: সম্প্রতি দেশের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বর্তমান দেশপ্রেমিক সরকারকে অসাংবিধানিক বলায় আমার এই লেখা।
প্রথমে পরিষ্কার হওয়া দরকার সংবিধান জনগণের জন্য, না, জনগণ সংবিধানের জন্য? “জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস” সেই হিসাবে সংবিধান জনগনের জন্য এবং জনগণ দ্বারা নির্ধারিত। সংবিধান কি? সংবিধান হচ্ছে দেশের প্রধান আইন। আইনের অনেক শব্দার্থ থাকলেও আইনের অতি ছোট্ট একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে “সর্বোচ্চ প্রতিকারই আইন”। আইনের একটি মতবাদ হচ্ছে “Ignorance of law is no excuse” অর্থাৎ কেউ যদি বলে আমি আইন জানিনা, সেই কারণে তার কোন ক্ষমা নেই। উক্ত মতবাদটি মতে নাবালক এবং পাগল ছাড়া সবাই আইন জানে। কারণ আইন অতি প্রাকৃতিক ব্যাপার। এটা মূলত বিবেক গত ব্যাপার। যার বিবেক আছে সে কোনটি আইনি কোনটি বে-আইনি সেটা বুঝতে পারে, ধরতে পারে। এটার জন্য আইন বিশারদ হতে হয় না। এখন বলা যাক বিবেক গত সব মতামতই কি আইন? বিবেক গত মতামত দুভাবে বিভক্ত। প্রথমত ধনাত্মক মতামত, দ্বিতীয়তঃ ঋণাত্মক মতামত। বিবেকের যেসব মতামত ভালো বিবেক (good conscience), সত্যতা (bonafide), সততা (fairness) স্বচ্ছতা (transparency), বিচারিকভাব (judicially), আইনগতভাবে (juristically), যুক্তিসঙ্গ ভাবে (reasonability), যৌক্তিকতা (rationality), ইত্যাদি ফ্যাক্টর দ্বারা পরিশুদ্ধ সেগুলোই ধনাত্মক মতামত বা বিবেক প্রসূত মতামত বা আইনগত মতামত। আর বিবেকের যেসব মতামত বিদ্বেষ (malice) অথবা বিদ্বেষপূর্ণ ভাবে নির্ধারিত (maliciously thought), অসততা (unfairness) অসৎ উদ্দেশ্য (mala fide intention) ইত্যাদি দ্বারা দূষিত সেগুলো ঋণাত্মক মতামত বা বিবেক বর্জিত মতামত, যেগুলি বেআইনি মতামত ও বটে।
৯০ এর গন আন্দোলনে তৎকালীন স্বৈর শাসককে হটিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার টি সেই জনগণের ধনাত্মক তথা বিবেক প্রসূত মতামতের প্রতিফলন। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক নিরপেক্ষ সরকার গঠনের বিধানটি দেশের সর্বস্তরের জনগণের সামগ্রিকভাবে বিবেক প্রসূত মতামত পূর্ণ বিধি ব্যবস্থা হওয়ায় জনগণের চাহিত মতে সবার ঐক্য মতের ভিত্তিতে পরবর্তীতে লিখিত সংবিধানে সংযোজিত করা হয়। আর সংবিধান অর্থাৎ দেশের প্রধান আইন হচ্ছে দেশের জন্য এবং জনগণের জন্য জনগণের সামগ্রিক ধনাত্মক তথা বিবেক প্রসূত মতামত পূর্ণ বিধান। শুধুমাত্র একটি লিখিত বই কিংবা পুস্তিকা সংবিধান নয়, যদি সেটাতে জনগণের সামগ্রিক ধনাত্মক মতামত পূর্ণ বিধান যথাযত ভাবে প্রতিফলিত না হয়।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে সর্বস্তরের ছাত্র জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে পরাস্ত ও সমূলে উৎপাটিত পলাতক স্বৈরাচারী সরকার তাদের বিগত ১৬ বৎসরের দুঃশাসনের আমলে জনগণের সেই বিবেক প্রসূত ধনাত্মক মতামত পূর্ণ বিধানকে উপেক্ষা করে অসৎ উদ্দেশ্যে লিখিত সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি মুছে ফেলে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার ব্যবস্থা করে লেজুড় ভিত্তিক প্রশাসনের সহায়তায় জাতীয় নির্বাচনে নিশি রাতের ভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয়করণ করে তাদের লেজুড় ভিত্তিক প্রশাসনের সহায়তায় ভোট ডাকাতি, খুন, গুম, মামলা, হামলা, আয়না ঘর, শেয়ারবাজার লুট, ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, ব্যাংক লোপাট, বিদেশে বেগম পাড়া গঠন, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে তো বটেই নিজেদের দলের মধ্যেও পরিবার তন্ত্র এবং বৈষম্যতা সৃষ্টি করে যার পর নাই কুকর্ম করেছে। যার ফলে বিগত পাঁচ আগস্ট ২০২৪ এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সমগ্র বাংলাদেশের সর্বস্তরের ছাত্র জনতার মহা বিজয় সাধিত হয়। এই সমগ্র দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার সামগ্রিকভাবে বিবেক প্রসূত এবং ধনাত্মক মতামতের ভিত্তিতেই বর্তমান সরকার গঠিত হয়েছে। ফলে এটি অবশ্যই সাংবিধানিক, কারণ সংবিধান হচ্ছে জনগণের সামগ্রিক বিবেচনা প্রসূত ধনাত্মক বিবেচনা পূর্ণ মতামত, এর বাইরে কিছু নয়। যারা এর বিরোধিতা করেছে বা বিরোধিতা করার ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে সত্তর আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। লেখক: সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি।