নিউজগার্ডেন ডেস্ক: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত চট্টগ্রামের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বাণিজ্য সমৃদ্ধ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
সোমবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে চসিকের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের গঠিত কমিটি’র সদস্যদের এক সভায় চট্টগ্রামকে ঘিরে তাঁর পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
ডা. শাহাদাত বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি মূলত তিনটি সেক্টরের উপর নির্ভরশীল। চার নাম্বার আরেকটি সেক্টরকে কিন্তু আমরা চট্টগ্রামের মাধ্যমে উঠিয়ে আনতে পারি। সেটা হচ্ছে পর্যটন খাত। যে পর্যটন খাত দিয়ে কিন্তু আমাদের আশেপাশের সার্কভুক্ত সবগুলো দেশ সমৃদ্ধশালী হয়ে গেছে। অথচ এই পর্যটন খাতটাকে কিন্তু আমরা সেভাবে বিকশিত করতে পারিনি। চট্টগ্রামকে ঘিরেই কিন্তু বাংলাদেশের পর্যটনখাত নির্ভরশীল। আপনি যদি বাংলাদেশে কোথাও বিনোদনের জন্য ঘুরতে যেতে চান প্রথমেই চিন্তা করবেন কক্সবাজারের কথা। এরপরে বান্দরবান, রাঙ্গামাটি অথবা খাগড়াছড়ি। এর বাহিরেও চট্টগ্রামে আরো অনেক পর্যটন কেন্দ্র আছে।
“এ কারণে আমরা যদি চট্টগ্রামের পর্যটনখাতের বিকাশ ঘটাতে পারি তাহলে একদিকে দেশের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে, অন্যদিকে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। চট্টগ্রামের অবকাঠামো যদি আমরা ডেভেলাপ করতে না পারি তাহলে ইনফ্যাক্ট আমরা বাংলাদেশকে বাঁচাতে পারবো না। দেশের অর্থনৈতিক যে একটা চাকা তা সচল করার জন্য চট্টগ্রামকে সুন্দর করতে হবে।”
অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থেই চট্টগ্রামের উন্নয়ন প্রয়োজন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর বাংলাদেশের আয়ের এত বড় একটি সেক্টর, অথচ চট্টগ্রামের বাইরে কিন্তু বন্দরের টাকার সিংহভাগ চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিভিন্ন জায়গায় অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করার জন্য যেখানে ঘাটতি হচ্ছে সে জায়গায় বন্দরের টাকা চলে যাচ্ছে, যদিও বন্দর চট্টগ্রামের। কাজেই চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পটাকে চিন্তা করে আমাদের কাজ করতে হবে। এখানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন আছে, এখানে কন্টেইনার ইয়ার্ডগুলো আছে। এখানে আপনার বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির একটা ব্যাপার আছে এবং এখানে ট্রেড সেন্টার আছে। ব্যবসায়িক হাব হিসেবেও কিন্তু চট্টগ্রাম অত্যন্ত পরিচিত। কাজেই সব মিলিয়ে ভৌগোলিক কারণে আজকে চট্টগ্রাম কিন্তু অত্যন্ত ইম্পর্টেন্ট একটা জোনে আছে।”
চট্টগ্রামের বিকাশে সিটি গভর্মেন্ট দরকার দাবি করে মেয়র বলেন, সেন্ট্রাল গভমেন্ট কে আমরা অলরেডি বুঝিয়েছি যে একটা জিনিস আমাদের খুব দরকার সেটা হচ্ছে সিটি গভর্মেন্ট বা, নগর সরকার। এই যে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি আপনার যারা এসেছেন বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আপনারা বলছেন যে এটার-ওটার অনুমতি লাগবে বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও নেই। অথচ সিটি গভর্মেন্ট যদি থাকতো তাহলে সিটি মেয়র হিসেবে আমি আজকে সব জায়গায় অনুমোদনের বিষয়টি সহজে করিয়ে নিতে পারতাম।
চট্টগ্রামের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, সিটি গভর্মেন্ট না থাকায় আমাদের যে লিমিটেশন সেই লিমিটেশনকে জয় করতে হলে আমাদের আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতার উপর আর কিছু নেই। আমাদের যে ঐক্যবদ্ধতা, আমাদের যে হৃদ্যতা, এই হৃদ্ধতা-ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে আমরা আসুন সিটি গভর্মেন্ট না হওয়া পর্যন্ত আমরা মিলেমিশে সবাই একসাথে কাজ করি।
শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যবসায়ীদের সাথে সভা করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, আমি সবগুলো ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথে বসব। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ করে নালা ও রাস্তার পাশের দোকানগুলোতে ময়লার বিন রাখা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, বিন না থাকায় অনেকে ময়লাগুলো নিয়ে নালায়, রাস্তায়, খালে ফেলছে। আমি কালকে নিজ হাতে নালা থেকে ময়লা তুললাম, অথচ ময়লা ফেলতে পারছি না। কারণ দোকানের সামনে বিন নেই। বিন রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। গতকাল ৬ নং ওয়ার্ডে বড় কবরস্থানের পাশে কৃষিখালে গিয়ে দেখলাম, খালটি ডাস্টবিন হয়ে গেছে। পানি যাবে কিভাবে? এটা বাসাবাড়ি আশেপাশের সব মানুষ বোধহয় ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে না। এর ফেলছে খালে, মনে করে এটাই ডাস্টবিন। এইভাবে তো আসলে চলতে পারে না। ওখানে ডাস্টবিন করে দিতে বলেছি।
“আপনারা ধনাঢ্য ব্যক্তি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা করুন। যোগাযোগ করে দেখি তাদের থেকে স্পন্সর পাওয়া যায় কী না। কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে উনাদের থেকে ময়লা সংগ্রহ করার জন্য বিন সংগ্রহ করা যেতে পারে। সমাজের উন্নয়নে সমাজের সবাইকে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। পলিথিনের বিকল্প অনুসন্ধান করতে হবে আমাদের। পলিথিন চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ।”
পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম নিয়ে মেয়র বলেন, ডিসি মহোদয়ের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে আমি ওনাকে বলেছি যেখানে খাস জায়গা আছে অন্ততপক্ষে আমাকে এগুলো দিন। আমি সেখানে ডাম্পিং স্টেশনগুলো করতে চাই। আমি চাই না যে ময়লা আবর্জনার গন্ধ মানুষের নাকের মধ্যে ঢুকুক। শুধু গন্ধ না, পচনশীল বর্জ্য থেকে অনেক ফ্লাইস-বর্ন-ডিজিজ হচ্ছে। সেগুলো বন্ধ করতে পরিচ্ছন্ন বিভাগের সক্ষমতা বাড়াবো। আমাদের যে ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন, আপনারা রাজপথে একটু স্ট্রংলি একটিভ হন। যারা ইচ্ছে করে ময়লা ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।
বিপ্লব উদ্যানসহ চসিকের স্থাপনাগুলোর আয় যাচাই করার ঘোষণা দিয়ে মেয়র বলেন, যে জায়গাগুলো থেকে ইনকাম দেওয়ার কথা সেখানে যদি আমরা ইনকাম না পাই তাহলে সিটি কর্পোরেশন আমি চালাবো কিভাবে? আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে আমি একটা ডায়ালাইসিস সেন্টার করব পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে যেখানে জনগণ কম টাকায় সেবা পাবে। তো সেটা আমি করতে পারছি না। আমার ইচ্ছা একটা চাইল্ড কেয়ার সেন্টার করব, আমি প্রতিটা ওয়ার্ড ওয়ার্ডে আরবান হেলথ সেন্টারগুলো আছে এগুলোকে একটু সমৃদ্ধ করব। সেখানে ম্যাটারনাল ফ্যাসিলিটিস, চাইল্ড ফ্যাসিলিটিস, প্রাইমারি হেলথকেয়ার পাবে জনগণ। এগুলিতে আমি করতে পারছি না।
“বিপ্লব উদ্যানে আমরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনারা জানেন আমি গত ৭ই নভেম্বর সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখলাম যে একটা হরিলুট হয়েছে। আগের মেয়ররা একেকজন অনেক টাকা নিয়ে গেছেন বিপ্লব উদ্যান থেকে। অথচ সিটি কর্পোরেশন একটা টাকাও পায়নি। চুক্তি করেছে বছরে মাত্র এক লক্ষ টাকা দিবে তাও বছরে। ইতিমধ্যে আপনারা জেনেছেন যে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি যেটি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের টাকা দিয়ে করা সেটা বেদখল হয়ে গেছে। শপিং কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মার্কেটেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অসম চুক্তি করে হরিলুট করা হয়েছে। আমি প্রত্যেকটা মার্কেটের বিষয়ে যাচাই-বাছাই করব এবং রাজস্ব আহরণের চেষ্টা করব।”
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিনসহ চসিকের বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।