অনিয়মের খনি কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানী

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানী যেন অনিয়মের খনি। এখানে মানা হয় না কোনো নিয়ম। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ২২ হাজার আবেদনকারী গ্যাস-সংযোগের জন্য কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে জমা দিয়েছিলেন অন্তত ২৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে সরকার আবাসিক বাসাবাড়িতে গ্যাসসংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় তারা আর সংযোগ পাননি। গ্রাহকের কাজ থেকে ২৫ কোটি টাকা নিয়ে ‘চুপচাপ’ তারা। আবেদনকারী ব্যক্তিরা দিনের পর দিন কর্ণফুলীতে ঘুরেও জানতে পারেননি, তারা আবেদনের টাকা ফেরত পাবেন কি না। এ ছাড়া আবার দক্ষ কর্মকর্তাদের সরিয়ে পছন্দের ব্যক্তিদের বিভিন্ন পদে বসানো হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। যোগ্য কর্মকর্তাদের দেয়া হয়নি পদোন্নতি। নিয়োগেও করা হয় নিয়মের ব্যত্যয়।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তদন্তে নামে কোম্পানির তদারক সংস্থা পেট্রোবাংলা। চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। প্রতিবেদনে কেজিডিসিএলের সাবেক এমডি এম এ মাজেদসহ বেশ কয়েক কর্মকর্তাকে দায়ী করে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে ছিলেন। তবে অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের সরানো হয়, এমন কথা অফিস আদেশে লেখা হয়নি তখন।

কেজিডিসিএল প্রায় এক ডজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ। এসব অভিযোগের প্রমাণও পেয়েছে পেট্রোবাংলার উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। শিল্প-কারখানায় গ্যাস চুরি, নিয়োগ-বদলি, পদোন্নতিতে অনিয়ম-দুর্নীতিসহ ১২টি অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করেছে কমিটি। তদন্তে পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তার নির্দেশে কেজিডিসিএলে রীতিমতো সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি-অনিয়ম করা হয় বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশও করা হয়। কিন্তু সেই সুপারিশ আলোর মুখ দেখেনি।

বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে পেট্রোবাংলার গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সংস্থার পরিচালক (পরিকল্পনা) আলী ইকবাল মো. নুরুল্লাহ। এছাড়া মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. নজরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) ডিএম জোবায়েদ হোসেনকে সদস্য ও মহাব্যবস্থাপক (সংস্থাপন) মো. আমজাদ হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়।

তদন্ত কমিটি ২০২২ সালের মাঝামাঝি অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে। কমিটি যাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন-প্রতিষ্ঠানের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) (তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক-বিপণন (দক্ষিণ) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান, মহাব্যবস্থাপক (কোম্পানি সচিব) মো. ফিরোজ খান, মহাব্যবস্থাপক (বিপণন-উত্তর) মো. শফিউল আজম খান, ব্যবস্থাপক বাসুদেব বিশ্বাস, মো. হাবিবুল গণি, উপমহাব্যবস্থাপক এজেএম ছালেহ উদ্দিন সারওয়ার প্রমুখ। কমিটির সুপারিশের দেড় বছর পরও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ৩১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘জনবল স্বল্পতার কারণে মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুর রহমানকে ৩টি বিভাগ-বিপণন-দক্ষিণ, ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসেস ও অপারেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কোম্পানিতে যোগ্যতাসম্পন্ন বেশ কয়েকজন উপ-মহাব্যবস্থাপক থাকলেও আমিনুর রহমানকে একাই ৩টি মহাব্যবস্থাপক পদে এবং শুধু শফিউল আজমকে প্রকল্প পরিচালক এবং ১টি মহাব্যবস্থাপক পদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

তদন্ত কমিটি বলেছে, অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিয়মবহির্ভূতভাবে একই ব্যক্তিকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন এবং বিনা কারণে কোম্পানির মিটার পরীক্ষণ কমিটিসহ বিভিন্ন গুররুত্বপূর্ণ কমিটি পরিবর্তন করে বারবার কমিটি পুনর্গঠন উদ্দেশ্যমূলক। অন্যদিকে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, ‘আমিনুর রহমান পেট্রোবাংলার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ টিভি সাংবাদকর্মীকে ঘুষ দিতে গমন করেন। তারপরও তার বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয়নি বরং তাকে তিনটি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, মহাব্যবস্থাপক আমিনুর রহমান কেজিডিসিএল’র দীর্ঘদিনের লুটপাটকারী সিন্ডিকেট চক্রের অন্যতন সদস্য। মেসার্স জিন্স এক্সপ্রেস লিমিটেডের শিল্প ও ক্যাপটিভ সংযোগের ক্ষেত্রে বিশাল জালিয়াতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। বকেয়ার দায়ে কোম্পানির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা অবস্থায় গ্যাস ব্যবহারের সুযোগ করে দিতেও তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন।

মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জানান, ‘রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়া মনিরুজ্জামান নামে একজন ডাইরেক্টর টাকা খাওয়ার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। টাকা না দেওয়াতে আমার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে আরেকটা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে কোনো কিছু না পাওয়াতে আমাদের রিলিজ দেওয়া হবে।’

তদন্ত কমিটি বলেছে, গ্যাস বিপণন নীতিমালা-২০১৪ ও বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হতে জারি করা পরিপত্রের ব্যত্যয় ঘটিয়ে, নিয়মানুযায়ী বকেয়া গ্যাস বিল আদায় না করে এবং কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে নতুন সংযোগ বা পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে নিয়ম লঙ্ঘিত হয়েছে। অপরদিকে কোম্পানি তথা রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এজন্য দায়ী কেজিডিসিএলের বিপণন-দক্ষিণ ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌ. মো. আমিনুর রহমান, বিপণন-উত্তর ডিভিশনের মহাব্যবস্থাপক (চ.দা) প্রকৌ. সফিউল আজম খান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ মাজেদ। এছাড়া ফিরোজ খান কেজিডিসিএলে মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) হিসাবে প্রায় দীর্ঘ ৭ বছর প্রেষণে কর্মরত থেকে নিয়মবহির্ভূত ও ইচ্ছামাফিক কর্মকাণ্ড চালাতে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তিনি ওই সিন্ডিকেটের মূল পরিকল্পনাকারী হিসাবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন।

কোম্পানিতে যোগ্যতাসম্পন্ন কারিগরি কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য একই ব্যক্তিকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন; কোম্পানির বিভিন্ন বিভাগের দক্ষ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত মিটার পরীক্ষণ কমিটি বাতিল করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে শুধু মার্কেটিং বিভাগের চিহ্নিত অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করেন। নতুন জনবল নিয়োগে গড়িমসি ও দীর্ঘসূত্রতার কারণে কোম্পানিতে দক্ষ জনবলের ঘাটতির মাধ্যমে স্বাভাবিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি; কোম্পানির নির্ধারিত পদোন্নতি কমিটির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও সাধারণ ক্যাডারের সহকারী ব্যবস্থাপকদের পদোন্নতি না দেওয়া, শূন্যপদে জনবল নিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্ট সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও কমিটির সুপারিশ গ্রহণ ছাড়া কোম্পানি পর্যায়েই প্রার্থী নির্বাচন-বাছাই করে প্যানেল হতে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া; কোম্পানির বোর্ড মিটিংয়ের আলোচনা অনুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন না করে সুকৌশলে কার্যবিবরণী উপস্থাপন করে পর্ষদ চেয়ারম্যানের অনুমোদন গ্রহণ করেন। এসব কার্যক্রমের জন্য মো. ফিরোজ খান, মহাব্যবস্থাপকের (প্রশাসন) বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ ছাড়া সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আইয়ুব খান চৌধুরীর দুই ছেলের অবৈধভাবে নিয়োগ বাগিয়ে নেয়ার অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য বিবরণী উপস্থাপন করা হলো। মহিউদ্দিন চৌধুরীর জাল সনদপত্র দিয়ে ২০১১ সালে কর্ণফুলী গ্যাসে সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদে ৯ম নিয়োগ বাগিয়ে নেয়া হয়। আশেক উল্লাহ চৌধুরীর অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২০১৬ সালে কর্ণফুলী গ্যাসে সরাসরি উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদে ৬ষ্ঠ গ্রেড এ নিয়োগ বাগিয়ে নেয়া হয়।

২০১১ সালে মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্ণফুলী গ্যাসে সহকারী ব্যবস্থাপক (সাধারণ) পদে নিয়োগ পেতে জাল সনদপত্র ব্যবহার করেন। তিনি ২০১০ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (ওটই) থেকে বিবিএ অনার্স পাস করার কথা উল্লেখ করেন এবং তার জিপিএ দেখান ২.৮১। কিন্তু বাস্তবে, তিনি ২০১২ সাল অনার্স সম্পন্ন করেন এবং তার প্রকৃত জিপিএ ছিল ২.৮৪। একই ব্যক্তির দুই রকম পাসের সন এবং দুই রকম জিপিএ হওয়ার সুযোগ নাই। এতে প্রমাণিত তিনি জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি বাগিয়ে নেন। অন্যদিকে ২০১৬ সালে আশেক উল্লাহ চৌধুরী কর্ণফুলী গ্যাসে উপ-ব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদে নিয়োগ পদে নিয়োগ বাগিয়ে নেন, যদিও তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না কর্ণফুলী গ্যাসের সার্ভিস রুলস নিয়োগ নীতিমালা ও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্তানুযায়ী এই পদে নিয়োগ পতে হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে (গ্যাস সেক্টরের কাজের উপর) অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক ছিল, কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়। বরং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাবার ক্ষমতার কারণে তা হাতে আগেই পৌঁছে দেয়ায় তিনি মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করে নিয়োগ বাগিয়ে নেন। এ ছাড়া মহিউদ্দিন ও আশেক উল্লাহ অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে সরকারি বেতনসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করে সরকারের প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ অপচয় করেছেন।

কেজিডিসিএল পোট্রোবাংলার আওতাধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। চট্টগ্রাম নগর ও ১১টি উপজেলায় গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে কোম্পানিটি। এসব এলাকায় মোট গ্রাহক-সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ আছে ২ লাখ খে ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প-বাণিজ্যসহ অনা খাতে। অন্যদিকে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বেশ কয়েক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। আবার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ডিঙিয়ে কনিষ্ঠদের পদোন্নতি দেয়ার সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কারিগরি ক্যাডারের উপব্যবস্থাপক পদের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া জ্যেষ্ঠ নিয়োগ কমিটির সুপারিশ থাকা সত্ত্বেও সহকারী ব্যবস্থাপক পর্যায়ের ১৩ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। এসব ঘটনায় মহাব্যবস্থাপক কামরুলকে দেয়া হয়নি। এ জন্য এমডি ও সচিব দায়ী। ২০১৬ সালে কেজিডিসিএলের একটি প্রকল্পের জন্য সহকারী হিসাব কর্মকর্তার ১৫টি অস্থায়ী পদে মেধাতালিকা প্রকাশ করে নিয়োগ কমিটি। এই ১৫ জনের মধ্যে ৭ জন চাকরিতে যোগ দেননি। তাই বাকি ৭ শূন্য পদে নিয়োগের জন্য তৎকালীন ব্যবস্থাপক (পারসোনেল) মো. হাবিবুল গণির কাছে পাঠানো হয়। তিনি নিজেই সাতটি পদের বিপরীতে ছয়জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেন। এতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ব্যত্যয় ঘটেছে। এই অনিয়মের জন্য হাবিবুল গণি, কোম্পানি সচিব ফিরোজ খানসহ আরও দুই কর্মকর্তাকে দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ১০ জন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, তারা গ্যাস সংযোগ পাবেন কি না, তা জানতে বেশ কয়েকবার কর্ণফুলীতে ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা তাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। উল্টো পেট্রোবাংলায় গিয়ে গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জানতে বলেন।

আবাসিক সংযোগসহ বর্ধিত চুলায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন এবং সংবাদ সম্মেলন করেছে ঠিকাদার ও গ্রাহক ঐক্যপরিষদ। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির সভাপতি বলেন, কর্তৃপক্ষ ২২ হাজার আবেদনকারীর কথা বললেও এ সংখ্যা ২৫ হাজার। এসব আবেদনকারীর টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে না।

২০১০ সালে বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডকে পুনর্বিন্যাস করে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকা হলো চট্টগ্রাম নগর, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, ফটিকছড়ি, কর্ণফুলী ও কাপ্তাই। এসব এলাকায় মোট গ্রাহক সংযোগ রয়েছে ৬ লাখ ১ হাজার ৯১৪টি। এর মধ্যে গৃহস্থালি সংযোগ আছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৫৬১টি, বাকিগুলো শিল্প- বাণিজ্যকসহ অন্য খাতে। চট্টগ্রামে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩১৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

২০১১ সালের ২১ আগস্ট কর্ণফুলী গ্যাসের তৎকালীন ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় আনিছ উদ্দিন সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে কর্ণফুলী গ্যাসের নিবন্ধিত ঠিকাদার নিয়ে ‘রক প্রপার্টিজ’ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠান মেসার্স নূর সিন্ডিকেটের সঙ্গে দরপত্র পরিচালনা ও নির্মাণকাজের চুক্তি করে। চুক্তিতে উল্লেখ ছিল, কর্ণফুলী গ্যাসের চাঁন্দগাঁও অফিসার্স আবাসিক এলাকায় একটি ১০ তলা ভবনের দরপত্রে অংশগ্রহণ ও নির্মাণ কাজের বিল বাবদ প্রাপ্ত অর্থ থেকে নূর সিন্ডিকেটকে দেড় শতাংশ কমিশন দেয়া হবে। কাজ শেষে চুক্তি মতো নিজের দেড় শতাংশ হারে কমিশন রেখে বাকি টাকা আনিছ আহমেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রক প্রপার্টিজের ব্যাংক হিসাবে হস্তান্তর করা হয়। ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর কূটকৌশল করে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স নূর সিন্ডিকেটকে নির্বাচন করে কার্যাদেশ প্রদানের সুপারিশ করা হয়। ৩০ ডিসেম্বর কার্য সম্পাদনের জন্য নূর সিন্ডিকেটের পক্ষে নূর মোহাম্মাদ ও মেসার্স রক হাপার্টিজের পক্ষে পরিচালক নেছার আহমদ চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন।

মন্তব্য করুন