‘মাতারবাড়ীতে ওরিয়নের ঢাকা ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিতর্কিত ইআইএ অনুমোদন’

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ প্রভাব সমীক্ষা রিপোর্টের সাম্প্রতিক অনুমোদন মাতারবাড়ির জনগণের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংশপ্তক, ক্লিন, বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (ইডএঊউ) এবং মাতারবাড়ির জনগণের উদ্যোগে আজ এ বিষয়ে এক বিশেষ প্রচারাভিযানের আয়োজন করা হয়। এই প্রচারাভিযানে সংশ্লিষ্ট নাগরিক সমাজ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও স্থানীয় জনগণের উপস্থিতিতে প্রকল্পটির পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরকারের অংশ থাকাকালীন সময়ে কীভাবে এ ধরনের বিতর্কিত প্রকল্পের ইআইএ রিপোর্ট অনুমোদিত হলো, তা নিয়ে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে।

প্রেক্ষাপট ও পূর্ববর্তী আন্দোলন এর আগে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লিন, বিডাব্লিউজিইডি এবং স্থানীয় সংগঠনগুলোর উদ্যোগে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে ও এর অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে একাধিক প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

এছাড়াও, ক্লিন, বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (ইডএঊউ) এবং অন্যান্য পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে ঢাকা ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে, প্রকল্পটি বাতিলের দাবি জানিয়ে এবং এর ভূমি ইজারা বাতিলের আহ্বান জানিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে খোলা চিঠি পাঠানো হয়েছিলো।

এই ইআইএ অনুমোদন প্রসঙ্গে প্রচারাভিযানে সংশপ্তকের পরিচালক অগ্রদূত দাশগুপ্ত বলেন:
“এটি শুধুমাত্র পরিবেশগত অবহেলা নয়, বরং স্থানীয় জনগণের জীবিকা, প্রকৃতি ও স্বাস্থ্যকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলার একটি উদাহরণ। আমাদের দেশে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পগুলোর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে এতদিন ধরে গবেষণা ও আন্দোলন হয়েছে। এছাড়াও প্যারিস চুক্তি অনুসারে আর কোনো কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অনুমোদন হওয়ার কথা ছিলো না।
তার পরও কীভাবে স্থানীয় জনগন, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ও দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদজনক এই প্রকল্পের পরিবেশ প্রভাব সমীক্ষা (ঊওঅ) রিপোর্টের অনুমোদন দেওয়া হলো, সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জনগণের আওয়াজ শুনবে এবং প্রকৃত বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশগত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এই প্রকল্পের অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।”

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়িত হলে মাতারবাড়ির জীববৈচিত্র্য, কৃষি, মৎস্যসম্পদ এবং সামগ্রিক বাস্তুসংস্থান চরম হুমকির মুখে পড়বে। অথচ দীর্ঘদিনের আন্দোলন এবং পরিবেশবিদদের সরব অবস্থান থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই প্রকল্প অনুমোদিত হলো, সেটি নিয়ে সংশপ্তক, ক্লিন, বিডাব্লিউজিইডি এবং মাতারবাড়ির জনগণ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

সংশপ্তক ও মহেশখালী পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী আবু বক্কর সিদ্দিক, মওলানা মোঃ মহসিন, নুর মোহাম্মদ, হামেদ হোসাইন, নুরুল আবছার, সরোয়ার কামাল, আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ আলী.আবদুর জব্বার, আফসারা খানম বিউটি, মোস্তাফা বেগম, খতিজা বেগম,সূবর্ণা মোস্তাফ সহ উপস্থিত মাতারবাড়ীবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে প্রকল্পটির ইআইএ অনুমোদনের পূর্ণাঙ্গ বিশ্লেষণ প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে। এছাড়া আবারও সরকারের নিকট প্রকল্পটির অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের বৈধতা পর্যালোচনা করার আহ্বান জানানো হবে।

মন্তব্য করুন