
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা কঠিন ও অস্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করছি। হাসিনা পালিয়ে গেছে, তার প্রেতাত্মারা এখনো আছে।
তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। দুর্ভাগ্য আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছি, আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য, তারা সঠিকভাবে এখনো কাজটি করতে পারছে না।
ফলে মাঝে মাঝেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তাদের আরও শক্তিশালী করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আজকে এখানে সমাবেশ হচ্ছে, আরেকটি হচ্ছে নিউমার্কেটে এবং আরেকটি হচ্ছে ঢাকায়।
দাবিটা কী? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে তাই না? আমরা মাঠে যারা আছি তারা শুধু নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না। কারণ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে।
গণতন্ত্র ধ্বংস, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে।
আজ শনিবার (১০ মে) চট্টগ্রাম পলোগ্রাউন্ড মাঠে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগের যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার’ প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
‘আপনারা সংস্কার সংস্কার বলছেন, কিন্তু প্রথম সংস্কার করেছিলেন শহীদ জিয়াউর রহমান’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাতের পর নয়টি বছর পথে-ঘাটে ঘুরে ফিরে আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। কিছু কিছু মানুষ সব ভুলে যায়। শুধু সুন্দর সুন্দর মুখরোচক কথা বললেই জাতি বোধ হয় সব ভুলে যাবে। তাদের বলব, আজকে সমাবেশটা দেখে যান, আপনাদের সম্বিৎ ফিরে এলে জাতি উপকৃত হবে। সোজা হিসাব বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্র ও অধিকারকে প্রয়োগ করতে চায়। আমাদের তরুণরা চাকরি, ব্যবসা ও কর্মসংস্থান চায়। আমাদের মায়েরা ছেলেদের লেখাপড়া শেখাতে চায়।
তরুণরা জেগে উঠেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, মাথা ঠান্ডা রেখে সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হবে। আধুনিক ও উপযোগী একটি বাংলাদেশ করার শিক্ষা দিচ্ছেন আমাদের নেতা তারেক রহমান। এই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে আমরা কোনভাবেই কোনো কিছু করতে দেব না। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমরা আপোস করবো না। তাই আমাদের নেতা বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ। তিনি বলেছিলেন, ফয়সালা হবে রাজপথে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনয়িক তামিম ইকমাল, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না, সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।
চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’র সমাবেশ ঘিরে নগরে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। বিকেলে সমাবেশ হলেও দুপুর থেকেই পলোগ্রাউন্ডমুখী নেতাকর্মীদের ঢল নামে। চট্টগ্রাম নগর এবং জেলা ছাড়াও চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলা থেকে নেতাকর্মীরা এসেছেন তারুণ্যের সমাবেশে।
বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সমাবেশ ঘিরে দুপুরের পর বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সড়কে নামেন। এতে প্রধান সড়ক ছাড়াও নগরের বিভিন্ন সড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় যানজটের। তীব্র গরম আর যানজটে অতিষ্ট হয়ে অনেককেই পায়ে হেটেই গন্তব্যে রওনা দিতে দেখা গেছে।
শনিবার বিকেল ৩টায় এই সমাবেশ শুরুর আগেই বহদ্দারহাট হয়ে মুরাদপুর থেকে টাইগারপাস, চৌমুহনী থেকে দেওয়ানহাট হয়ে টাইগারপাস মোড়। রেলওয়ের শাহজাহান মাঠ থেকে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ যাজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া নিউমার্কেট থেকে টাইগারপাস মোড় পর্যন্ত সড়কে যানবাহনের চলাচল করতে পারছে না। এছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন সড়ক-উপসড়কেও যানজট দেখা গেছে। যানজট থেকে বাদ পড়েনি ফ্লাইওভারগুলোও।
নেতাকর্মীদের খন্ড খন্ড মিছিল, সড়কের ওপর যত্রতত্র গাড়ি পার্কি এবং নেতাকর্মীদের বিচ্ছিন্ন চলাফেরার কারণে যাত্রী ও পথচারীরা সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নারী ও শিশুরা।
সরেজমিনে নগরের দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, আমবাগান, জিইসি, ২ নম্বর গেইট ঘুরে তীব্র যানজট দেখা গেছে। অফিস শেষে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য গণপরিবহন না পেয়ে এবং গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে অনেককে। তীব্র যানজট আর গরমের মধ্যে হেঁটে যেতে যেতে অনেককেই ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে। দূরের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অনেকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও গণপরিবহন পাননি। তাদের সড়কের মোড়ে মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
নগরের সল্টগোলা ক্রসিং থেকে একজন চাকুরিজীবি জিইসির উদ্দেশ্যে রওনা করেন দুপুর ২টায় তার জিইসি আসতে বিকেল ৫টা বেজেছে। ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে তার সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা। ক্ষোভ ঝেড়ে তিনি বলেন, এই সময়ে কুমিল্লা যাওয়া যেত। যতক্ষণে জিইসি আসছি।
আরেকজন পথচারী বলেন, বহদ্দারহাট থেকে হাটা শুরু করছি ওয়াসা মোড় যাবো। এক ঘণ্টা হেটে এই জিইসি এলাকা পার হলাম। গরমে আর যানজটে অতিষ্ঠ।
নগরের ডি.টি রোডে দফায় দফায় মিছিল বের করায় কতক্ষণ পরপরই যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া বিকেল তিনটায় সমাবেশ শুরুর আগেই পলোগ্রাউন্ড মাঠের আশপাশে সড়ক পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পলোগ্রাউন্ড মাঠে সমাবশে হলেও এর প্রভাব পরেছে পুরো নগর জুড়েই।
অন্যদিকে একই সময়ে নগরের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ, ‘জুলাই গণহত্যা’র বিচার ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ জারির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে একাধিক সংগঠন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে বিকেলে নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিকেল সাড়ে ৪টায় বিপ্লব উদ্যানে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি চালায়। এরপর সেখানে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বীর চট্টলা মঞ্চে’ একটি সমাবেশও করে তারা। জুলাই ঐক্য মঞ্চ চট্টগ্রামের ব্যানারে বিকেল ৩টায় নিউ মার্কেট মোড়ে অনুষ্ঠিত হয় গণজমায়েত ও অবস্থান কর্মসূচি। তারা সেখানে একটি অস্থায়ী মঞ্চও তৈরি করেছে।
তারুণ্যের সমাবেশকে ঘিরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কোনো বিশেষ নির্দেশনা না থাকায় এমন দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা। জনসাধারণের দুর্ভোগ কমাতেও কোনো বিশেষ পরিকল্পনা নেয়নি চট্টগ্রাম নগর পুলিশ।
সিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা বেগম বলেন, ‘সব রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সড়কে যানজট না হয় সেজন্য ট্রাফিক বিভাগও সতর্কভাবে কাজ করছে।