নিউজ ডেস্ক

চেম্বার পরিষদ বিলুপ্ত ও সচিব অপসারণ চান সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ আজ ২৬ আগস্ট (সোমবার) সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, মানবতা বিরোধী ও গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত এফবিসিসিআই ও চিটাগং চেম্বারের পরিচালনা পরিষদ অবিলম্বে বিলুপ্ত ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি বর্তমানে হত্যা মামলার আসামি এম. এ. লতিফ ২০০৮ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তখন থেকেই তিনি চেম্বারকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকেন। বিশেষ করে চেম্বার আয়োজিত চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে তার ভাই পরিচালক জহুরুল আলম এর মাধ্যমে অবৈধ চাঁদা গ্রহণ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’র ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কনকর্ড’র প্রত্যেক বিল থেকে অবৈধ কমিশন গ্রহণ, নিয়ম বহির্ভূত ব্যক্তিগতভাবে চেম্বারের যানবাহন ব্যবহার ও চেম্বার কার্যালয়ে নিজের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক অফিস গড়ে তোলাসহ দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন অপরাধ তিনি করে আসছেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অর্থ দিয়ে পশ্চিম খুলশিতে জায়গা ক্রয় বহুতল ভবন নির্মাণ, টেকনাফ এলাকা থেকে লবণের মাঠ ক্রয়, সীতাকুন্ড সাতকানিয়া এলাকায় জমি দখল, গাজীপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লট ক্রয়, চট্টগ্রামে পাঁচটি লাইটারেজ জাহাজ ক্রয়সহ বন্দরের টেন্ডারবাজি করে বহু অবৈধ সম্পত্তি তিনি গড়ে তুলেছেন। মূলত এসব অর্থ অনেক ব্যবসায়ীদের কাছে চেম্বার ডাইরেক্টর পদ বিক্রি থেকে ঘুষ হিসেবে ও নিয়েছেন। তিনি ভোটবিহীন নির্বাচনে ২০১৪ আবারো নির্বাচিত হয়ে চেম্বারের পরিত্যক্ত বাদামতলীস্থ ভবনে নিজের ব্যক্তিগত অফিস স্থাপন ও ভাড়াবিহীনভাবে রাজনৈতিক অফিস হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। বর্তমানে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এর সচিবালয়ের বিপরীতে তিনি অফিস স্থাপন করেছেন। এম. এ. লতিফ এবং তার অনুগত পাঁচবারের একচ্ছত্র চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম তথাকথিত পোর্টে গ্রান্ডে ইউনিভার্সিটির নামে একটি বিরাট অংশ দখল করেছেন। এটির কি রকম চুক্তি হয়েছে, কত ভাড়া দিচ্ছে তার কোনো হিসাব বা জবাবদিহিতা নেই।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, এম. এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম এর কনস্ট্রাকশন কার্যসমূহ দেখভাল করার কারণে পুরষ্কার হিসেবে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার’র রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ ফারুককে বর্তমানে অধিক বেতনে গত জুলাই ২০২৪ এর বোর্ড মিটিং এ তাকে তিন লক্ষ বিশ হাজার টাকা বেতনে স্থায়ী সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া তথাকথিত সেন্টার অব এক্সেলেন্স যা সাবেক ডাইরেক্টর প্যাসিফিক জিনস এর এস. এম তানভীর ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন সেখানে ও দুই লক্ষ টাকা বেতনে ওয়াসিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার ফারুক এর বশংবত হিসেবে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ইঞ্জিনিয়ার সুপারভাইজার ইত্যাদি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার কারণে অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চেম্বার ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এম. এ লতিফ ব্যক্তিগতভাবে চেম্বারের হিসাবরক্ষণ বিভাগে তার নিজস্ব ও আনুকুল্য ব্যক্তিদের যথা আনিসুল, তারেক (শ্রমিকলীগ নেতা মতিন মাস্টারের ছেলে), রায়হান, ভোট জালিয়াতির জন্য সৈয়দ সালামত উল্লাহকে চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়া স্বত্বেও ৮ বছর এক্সটেনশন দিয়ে যাচ্ছে। সাবেক এমপি নদভী ও এম. এ মোতালেব এর সহচর, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরীকে চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়া স্বত্ত্বেও অবসর না দিয়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের’র অনুরোধে তাকে বছরের পর বছর চাকুরিতে বহাল রাখা হয়েছে। অথচ তার পদ এলএমডি বিভাগ বিলুপ্ত হয়েছে বহু সময় আগেই। নুরুল আবছার বর্তমানে ফ্রেড ফরোয়ার্ড এর ব্যবসা, মুদ্রণ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে। এম. এ লতিফ এর ব্যক্তিগত পিয়ন রাজিবকে প্রকিউরডম্যান অফিসার করেছেন। তার ব্যক্তিগত ম্যানেজার মাহবুবকে সহকারী সেক্রেটারি করেছেন। তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক বেলাল’র ছেলেকে মেম্বারশিপ সেকশনে কাজ দিয়েছেন। এছাড়াও মেম্বারশিপ জালিয়াতি করে মাহবুবুল আলমকে ৫ মেয়াদকালে সভাপতি করেছেন। সর্বশেষ তিনি ৪ আগস্টে ছাত্র-জনতাকে হত্যার পূর্ব পরিকল্পনার জন্য প্রস্তুতিমূলক সভা করেন। কাস্টমস মোড় হয়ে কলেজিয়েট স্কুল হয়ে নিউমার্কেট মোড়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা চালানোর কাজে সরাসরি জড়িত তিনি। ইতিমধ্যে তার নামে জনৈক এরশাদ হত্যাচেষ্টার মামলা করেছেন। মাহবুবুল আলম ২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাচন ও ভোটবিহীনভাবে লতিফ এর ক্ষমতাবলে সভাপতি পদে ছিলেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য পদ ক্রয় করে নেন। তিনি খাতুনগঞ্জের একজন অবৈধ সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী। তিনি ও তার ভাইয়েরা নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য চাল, ডাল, চিনিসহ অন্যান্য পণ্যের ডিও ক্রয়, গুদামজাতকরণ, সংকট তৈরি করে সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে অতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির সাথে জড়িত রয়েছেন। সারাদেশে মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনগণের ভোগান্তির জন্য তিনি এস. আলম ও সিটি গ্রুপের পরে তার প্রতিষ্ঠান এম. আলম গ্রুপ দায়ী। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ট্রেডিং এ থাকলেও ফিলিং স্টেশন, পর্যটন স্পট, মিরসরাইয়ের জায়গা জমি, ইন্সুরেন্স, বেঙ্গল ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান কুক্ষিগত করে রেখেছেন। সর্বশেষ সালমান এফ রহমান যিনি সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আটক হয়েছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার এক সভায় শেখ হাসিনাকে মাহবুবুল আলম বলেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনার সাথে ছিলাম এবং ভবিষ্যতে ও থাকবো”। এই ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও ছাত্র-জনতার হত্যাকান্ডের উস্কানিদাতা ও সমর্থন করার পরে ও ফেডারেশন চেম্বার এর সভাপতি পদে বহাল রয়েছে। বর্তমান সময়ে মাহবুবর রহমান ও আব্দুল্লাহ আওয়াল মিন্টুকে সামনে রেখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার সাথে সাক্ষাৎ করে নিজের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এম. এ লতিফ ও মাহবুবুল আলম’র সকল অপরাধের সহযোগীদের আইনের আওতায় আনা হোক। এদের অন্যতম সহযোগী হচ্ছে চট্টগ্রাম চেম্বারের সচিব ইঞ্জিনিয়ার ফারুক, সে সকল অবৈধ কর্মকান্ড লুটপাট ও দুর্নীতির অন্যতম হোতা। নেতৃবৃন্দ চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত এবং মানবতা বিরোধী কর্মকান্ড ও ছাত্র-জনতা হত্যাকান্ডে হত্যা মামলায় সংযুক্তিকরণ এবং তাদের দ্রুত বিচার ও চট্টগ্রাম চেম্বার সচিবের অপসারণ দাবী জানিয়েছেন।
বিবৃতিদাতারা হলেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রাম আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সদস্য সচিব ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক নসরুল কাদির চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাহনেওয়াজ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হাসান আরিফ, এ্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় শাখার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার জানে আলম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক আতিকুজ্জামান বিল্লাহ, ড্যাব মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি ডা. জসিম উদ্দিন চৌধুরী, ড্যাব মেডিলেক কলেজ শাখার সভাপতি রমিজ উদ্দিন মানিক, সাংবাদিক সাইফুল ইসলাম শিল্পী, জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান জসিম উদ্দিন চৌধুরী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন কোর্ট বিল্ডিং শাখার সভাপতি আহ্বায়ক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. মো. আলাউদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. জালাল উদ্দিন পারভেজ ও সাংবাদিক সোহাগ কুমার বিশ^াস।

 

মন্তব্য করুন