নিউজগার্ডেন ডেস্ক: সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড টানা ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছে চট্টগ্রাম বন্দরে। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। কথিত আছে ২০০৫ সালে সরকারি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজসে প্রতিষ্ঠানটি বন্দরে পথচলা শুরু করে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ৩টি কন্টেইনার টার্মিনাল, ১টি আইসিডি, ২টি কন্টেইনার ইয়ার্ড, বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি, সাপ্লাই কনস্ট্রাকশন কাজসহ কিউজিসি ও আরটিজি ক্রেনগুলো চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটির হাতে রয়েছে। এছাড়াও বন্দরের অভ্যন্তরে আবর্জনা ও টয়লেট পরিস্কারের কাজও তারা করছেন বলে চবক সূত্রে জানা যায়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে টেন্ডার কারসাজি করে অথবা কোনোরুপ টেন্ডার ছাড়াই প্রতি ৬মাসে ১০-১২% বৃদ্ধি হারে ডিপিএম পদ্ধতিতে পোর্ট ধরে রেখেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, অন্যান্য অপারেটরকে সুযোগ না দিয়ে সিসিটি ৩টি বার্থ, এনসিটি ৪টি বার্থ, ঢাকা কমলাপুর আইসিডি, পিসিটি এবং ওভারফ্লো কন্টেইনার ইয়ার্ড ও সাউথ কন্টেইনার ইয়ার্ড এককভাবে প্রতিষ্ঠানটি দখল করে রেখেছে। চবকের পক্ষ থেকে সাইফ পাওয়ার প্রদত্ত সকল আদেশ, চুক্তি, ডিপিএম ভিত্তিতে কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত যা কাগজেপত্রে রয়েছে এর সবই বন্দরের বিধিবিধান ও সরকারী আইনের পরিপন্থী বলে জানা যায়।
সূত্রটি জানায়, তাদের দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মী রয়েছে। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহেনা, সাবেক এমপি লতিফ, সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী নেতা আ জ ম নাছির এর সহযোগিতায় বন্দর নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চবক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং পরিসংখ্যান মতে, ২৩-২৪ অর্থবছরে ৩,১৬৮,৬৯০টি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে, প্রবৃদ্ধি ৫.৩৬%। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। যার ৭০ শতাংশ সাইফ পাওয়ার টেক নিয়ন্ত্রণ করে। চবকের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে সাইফের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ জমেছে। যে কোনো কন্টেইনার থেকে ঢুকতে এবং বের হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ২০০-৩০০ টাকা স্পীডমানি বা ঘুষ দিতে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে খালি কন্টেইনারগুলো আটকে রাখা হয় এবং জাহাজে লোড করার জন্য ৫০-১০০ টাকা নেওয়া হয়। ভেসেল অন-বোর্ড চার্জ প্রতিটি কন্টেইনার ২০ফুট এবং ৪০ফুট থেকে যথাক্রমে ৪৮০ টাকা এবং ৫৬০ টাকা আদায় করে। এই চার্জ প্রতি বছর ৪% বৃদ্ধি করা হয়। যা চবক ট্যারিফের বাইরে অবৈধভাবে চার্জ নেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
কন্টেইনার এক্সট্রা মুভমেন্ট এর জন্য চবক কর্তৃক নির্ধারিত ফি রয়েছে। সাইফ এক্সট্রা মুভমেন্টের বিষয়টি গোপন রেখে নির্ধারিত ফি এর চেয়ে কম টাকা, লোড কন্টেইনারের জন্য ৪০০ টাকা এবং খালি কন্টেইনারের জন্য ২০০ টাকা আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়ে থাকে। চবক কর্তৃক নির্ধারিত ফি-এর চেয়ে কম টাকা হওয়ায় বিষয়টি গোপনেই থেকে যায় বলে সূত্রটি জানিয়েছে। আবার কন্টেইনার এক জায়গায় রেখে এক্সট্রা মুভমেন্ট দেখিয়ে প্রচুর ভুয়া বিল তৈরি করে এবং সাইফ এর মেশিনগুলো ফেইক লিফট দেখিয়ে এদিক সেদিক সরিয়ে মিথ্যা বিল বানিয়ে চবক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
সাইফ পাওয়ারটেক এর প্রায় ৮০টি কন্টেইনারবাহী ট্রেইলার আছে। তার কোনটিই বিআরটিএ কর্তৃক নিবন্ধিত নয়। নিবন্ধন ছাড়াই চলছে অন্তত ১০ বছরেরও অধিক সময়। যা বিআরটিএ কর্তৃক নিবন্ধিত হওয়া বাধ্যতামূলক। সিসিটি বা এনসিটি-তে কোনো গাড়ি এক্সিডেন্ট হলে, বাইরের গাড়িগুলো আটকে রেখে অযাচিতভাবে টাকা আদায় করে নেয়। এমনকি সাইফের কারণে কোনো গাড়ি এক্সিডেন্ট হলেও সাইফেই টাকা আদায় করে নিয়ে থাকে। এই টাকা বিভিন্ন মহলে ভাগাভাগি হয় বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
কিউজিসি ও আরটিজি ক্রেনগুলো চালানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সাইফের কাছে থাকলেও তা নিয়ে রয়েছে নানা কারসাজির অভিযোগ। এনসিটি-তে আরটিজি রয়েছে ৩২টি। যার অধিকাংশ (৪০%) অব্যবহৃত থেকে যায়। অথচ সাইফ চবক থেকে মেন্টেইনেন্স খরচ আদায় করে নিচ্ছে। আরটিজি-১৬ ৩ বছর যাবৎ বন্ধ রয়েছে। চবকের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লিকউটেড ড্যামেজ আরোপন করার কথা থাকলেও সাইফ তা করেন নি। সাইফ বন্দর পরিচালনার জন্য মুলধনী যন্ত্রপাতি আমদানী করে কিন্তু সাইফ ব্যাটারি কারখানাকে বন্ডেড এলাকা দেখিয়ে সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে আসছে বলে জানায়।
পোর্টের ভিতরে কিউজিসি এবং আরটিজি আছে। কিউজিসির জন্য ১২ লক্ষ টাকা এবং আরটিজির জন্য প্রতিমাসে নিয়ে থাকে। অথচ ফিল্ডে দেখা যায় সব মেশিন চলছে না। অনেক সময় যন্ত্রপাতির বিভিন্নাংশ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই স্ক্রাব হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। যা চবকের নিজস্ব যন্ত্রপাতি হওয়া সত্ত্বেও স্ক্রাব বিক্রির অর্থ চবককে দেওয়া হয় না। বিশ্বস্থ একটি সূত্র বলছে চবকের যন্ত্রপাতিগুলোর সঠিকভাবে খুঁজ নেওয়া হলে তার কোনোটিই সঠিক অবস্থানে পাওয়া যাবে না। অপরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণের ফলে চবকের যন্ত্রপাতিগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
আবর্জনা পরিস্কারের জন্য ৫টন ধারণক্ষমতার ট্রাক ব্যবহার এবং প্রতিটি ট্রিপের বিপরীতে ৭ হাজার টাকায় সাইফ চবকের সাথে চুক্তিবদ্ধ। কিন্তু সাইফ ১টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পিকআপ ব্যবহার করে একই পরিমানের টাকা দৈনিক ৪-৫ ট্রিপের বিপরীতে চবককে বিল ধরিয়ে দেয়।
সাইফের বিরুদ্ধে সবচে’ গুরুতর এবং জগণ্য অভিযোগ হলো শ্রমিকের ন্যায্য হিস্যা না দেওয়ার বিষয়ে। ডক বন্দর শ্রমিক ফেডারেশন-২৩ইং সাইফের বিরুদ্ধে চবক চেয়ারম্যানকে দেওয়া এক চিঠিতে শ্রমিকদের ন্যায্য হিস্যা না দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট উঠে আসে। চবকের বিভিন্ন শাখা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তরের সীল স্বাক্ষরযুক্ত চিঠিটিতে বলা হয়- বন্দর কর্তৃক অপারেটরগণের চুক্তি মোতাবেক, ১টি ২০ ফুট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে শ্রমিক মজুরী ২,৫৪১ টাকার স্থলে ২,৩৮০ টাকা প্রদান করছে। একইভাবে ৪০ ফুট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে শ্রমিক মজুরী ৩,৩৯৬ টাকার স্থলে ৩,০৯০ টাকা। দৈনিক ভিত্তিক শ্রমিকদের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকার স্থলে দেওয়া হচ্ছে ১৯৮ টাকা মাত্র। এক্ষেত্রে যথাক্রমে- ১৬১ টাকা, ৩০৬ টাকা, ৫২ টাকা হারে কম মজুরী প্রদান করা হচ্ছে। বছরের দুই ঈদের বোনাস থেকে শ্রমিক প্রতি ৫০০ টাকা করে প্রতিষ্ঠানটি বরাবরেই কম দিয়ে আসছে। তদ্বানুযায়ী হিসেব করলে দেখা যায়, প্রতিমাসে প্রায় ১কোটি টাকা শ্রমিকদের কম দেওয়া হচ্ছে। জানা যায়, পরিচালক তরফদার রুহুল আমিনের আত্মীয় আনিসুল হক তরফদার অবৈধভাবে তাদের মজুরি থেকে গড়ে ২০০-৩০০/- টাকা করে নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। কমলাপুর আইসিডিতে সাইফ প্রতিদিন ৩৪-৪০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ করে কিন্তু তারা প্রতিদিন কমপক্ষে ৮০-১০০ জনের বিল চবককে ধরিয়ে দেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানায়।
শ্রমিকরা বলেন, “সাইফ” কোম্পানির ‘‘শ্রম আইন’’ মোটেও অনুসরণ করেন না। অর্থাৎ কোনো বীমা নেই, পিএফ নেই, ১২ ঘন্টা ডিউটি করেও কোনো ওভারটাইম নাই। বছরের পর বছর চাকরি করে কোনো সুযোগ- সুবিধা ছাড়াই চলে আসতে হয়। চাকরি থেকে অব্যাহতি নিলে শেষ দু’মাসের বেতনের জন্য দীর্ঘ ৭-৮ মাস অপেক্ষা করেও কেউ বেতন পাই আবার কেউ পাই না। শ্রমিকদের সঠিকভাবে মজুরি দেওয়া হয় না। শ্রমিক নেতাদের হাতে রাখতে অবৈধ উপায়ে শ্রমিকদের বেতন কেটে নেতাদের দেওয়া হয়।
তারা আরো বলেন, আমরা চবককে বার বার লিখিতভাবে অবহিত করছি। চট্টগ্রাম বিভাগীয় শ্রম দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানে লিখিতভাবে অবহিত করছি। বিভিন্ন পত্র/ পত্রিকায় খবর প্রকাশ হওয়ার পরও কোনো ধরনের প্রতিকার পাইনি। বরং প্রতিবাদ করলেই ডেলিভারী অপারেশন ম্যানেজার আনিসুল হক তরফদার, লেবার ইনচার্জ মিজানুর রহমান, শ্রমিক নেতা মীর নওশাদ এদের যোগসাজশে গেইট পাশ কেড়ে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এনএসআই, ডিজিএফআই ফোন দিয়ে হুমকি দেয়। নিরুপায় হয়ে চাকরি হারানোর ভয়ে সব সহ্য করে নিতে হয়। কোনো ধরনের শ্রম আইন তোয়াক্কা না করে কোনো জবাবদিহিতা ছাড়াই দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি কিভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে, এই নিয়ে সচেতন মহল শ্রম আইনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করার জন্য নেভিস সফটওয়্যার কিনেছে কিন্তু সাইফ তা অনুসরণ না করে অসদাচরণের সুবিধার্থে ম্যানুয়ালি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। নেভিস সফটওয়্যার/ টিওএস সার্বিকভাবে প্রণীত না হওয়ায় সাইফ বিভিন্ন কায়দায় সরকারি কোষাগার ফাঁকি দিয়ে কাস্টমারদের টাকা নিজের পকেটে পুরছে। এ সুযোগে সাইফ ম্যানুয়ালি কাজ করে চবক তথা সরকারকে ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে। ফলে বিরাট অংকের আয় থেকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে।
সূত্রটি আরো দাবি করে, সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে কিউজিসি এবং আরটিজি-এর নম্বর সরবরাহ করেছে। যে অর্থ তারা সরবরাহকারীকে দিয়েছিল তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। বাস্তবিক অর্থে এই টাকা তারা মানি লন্ডারিং করে নিয়ে যায়। সেই যন্ত্রপাতি সরবরাহের টেন্ডারে কারচুপি করা হয়েছিল যাতে কেবল সাইফ তা পেতে পারে। কেনার সময় একটি বড় মানি লন্ডারিং হয়েছে। মেশিনারিজগুলোর খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব ছিল যা তারা বাংলাদেশে আনার পর কিনেছিল। সুতরাং, যে অর্থ তারা প্রধান সরবরাহকারীকে দিয়েছিল বাস্তবিক অর্থে তা অনেক বেশি ছিল। এই টাকা মানি লন্ডারিং করে বিদেশে তাদের একাউন্ট এ গিয়েছিল।
সাইফ পাওয়ারটেক এর পরিচালক ও তার পরিবার অর্থ পাচারকারী। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাফিন ফিডার খুলেছে। তাদের আরবে ২টি ফ্ল্যাট এবং দামাম এক্সেল টাওয়ারে বিলাসবহুল অফিস রয়েছে। একই পরিবারের সদস্য মি. তরফদার কাওছার যুক্তরাষ্ট্রে মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করছে। সূত্রটির দাবি দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তার অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত করলে তার সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর, পানগাঁও টার্মিনাল ও কমলাপুর আইসিডিতে সাইফ পাওয়ারটেকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ। গতকাল রবিবার উপ- পরিচালক দুর্নীতি দমন কমিশন, সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এ একটি অভিযোগ দায়ের করেন তারা। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয় খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনার জন্য ২৪ কোটি টাকা দিয়ে একটি নেভিস সফটওয়্যার কিনে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সাইফ পাওয়ারটেক তা অনুসরণ করে না এবং
অসদাচরণের সুবিধার্থে ম্যানুয়ালি বন্দর পরিচালনা করে। ‘নেভিস’ হচ্ছে পোর্ট চালানোর জন্য একটি সফটওয়্যার। কিন্তু সাইফ পাওয়ারটেক বন্দরের সাথে জোগসাজশে ওই সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ম্যানুয়ালি টার্মিনাল চালায়। শুধু তাই নয়, ‘নেভিস’ সফটওয়্যারের কেবলমাত্র ১৫ শতাংশ ব্যবহার হয়। আর বাকিটা ম্যানুয়ালি চলে। এ কারণে প্রোডাক্টিভিটি কম হয়। ম্যানুয়ালি চলা মানেই হচ্ছে দুর্নীতি। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে এক একটা আরটিজিতে তিন হাজার লিটার তেল ধরে। বন্দর প্রতিটা আরটিজিতে তেল ঢালার পরে সেই তেল সাইফ পাওয়ারটেক জোগসাজশে চুরি করা হয়। পরবর্তীতে এই তেল তারা বিভিন্নভাবে বাইরে বিক্রি করে দেয়। বিক্রি করার বেশ কয়েকটা উপায়ও বলা হয়েছে।
প্রথমত বাইরের যেসব গাড়ি আসে গাড়িকে তারা কম দামে তেলটা বিক্রি করে দেয়। দ্বিতীয়ত হচ্ছে, পোড়া মবিল বা স্ক্রাব দেখিয়ে বাইরে ড্রামে করে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। এটার একটা সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়।
অভিযোগে বলা হয়, শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘ ১৭ বছর যাবত শ্রমিকদের শোষণ করে যাচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানটি। শেখ হাসিনার ছত্রছায়ায় থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে রাজ প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে মামলা- হামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ বছর ধরে টেন্ডারের কারসাজি হয়েছে। শুধুমাত্র সাইফ অংশ নিতে পারবে, এমন প্রক্রিয়া করা হয়েছে। বিগত সরকারের উচ্চ পদস্থ দের হাত করে সাইফ পাওয়ার টেক সিসিটি-এনসিটি (সিটিজি), পানগাঁও, কমলাপুর এবং মংলা দখল করেছে।
এসব অনিয়ম নিয়ে কথা বলাতে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন একাউন্টেন্ট ইলিয়াস রেজাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। কারণ তিনি বলেছিলেন, যে টাকাটা নির্ধারণ করা হয়েছে ওই টাকা দিয়ে নতুন আমদানি করা যেত। ওই টাকা দিয়ে সামান্য কিছু সংস্কার করে পুরো টাকাই সাইফ পাওয়ারটেক তাদের পকেটে নিয়ে নেয়। মেশিনারিজ গুলো হচ্ছে- কিউজিসি, আরটিজি এবং এমএইচসি।
এই মেশিনগুলোর অবস্থা বর্তমানে ভালো নেই। কিন্তু ‘ডাক্তারের প্যারাসিটামল প্রেস্ক্রিপশন’ দেওয়ার মত প্রতিমাসেই একই ধরনের বিল করা হচ্ছে। যেমন- প্রতি কিউজিসি মাসে বিল করছে ১১ লাখ ৯২ হাজার ২৫০ টাকা, প্রতি আরটিজিতে মাসে বিল করছে ৭ লাখ ৪০ হাজার এবং প্রতি এমএইচসিতে মাসে বিল করছে ১২ লাখ ১০ হাজার।
একইভাবে পানগাঁও টার্মিনালে সাইফ পাওয়ার দুইটি মোবাইল হারবার ক্রেন চালায়। এসবের মেনটেনেন্স দেখিয়ে প্রতিমাসে ২০-৩০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। কন্টেইনার আন স্টাফিং করার জন্য তারা বেশি সংখ্যক গ্যাং এর চাহিদা পানগাঁও অথরিটিকে দেয় এবং পানগাঁও অথোরিটির সাথে ভাগাভাগি করে টাকাটা তুলে নেয়। এ ব্যাপারে জানার জন্য তরফদার রুহুল আমিনের মোবাইল নাম্বারে বার বার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।