২৭ জানুয়ারি থেকে ৫ দিন ব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল

ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে (৫ দিন ব্যাপী) তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের এন্তেজামিয়া কামিটির সভায় প্রধান অতিথি, ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেছেন, প্যারেড ময়দানের ঐতিহাসিক তাফসিরুল মাহফিল থেকে দীর্ঘদিন মাহরুম হয়েছি। আজকে আমাদের মন ভরে গেছে। এই তাফসিরুল কোরআন মাহফিল হযরত মাওলানা মরহুম শামসুদ্দীন (রহ.) যিনি প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন ও সমাজসেবক হিসেবে ভূমিকা পালন করেছিলেন। শুধুমাত্র এই বৃহত্তর চট্টগ্রাম নয় এই তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের মাধ্যমে এই চট্টগ্রামকে কোরআনের প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে সারা দুনিয়ার কাছে পরিচিত করেছিলেন। কোরআনের প্রচার বৃদ্ধি করা ছাড়া বাংলাদেশকে পবিত্র করার আর কোনো রাস্তা নেই। কোরআনের চর্চা যত বৃদ্ধি পাবে বাংলাদেশ ততই ঝঞ্জালমুক্ত হবে। কোরআনের চর্চা যত বৃদ্ধি পাবে অপসংস্কৃতি ও পৌত্তলিকতা ততই বিলুপ্ত হবে। এই মুসলিম অধ্যুষিত জনপদে যা মুসলমানরা মেনে নিতে পারে না, এই সকল কিছুর অবসান হবে যদি আমরা ব্যাপকভাবে কোরআনের চর্চা বৃদ্ধি করতে পারি। ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে ৫ দিন ব্যাপী আল্লাহর কোরআনের তাফসির পেশ করা হতো। শহীদ আল্লামা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী(রহ.) যিনি কোরআনের পাখি হিসেবে পরিচিত এই তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে আপনারা এই দৃশ্য দেখেছেন প্রতিদিন ডজনে ডজনে অমুসলিম তাঁর সূললিত কণ্ঠে কোরআনের বাণী শুনে এবং ধারণ করে কালেমায়ে শাহাদাত উচ্চারণ করতে করতে মুসলমান হয়েছেন। আজকে আল্লামা শহীদ সাঈদী হুজুর আমাদের মাঝে নেই। দীর্ঘদিন কোরআনের খেদমত করতে করতে শাহাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিয়ে গেছেন। কোরআনের বাণী সর্বসাধারণের নিকট পৌঁছাতে তাফসিরুল মাহফিল ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখে আসছে।
চট্টগ্রামে প্যারেড ময়দানে ২৭ জানুয়ারি থেকে ৫ দিন ব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কোরআন মাহফিল-২০২৫ সফল করার লক্ষ্যে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে বুধবার নগরের অভিজাত এক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এন্তেজামিয়া কমিটির প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এন্তেজামিয়ার কমিটির সভায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা, সংসদীয় দলের সাবেক হুইপ ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, হযরত শামসুদ্দীন (রহ.) সাহেবের মাধ্যমে ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল । পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বিশিষ্টদ্বীন মরহুম মাওলানা তাহের সাহেবও যুক্ত হয়েছেন। ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে চট্টগ্রামে তাফসির মাহফিল যাত্রা শুরু হয়। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত আওয়ামী দু:শাসনের কারণে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়। চট্টগ্রামে কি হয়েছিল আপনারা জানেন। স্কুল ও কলেজে কুরআনের দাওয়াত যখন পৌঁছে যাচ্ছে তখন বিভিন্ন রাজনৈতিকদল এ মাহফিল বন্ধ করার জন্য যে উঠেপড়ে লেগেছিল। তাওহিদী জনতার বলিষ্ঠ ভুমিকার কারণে কলেজিয়েট স্কুল থেকে আমরা বাধ্য হয়ে প্যারেড ময়দানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কলেজিয়েট স্কুল মাঠে যেদিন তাফসির মাহফিল বন্ধ হয়েছিল সেদিন সারা চট্টগ্রামের টেকনাফ থেকে ফেনী পর্যন্ত এই তাফসির মাহফিল বন্ধের যে প্রতিবাদ করেছিল তৎকালীন রাজনৈতিক সংগঠন পর্যন্ত ঘরের ভেতর লুকিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আর যেদিন প্যারেড ময়দানে তাফসির মাহফিল শুরু হলো সেদিন কলেজিয়েট স্কুল মাঠের চেয়েও দুই গুণ জনতা উপস্থিত হয়েছিল। আজ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী (রহ.) আমাদের মাঝে নেই। আমাদেরকে একটা জিনিস চিন্তা করতে হবে। এটা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। হযরত আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী(রহ.) এর কোরআনের তাফসির মাহফিলের মাধ্যমে সমাজ কল্যাণের যে পরিচিতি এবং এই সমাজ কল্যাণ পরিষদ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পেছনে সব চেয়ে বেশি যে দৃষ্টি ভঙ্গি ছিল চট্টগ্রামে শিক্ষা আন্দোলনে চিন্তার পরিশুদ্ধি করা। মানুষের কাছে ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছিয়ে দেয়া। এই ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের চিন্ত-চেতনার ভিত্তি কোনো ব্যক্তির নয়। একমাত্র সমাজ কল্যাণ পরিষদ হযরত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী(রহ.) এবং মরহুম অধ্যাপক গোলাম আজম (রহ.) এর চিন্তার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শাহ ওয়ালি উল্লাহ ইনিস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল । আল জাবের ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আন্তর্জাতিক মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটার পেছনে বায়তুশ শরফের পীর মরহুম আব্দুল জব্বার(রহ.), সৈয়দ আব্দুল আহাদ মাদানী (রহ.) প্রথম বৈঠকে তাঁরাই উপস্থিত ছিল। এদের চোখের পানির বদৌলতে আজকে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় দাঁড়িয়ে আছে।

এন্তেজামিয়া কমিটির সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ আমিরুজ্জামান, বিশিষ্ট লেখক ও সাহিত্যিক ডক্টর আ জ ম ওবায়দুল্লাহ, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ডক্টর আবু বকর রফিক আহমদ, পরিষদের সহ-সভাপতি ডাক্তার এ কে এম ফজলুল হক ও ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুল হক, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ আনোয়ার হোসাইন, ছাত্রনেতা ফখরুল ইসলাম ও মুহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। মাহফিলের বাজেট পেশ করেন ডা. মুহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান,
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সহ-সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, শফিউল আলম ছুবহানী ও সাংগঠনিক সম্পাদক সলীমুল্লাহ জামান এর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এন্তেজামিয়া কমিটির সদস্য মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুস, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, পরিষদ সহ-সভাপতি ডাক্তার মুহাম্মদ ঈসমাইল, মাওলানা মমতাজুর রহমান, মাওলানা মামুনুর রশীদ নূরী, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, ডাক্তার আব্দুল মোতালেব, ডক্টর আবুল কালাম আযাদ, ডা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

পরিষদের উপদেষ্টা ও আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ডক্টর আবু বকর রফিক আহমদ এর দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে এন্তেজামিয়া কমিটির সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ক্যাপশন: ২৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি ৫ দিন ব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের এন্তেজামিয়া কমিটিরি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছেন মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।

মন্তব্য করুন