নিউজগার্ডেন ডেস্ক: রাউজান বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আজ ৮ ডিসেম্বর (রবিবার) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাউজান বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ও রাউজান থানা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী জানান, প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার কারণে রাউজানে বিজয় মেলার অনুমতি নিয়ে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা জনগণের উদ্দেশ্য আমাদের বক্তব্য আপনাদের মাধ্যমে অবহিত করতে চাই।
গত ২ ডিসেম্বর আমরা জেলা প্রশাসন বরাবরে রাউজান সরকারি কলেজ মাঠে বিজয় মেলা উদযাপনের অনুমতির জন্য আবেদন পত্র পেশ করলে জেলা প্রশাসক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ইউএনও বরাবরে প্রেরণ করেন।
পরে ইউএনও’র সাথে যোগাযোগ করলে ইউএনও অনুমতি দেওয়ার জন্য আশ্বাস প্রদান করেন কিন্তু পরে দেখা গেল কিছু সংখ্যক লোক রাউজান কলেজ মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। পরে ঐ গ্রুপ রাউজান কলেজের মাঠে বিজয় মেলার উদযাপনের অনুমতি পাওয়ার ভুয়া দাবি করেন।
জানা গেছে ওই গ্রুপটি এ ডি এম বরাবর একটি আবেদন জানালে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ইউএনও বরাবরে প্রেরণ করেন। কিন্তু কোন অনুমতি প্রদান করা হয় নাই। এহেন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ইউএনও’র কাছে যোগাযোগ করলে তিনি কোন পক্ষকে অনুমতি দেওয়া যাবে না বলে উল্লেখ করেন।
এরপরও তারা রাউজান কলেজ মাঠে প্যান্ডেল নির্মাণ অব্যাহত রাখলেও ইউএনও কোন পদক্ষেপ নেইনি। একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছ থেকে বিগত কয়েক দিনের বহুমুখী আচরণের শুধু আমরা নয় সমস্ত রাউজানের শান্তিপ্রিয় মানুষ উনার এ আচরণে হতবাক। তাই আমরা বাধ্য হয়ে গত ৬ ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় বিজয় মেলা উদযাপনের অনুমতির দাবিতে রাউজান উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর থেকে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করলে ৫ আগস্ট রাউজান থানায় হামলা ও অস্ত্র লুটকারি মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ও পতিত আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী একত্রিত হয়ে আমাদের সমাবেশে হামলা করলে জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম নুরুল হুদা, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক রহিম উদ্দিন ওয়াসিম, ছাত্র নেতা রিদোয়ান, মোঃ রাকিব, আব্দুস সালাম, মোঃ শাকিল ও মোহাম্মদ আলমগীর সহ অনেকে আহত হন যা জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হয়। এই হামলায় অংশগ্রহণ করেন কাজল, কালা শহীদ, রিপন, রিয়াজ, চামচা শহীদ, তৈয়ব, রাসেল সহ ৫০-৬০ জনের সশস্ত্র সন্ত্রাসী। এরপরও আমাদের নির্ধারিত কর্মসূচি বিক্ষোভ ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করি।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য ইউএনও বারবার কোন পক্ষকে অনুমোদন দিবে না এবং ১৪৪ ধারা জারি করার কথা উল্লেখ করায় আমরা বিজয় মেলার অবকাঠামো নির্মাণ থেকে বিরত থাকি। এই সুযোগে অপর পক্ষ অবকাঠামো নির্মাণ করে।
নেতৃবৃন্দ বলেন ইউএনও এবং ওসি পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করেছেন। নির্বাহী কর্মকর্তার রহস্যজনক ভূমিকার কারণে মেলা সংক্রান্ত বিষয়ে বার বার সংঘর্ষ ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের আশংকা প্রকাশ করে সতর্ক করার পরও উনার দ্বিমুখী আচরণের কারণে ১০ হতে ১২ জন নিরীহ সাধারণ মানুষ আজ মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। আমরা দ্বিধাহীন চিত্তে আবারো বলছি স্থানীয় প্রশাসন যদি উক্ত অনুমোদনহীন মেলা বন্ধে এবং আমাদের অনুমতি প্রদান বিষয়ে কোন ধরনের গড়িমসি করে, বিগত আওয়ামী সরকারের দোসর চিহ্নিত মাস্তান, চাঁদাবাজদের বিজয় মেলা করতে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয় তাহলে মেলা উদযাপন করার বৈধ দাবীতে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করব।
এই কর্মসূচিতে বিগত সময়ের ন্যায় সংঘাত ও সংঘর্ষের উদ্ভব হলে এবং আমাদের শান্তিপ্রিয় কর্মসূচিতে কোন ধরনের হামলা হয় তাহলে তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব স্থানীয় প্রসাশনকে বহন করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ জসিম, মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ, উত্তর জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা, উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি মোঃ শফি সহ অনেকে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বিজয় মেলা নিয়ে বিরোধ চরমে। রাউজান কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলাকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপির দুই গ্রুপের উত্তেজনা চলে আসছিল। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম আকবর খন্দকার সমর্থিত রাউজান উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১২ টায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বিএনপির কেন্দ্রীয় পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে এ অবস্থা বিরাজ করছে।