
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: এরকম ঘটনা আর কখনো ঘটবে না বলে ষোলশহর বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তারা কথা দিয়ে থাকলেও একই কায়দায় আবারো অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের চেষ্টা করছে। গ্রাহক প্রতিনিয়তই হয়রানির শিকার হচ্ছে।
ছোট্ট একটি জায়গায় ছোট্ট একটি ঘর করে একজন ভিক্ষুককে থাকতে দিয়েছেন ঘরটির মালিক। সে ভিক্ষুককে একটি বিদ্যুৎ মিটার….. এনে দেওয়া হলে প্রথম কয়েক মাস ধরে বিদ্যুৎ খরচের ওপর বিল দিয়ে থাকলে তা সে পরিশোধ করে এসেছেন। এরপর ভিক্ষুক সারাদিন তার শিশু সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে ভিক্ষা করতে বাহিরে চলে যায় বিধায় সারাদিন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না।
রাতে এসে শুধু একটি লাইট একটু খানি জ¦ালানোর পর নিভে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এটিতে ২ শত টাকার মতো বিদ্যুৎ খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু ২ শত টাকার বিদ্যুৎ খরচের ওপর ৫৪৩, ১০৪৯, ১১১৩, ২৪৪০ টাকা এভাবে অতিরিক্ত বিল দিতে থাকলে ভিক্ষুক তা পরিশোধ করতে না পেরে বিষয়টি ঘরটির মালিককে জানান।
ঘরটির মালিক গিয়ে পিডিবি (বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড)’র ষোলশহর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে বিষয়টি জানালে তাকে মিটারটা বদলানোর জন্য অতিরিক্ত বিলগুলো দিতে হবে না বলে জানান।
সেজন্য ঘরটির মালিক অর্থ খরচ করে বিদ্যুৎ অফিসের লোকের মাধ্যমে দ্রুত মিটারটি বদলে নতুন ডিজিটাল মিটার লাগিয়ে নেন। এরপর থেকে ভিক্ষুক ওই ১ টি লাইট ব্যবহার করে ঠিকমতো বিল পরিশোধ করে আসছে। কিন্তু এর ৬ মাস যেতে না যেতেই বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। সেজন্য, ভিক্ষুক ওই একটি লাইটের পরিবর্তে একটি মোমবাতি জ¦ালিয়ে ১ বছর পার করে দেয়। ১ বছর পর ভিক্ষুকের ঘরটিতে সাপ ঢুকতে দেখলে, সাপের ভয়ে মালিককে জানান সে ১ বছর ধরে বিদ্যুৎ বিহীন রয়েছেন। সেজন্য, মালিক বিদ্যুৎ অফিসে গেলে জানান, ওই আগের অতিরিক্ত বিলগুলোও দিতে হবে!
বিদ্যুৎ অফিস ২ শত টাকার বিদ্যুৎ খরচের ওপর ২ হাজার ৪৪০ টাকা করে একজন ভিক্ষুককে চাপিয়ে দিলে সেটা ভিক্ষুক কেন দিবে? ভিক্ষুক বিদ্যুৎ খরচ অনুযায়ী বিলটা দিতে পারছে না, মোমবাতি জালিয়ে থাকতেছে।
এর মধ্যে চুরি-দুর্নীতি করার উদ্দেশ্যে ভিক্ষুককে বাড়তি বিল দেওয়া হলে তা ভিক্ষুক কোত্থেকে দেবে। সেজন্য, দায়িত্বশীলদের করণীয় হলো ১ বছর ধরে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা ভিক্ষুকের ঘরটিতে লাইট জালিয়ে সাপের ভয় মুক্ত ঘুমানো ব্যবস্থা করা ও বাড়তি আদায়ের উদ্দেশ্যে দেওয়া বিলের সমস্যা দ্রুত সমাধান করার অনুরোধ রইলো।
অন্য একটি মিটারে বাড়তি বিল আদায়: দু’তিন শত টাকার বিদ্যুৎ খরচের ওপর দু’তিন হাজার টাকা করে আদায় করে দীর্ঘদিনে লাখ টাকার মতো আদায় করার পর ভুক্তভোগী বিষয়টিতে নজর দিলে, অবস্থা বুঝে একদিন খুব ভোরে এসে বিদ্যুতের মিটারটি খুলে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় আওয়াজ শুনে দ্রুত দরজা খুললে দেখা যায়, মিটার নিয়ে চোর দৌঁড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের গাড়িতে উঠে চলে গেল। মিটার চুরি হওয়ায় বাড়তি বিল আদায়ের ডকুমেন্ট না থাকায় ওই লাখ টাকাগুলো আর উদ্ধার করার চেষ্টাও করা হয়নি।
বিদ্যুতের সমস্যা সমাধানে সেবাপ্রার্থীকে বলেন, ওখান থেকে ব্যক্তিগতভাবে লোক নিয়ে যান। সেবাপ্রার্থী কাদের নামের লোকটিকে আনলে সে ঠিকমতো চেক না করেই তারটি নষ্ট হয়েছে বলে সেবাপ্রার্থীকে দিয়ে নতুন তার কিনালেন। এরপর সেবাপ্রার্থী তারটি নষ্ট হয়নি দেখে তারের টাকা ফেরত চেয়ে অফিসে অভিযোগ লিখে নিয়ে গেলে জানান, কাদেরকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে কাজ করিয়েছেন সেজন্য, অফিস দায়ী নয়। অযথা তারটি কিনানোর কারণে সেবাপ্রার্থী আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
একই কায়দায় আবারো বাড়তি বিল আরেকটি মিটারে: বিদ্যুৎ অফিসের ওই চোর-দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি আবারো একই কায়দায় ২৯০ টাকার করে বিদ্যুৎ খরচের ওপর ২ হাজার ৯০০ টাকা, ২ হাজার ৫৫০, ১ হাজার ৬২০, ৩ হাজার ১৭১, ১ হাজার ৫৯১, ২ হাজার ৭৮৫ টাকা করে এভাবে অতিরিক্ত বিল আদায় করে আসছে। অথচ বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের তদন্তের প্রেক্ষিতে দেখা যায়, প্রতি মাসে ২৯ ইউনিট করে বিদ্যুৎ খরচ হয়েছে। এর মূল্য ২৯০ টাকা।
২৯০ টাকার বিদ্যুৎ খরচের ওপর অতিরিক্ত বিল দিতে থাকলে সেটি জানাতে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘বিলগুলো অফিসের খাতায় লিখা হয়ে গেছে, কম্পিউটারে লিখা হয়ে গেছে সেজন্য, আর কিছু করার নেই।
একদিন প্রকৌশলী তুহিন কুমার দাশ এসে মিটারটিতে ৩ হাজার ৮১৫ ইউনিট রিডিং ছিল তা নিজ হাতে লিখে দিলে সেটি গ্রাহক একটা ডকুমেন্ট হিসেবে হাতে পান। সে সময় বিলের কপির অপর পৃষ্ঠায় দেখাযায় ৯ হাজার ৭১০ ইউনিটের মূল্য নেওয়া হয়ে গেছে, তা দেখে তখন থেকে তারা বলেন, মিটারটি নষ্ট হয়েছে। মিটার নষ্ট হয়নি বলে গ্রাহক প্রমাণ করে দেখালে বলেন, ‘আপনি ৭০ হাজার টাকার মতো অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করেছেন সেটি ভুলে আরেকজনের নামে জমা হয়েছে।
সেজন্য সে টাকাগুলো তো গেছে, এখন আপনার নামের মিটারে যে ৯ হাজার টাকা বাকি রয়েছে সেগুলোও আপনাকে দিতে হবে। আর যদি মিটারটি বদলে ফেলেন তাহলে ওই ৯ হাজার টাকা আর দিতে হবে না।’ ভুক্তভোগী পরবর্তী মাস থেকে বিদ্যুৎ খরচ অনুযায়ী বিল দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ অফিসের লোকের কথা মতো মিটারটি বদলে ফেলেন। মিটার বদলানোর পর নতুন মিটারে আবারো এখই কায়দায় ৩ হাজার টাকার করে বিল দিতে থাকলে ভুক্তভোগী অফিসে গেলে বিদ্যুৎ অফিসের খাতায় ও কম্পিউটারে লিখা হয়েগেছে, পরিশোধ করতেই হবে বলে আবারো অতিরিক্ত বিল আদায়ের চেষ্টা করলে, ভুক্তভোগী দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি-হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়গুলো কাজী ইব্রাহিম সেলিমের নিকট জানালে, তিনি গণমাধ্যমে লিখেন, ৯ হাজার টাকার বিদ্যুৎ খরচের ওপর ৭০ হাজার টাকা অতিরিক্ত বিল আদায় করা হয়েছে।
তা একটি দৈনিকে প্রচার হলে তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশল মো. দুলাল হোসেন, ভুক্তভোগীকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বলেন, আপনি দরখাস্তে লিখেছেন বিদ্যুৎ অফিসের সুনাম অক্ষুণœ রাখতে কিন্তু সুনাম তো আরো ডুবাইছেন। আপনি লিখেছেন ষোলশহর বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন দুর্নীতি করে, দুর্নীতি এক সময় ছিলো সেটি আমরা অস্বীকার করছি না কিন্তু বর্তমানে কেউ দুর্নীতি করে থাকলে তাদেরকে আমরা জবাই করে দি!
তখন ভুক্তভোগী বললেন, এটা কি বলছেন? আমরা দেখতে পাচ্ছি ৯ হাজার টাকার বিদ্যুৎ খরচের উপর ৭০ হাজার টাকা বাড়তি আদায় করার মাধ্যমে হতদরিদ্র দুর্বল গ্রাহকদেরকে জবাই করা হচ্ছে। তখন ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘ভাই শান্ত হন, চা খান।’ এরপর বলেন, ‘এটা অনেক বড় একটা জটিল সমস্যা, বিদ্যুতের মিটারটাও অপকৌশলে বদলিয়ে ফেলেছে সেজন্য টাকা আদায়ের বিষয়ে প্রমাণও নেই, এই সমস্যাটা আমি কেমনে সমাধান করি। রিডিং গ্রহণকারীকে বাড়তি বিল দেওয়ায় তাকে আমরা চাকরী থেকে বরখাস্ত করেছি।
আপনি একটু ধৈর্য ধরুন, আমার সাধ্য মতো সমস্যাটা সমাধান করবো।’ আগ্রাবাদ প্রধান কার্যালয়ের তদকালীন প্রধান প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম অনেক ভাল মানুষ বিধায় ঊনার অফিসে গ্রাহককে আশ্বস্ত করার পরও কিছুক্ষণের মধ্যে অফিস থেকে উঠে এসে ওয়েটিং রুমে গিয়ে গ্রাহককে আবারো বলছেন, ‘আপনাকে কষ্ট দিয়েছে, হয়রানি করেছে, বাড়তি অর্থ আদায় করেছে আমাকে আগে বলেননি কেন?’
সহকারী প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান সামিনা বানুকে বলেছেন, ‘উনাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর নিকট আর যেতে দিয়েন না, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সরদার আজম মোহাম্মদ সমস্যাটা সমাধান করতে পারেনি, আপনি সমস্যাটা দ্রুত সমাধান করুন।’ তখন আগ্রবাদ অফিসের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী ষোলশহর অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোনে বলেন, ‘এতোগুলো অভিযোগ ও পত্রপত্রিকায় বিষয়টি প্রকাশ হয়েছে আপনি সমস্যাটা সমাধান করেননি কেন?’
তখন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ম্যাডাম আমাকেও সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে অনেক প্রশ্ন করছেন।’ তখন ম্যাডাম বলেছেন, ‘আপনি বিষয়টা দ্রুত সমাধান করেন।’ ভুক্তভোগীকে বলেছেন, ‘আমরা ষোলশহর অফিসকে প্রেসার দিয়েছি, আপনি কাল ১০ টায় সেখানে যাবেন সমস্যার সমাধান করা হবে। যদিও সমাধান না হয় তাহলে আপনি এখানে আসবেন, আসতে যদি কষ্ট হয় তাহলে এই নাম্বারে ফোন করে আমাদেরকে জানাবেন।
এরমধ্যে একদিন সহকারী প্রধান প্রকৌশলী অনেক ভাল মানুষ বিধায় উনার অফিস থেকে উঠে গিয়ে এ জঘন্য অনিয়মের বিষয়টি এখই দিনে দু’তিন বার পর্যন্ত প্রধান প্রকৌশলীকে জানাতে গিয়েছেন। প্রধান প্রকৌশলীও অত্যন্ত ভাল মানুষ বিধায় সেদিন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ডেকে এনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেন, এরপর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নিজ অফিস কক্ষে গিয়ে ভুক্তভোগীকে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছিলেন, মিটার বদলে ফেলেছ তাই বাড়তি বিল আদায় করার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট নেই সেজন্য কিছু করার নেই, আমিও বলেছিলাম এখানে কেন এসেছেন আমারও কিছু করার নেই, সেগুলো সংবাদপত্রে লিখেছেন।
আজ আমি কি বললাম, প্রধান প্রকৌশলী কি বলেছেন সেগুলো কালকে আবার সংবাদপত্রে লিখবেন নাকি?’ ভুক্তভোগী বলেন, অবশ্যই লিখতে হবে, ‘তানাহলে সরকার ও জনগণ এ দুর্নীতির বিষয়টি কিভাবে জানবে।’ তখন তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোনে বলেন, ‘কাল যেন আমরা কি বলেছি সেটি আবারো লিখতে না হয় সেভাবে সমধান করুন। একজন প্রকৌশলীকে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘আপনি গিয়ে বিষয়টি তদন্ত করে আসুন।’
আগ্রাবাদ অফিস থেকে ওই প্রকৌশলী তদন্তে এসে ৪ টি এনার্জি লাইট ও ২ টি ফ্যান ব্যবহার করা হয় লিখে নিয়ে যান। এরপর ষোলশহর অফিস থেকে প্রকৌশলী তুহিন কুমার দাশ তদন্তে আসেন, ওইদিন ভুক্তভোগীকে বলেন, ‘আপনি তো লেখালেখি করেন, বিষয়টি লিখেছেন আরও লিখবেন কিন্তু আমরাও লিখতে পারি।’ তখন ভুক্তভোগী বললেন, আমার লিখার মতো সুযোগ আছে বিধায় বিষয়টি বারবার লিখে যাচ্ছি। আপনাদেরও লিখার কিছু থাকলে লিখুন।
তৎকালীন দাঁয়িত্বে থাকা বড় কর্মকর্তাগুলো অনেক ভাল মানুষ ছিলেন বিধায় বাড়তি আদায়কৃত ৭০ হাজার টাকাগুলো ফেরতের ব্যবস্থা করেছেন। এবং প্রকৌশলী তুহিন কুমার দাশ বলেছিলেন, এরকম ভুল আর কোনো দিন হবে না। যদিও ভুলক্রমে কোনো সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমার এই নাম্বারে ফোন করবেন, আমরা দ্রুত এসে সমাধান করবো।
আজ এখই কায়দায় ওই রকম আরও একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু প্রকৌশলী তুহিন কুমার দাশ ও নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল হোসেনরা তো দাঁয়িত্বে নেই। ঊনারা ভুক্তভোগীকে অনেক ভালভাবে চেনেন বিধায় সমস্যাটা সমাধানে দ্রুত এগিয়ে আসতেন। বর্তমানে উনাদের পদে যারা দাঁয়িত্বে আছেন তারাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন, বাড়তি আদায়ের উদ্দেশ্যে ভিক্ষুককে দেওয়া বিলের সমস্যা দ্রুত সমাধান করেন।









