নিউজ ডেস্ক

চট্টগ্রামে নানা আয়োজনে উদযাপন করা হচ্ছে মধু পূর্ণিমা

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএতে নানা আয়োজনে উদযাপন করা হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব মধু পূর্ণিমা। আজ শুভ মধু পূর্ণিমা। জগতের সব প্রাণীর সুখ-শান্তি কামনা, বিশ্বের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা বন্ধ করা ও মানবের দুঃখ মুক্তি এ প্রতিপাদ্যে শুভ শুভ মধু পূর্ণিমা বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধ বিহারে আজ ২৯ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বিহার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বুদ্ধ পূজা ও নানাবিধ দানসহ ধর্মসভা ও সমবেত প্রার্থনা।
বিশ্বমৈত্রী বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ও বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু বিজয়ানন্দ ভিক্ষুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠনে পঞ্চশীল প্রার্থনা করেন বিহার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার হেম চন্দ্র চাকমা।
ধর্মীয় গুরু বিজয়ানন্দ ভিক্ষু জানান, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম দিন আজ। আজ শুক্রবার দুপুর ২টা ৫৬ মিনিটে পূর্ণিমা তিথি শেষ হবে। শুক্রবার মধু পূর্ণিমার মূল আয়োজন হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে শুক্রবার সকালে বিহারে বিহারে গিয়ে পঞ্চশীল গ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান সূচনা করবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। পঞ্চশীল গ্রহণের পর বুদ্ধের উদ্দেশ্যে মধু, মধু মিশ্রিত পায়েস, ফল ও ছোয়াইং দান করবেন পুণ্যার্থীরা। এছাড়া বুদ্ধপূজা, প্রদীপ, ধূপপূজা, ভিক্ষুকে আহার্য দান, ধর্মীয় সভা ও বুদ্ধ-কীর্তন পরিবেশিত হবে।
বর্ষাবাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমা তিথি ভাদ্র মাসে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। বিশ্বে এটি ‘মধু পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। এ পূর্ণিমা তিথিতে বানর কর্তৃকবুদ্ধকে মধুদানের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা জড়িয়ে আছে। ভাদ্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এটি সংগঠিত হয়েছিল বলেই এর ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। বানরের মধুদান একটি নিছক ঘটনা বলে মনে হলেও এর পেছনে রয়েছে তির্যক প্রাণীর বুদ্ধ ভক্তি এবং দান, সেবা ও ত্যাগের একটি পরম শিক্ষা। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে তথাগত বুদ্ধ এক বনে তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস অধিষ্ঠান করছিলেন। ধ্যানে মগ্ন অবস্থায় এই মহাপুরুষের শরীর থেকে আলো বের হচ্ছিল, তখন অন্ধকার জঙ্গল আলোকিত হয়ে যায়। এ সময় বনের এক দলছুট অস্থির হাতি এসে হাজির হলো। তথাগত বুদ্ধকে দেখে অস্থির হাতির মন স্থির হয়ে গেল। তখন হাতিটি ভাবল এ কোনো সাধারণ মানুষ নন। তার সেবা করে জীবন কাটিয়ে দেবে। হাতিটি বুদ্ধের সেবায় নিয়োজিত হয়ে গেল। হাতিকে বুদ্ধের সেবা করতে দেখে বনের এক বানর বুদ্ধকে কী দান দেবে অস্থির হয়ে গেল। এ সময় বানর গাছের মধ্যে একটি মৌচাক দেখতে পেল। তখন বানর উৎফুল্ল মনে সিদ্ধান্ত নিলো মৌচাকটি বুদ্ধকে দান করবে। মৌচাকের মধু দান করে বানর খুশিতে গাছে লাফালাফি করতে গিয়ে মাটিতে পড়ে মারা যায়। এতে দানীয় চেতনায় বানর দেবপুত্ররূপে নবজন্ম লাভ করল। এ ঘটনার পর থেকে মধু পূর্ণিমা পালিত হয়ে আসছে। এ উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি বৌদ্ধ বিহারে রয়েছে পঞ্চশীল গ্রহণ, বুদ্ধ পূজা, ফুল পূজা, বুদ্ধ মুর্তি দান, সংঘ দান, অষ্ট পরিস্কার দান ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পিন্ড দানসহ নানাবিধ দান। এছাড়া দেশ জাতি তথা সকলের মঙ্গল কামনায় সমবেত প্রার্থনা। এ মহান দিবসকে ঘিরে সেখানে হাজারো পুজারীর সমাগম হয়েছে।
আয়োজকরা বলেন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে আজকের এই দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মধু পূর্ণিমার শুভ এই দিনটি নানা উৎসব, আনন্দ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এই দিন বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে মধু দান করার জন্য উৎসবে মেতে ওঠেন।
বিহারে দেখা যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মধুদানের এক আনন্দঘন পরিবেশ। বিহারে সন্ধ্যায় বৌদ্ধকীর্তন ও পুঁথিপাঠ করা হয় এবং বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রতিবছরের মতো এবারও বুদ্ধপূজা, প্রদীপ, ধূপপূজা, ভিক্ষুকে আহার্য দান, ধর্মীয় সভা ও বুদ্ধ-কীর্তন পরিবেশিত হবে। এ উপলক্ষ্যে দেশের সব বৌদ্ধ বিহারে মধু পূর্ণিমা পালিত হবে।
আয়োজকরা জানান, হানাহানি, ভেদাভেদ ও শ্রেণী বৈষমহীন এবং সমতার পৃথিবী গড়তে সবার বুদ্ধ হয়ে উঠতে পারার সম্ভাবনার মহান বাণী ছড়িয়েছেন মহামতি গৌতম বুদ্ধ। এ পূর্ণিমায় সব বুদ্ধ বাণী সবার অন্তরে আলো ছড়াবে এমন প্রত্যাশা আয়োজকদের।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় মধু পূর্ণিমার তাৎপর্য ও নানাদিক তুলে ধরেন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুস্বপন চাকমা। মহতি পূন্যানুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা স্মৃতিময় চাকমা, পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বঙ্গরত্ন চাকমা, অর্থ সম্পাদক সৌভাগ্য চাকমা, সাংগঠনিক সম্পাদক ইন্জি: জ্ঞান মিত্র চাকমা, সিয়ং বিষয়ক সম্পাদক সুশান্ত চাকমাসহ কমিটির সকল সদস্য ও সদস্যাসহ বিভিন্ন স্তরের স্বধর্মপ্রাণ উপাসক এবং উপসিকা বৃন্দ।

মন্তব্য করুন