নিউজ ডেস্ক

দেশ ও জনগণের কল্যাণে কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: অবিলম্বে পদত্যাগ করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত ভার্চুয়াল প্রতিনিধি সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিতে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান গণদাবিতে পরিণত হয়েছে। আগামী আন্দোলনে জামায়াতের কর্মীদেরকে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করতে হবে। শাহাদাতের জযবা নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে হবে। ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো বিপদাপদ আসে না’। কোরআনে কারীমের এই আয়াত সামনে রেখে জেল-জুলুম, অত্যাচার ও অবিচারের পরওয়া না করে আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমীরে জামায়াত বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদেরকে কোরআন হাদিসের আলোকে আত্মগঠনে বলিয়ান হতে হবে। রেল স্টেশনে মানুষ যেমন থাকার জন্য যায় না, তেমনি এই দুনিয়াও আমাদের জন্য থাকার জায়গা নয়। আমাদেরকে জান্নাতের পাথেয় সংগ্রহ করতে হবে। কবর আমাদের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। আমরা দুনিয়ার সন্তান নই, আমরা আখেরাতের সন্তান।
তিনি আরও বলেন, দুনিয়ার শান্তি ও পরকালীন মুক্তির জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর দাস বা গোলাম হতে হবে। আল্লাহর দাস হওয়ার জন্য সর্বোত্তম কাজ হচ্ছে আল্লাহর জমিনে তাঁরই দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করা। এই কাজ সকল নবী ও রাসূলগণ করেছেন। আমাদের জান ও মালের কোরবানি দিয়ে দ্বীন কায়েমের রাস্তায় টিকে থাকতে হবে। দ্বীন বিজয়ের জন্য ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দাওয়াতি কাজ ও অর্থ ব্যয় করতে হবে। ইকামাতে দ্বীনের অংশ হিসেবে সমাজের সকল মানুষের পাশে সাধ্যানুযায়ী দাঁড়াতে হবে।
কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের সাহসী হতে হবে। যার সাহস নেই, তার ঈমান দুর্বল। বিশ্বনবী সা. বিশ্বের সবচেয়ে সাহসী ব্যক্তি ছিলেন। তাই তার পক্ষে একটি সফল বিপ্লব সাধন সম্ভব হয়েছিল। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে হীনমন্য হলে চলবে না। বরং বীরত্ব, সাহসিকতা ও প্রজ্ঞার সাথে ময়দানে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে কাজ করতে হবে। তাহলেই দ্বীনের বিজয় অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠবে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, আল্লাহ তায়ালা মুমিনের জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তাই আমাদেরকে জেল-জুলুম ও জীবনের ভয়ে কুণ্ঠিত হলে চলবে না। বরং সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কারণ, জীবন-মৃত্যুসহ সবকিছুই হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। এর ব্যতিক্রম চিন্তা করা অবশ্যই শিরক। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে দ্বীন সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সহীহ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, জামায়াতের কর্মীদেরকে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে জনমত গঠন করতে হবে। যোগ্য কর্মী তৈরিতে ভূমিকা পালন করতে হবে। কোরআন-সুন্নাহর বিধানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে কায়েম করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাপনা।
জালেম সরকারের জুলুম থেকে মানুষকে বাচাঁতে, মজলুমের অধিকার ফেরাতে জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের ক্রান্তিকাল উত্তরণে সাহাবায়ে কেরামের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যেককে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সংগঠনের আহ্বানে ভয়-ভীতির তোয়াক্কা না করে ইকামতে দ্বীনের কাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জামায়াত সবসময় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। এখন সময় এসেছে, জান-মালের কুরবানীর বিনিময়ে হলেও জুলুমবাজ সরকারের সাথে মোকাবেলা করে বিজয়ী হতে হবে।
তিনি বলেন, জালেম সরকারের অব্যাহত জুলুম নির্যাতনে বাংলাদেশের জনগণ অতিষ্ঠ। আজকে শুধু জামায়াতে ইসলামীই নয়, যারাই ইসলামের পক্ষে কথা বলেছে, তারাই জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। গোটা দেশটাই একটা বড় কারাগারে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে রেখেছে। কিন্তু জেল-জুলুম আর হামলা-মামলা দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা যায় না। অবিলম্বে গ্রেফতার সকল নেতৃবৃন্দকে মুক্তি দিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল পরিচালক উপাধ্যক্ষ মুহাম্মদ আব্দুর রব বলেন, আল্লাহর পথে জানমাল দেয়ার প্রত্যাশা নিয়েই আখেরাতে সফলতার স্বার্থে জান্নাত প্রাপ্তির লক্ষ্যে আমরা শপথবদ্ধ হয়েছি। সমাজের পরিবর্তনের জন্য সুযোগ সবসময় আসে না। সমাজের সকল স্তরে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটাতে চাই। নির্বাচনই হচ্ছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তনের উপায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্যে নির্বাচনগুলোকে একটি জিহাদ হিসেবে সংগ্রামের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে এসেছে। প্রতিবারই সে কাজে অংশগ্রহণ করে আল্লাহর মেহেরবানীতে সফলতাও অর্জন করছে। ২০২৪ সালের শুরুতে যে নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে তাতেও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণের মানসিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দ্বীন বিজয়ের জন্য কোনো সুনির্ধারিত দিন-তারিখ ঠিক করে কাজ করার সুযোগ নেই। তবে কাজের পরিধি নির্ণয়, মান অর্জন ও টার্গেট বাস্তবায়নের জন্য সুনির্ধারিত পরিকল্পনা থাকা জরুরি।
তিনি বলেন, আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে ইসলামের ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। ভয়ভীতি ও লোভ-লালসাকে উপেক্ষা করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমাদেরকে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জালেম সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে কর্মীদেরকে আগামী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যারা দুনিয়ায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে, তারাই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করবে। কর্মীদেরকে মানোন্নয়ন করে নিজেদেরকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরা’র সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ. জ. ম. ওবায়েদুল্লাহ, মহানগরীর নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা’র সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন। সভায় দারসুল কোরআন পেশ করেন মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার।

মন্তব্য করুন