‘গণগ্রেফতার উপেক্ষা করে অবরোধ পালনের আহবান’

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: ঢাকার মহাসমাবেশ, হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন থানায় শুক্রবার (১০ নভেম্বর) পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি ইকবাল চৌধুরীসহ এ পর্যন্ত ৩৪০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে সদরঘাট থানায় দায়ের করা মামলায় একই পরিবারের চার ভাইকে আসামি করা হয়েছে। তাছাড়া গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপির আরো ২০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই বিশজন সহ এ পর্যন্ত মোট ৩৪০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলো। তাছাড়া বিভিন্ন থানার মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এস কে হুদা তোতন, মো. শাহ আলম, আহবায়ক কমিটির সদস্য আবুল হাশেম, মনজুর আলম চৌধুরী মঞ্জু ও মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশারফ হোসেন দীপ্তি সহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

মামলা হওয়া থানার মধ্যে চান্দগাঁও থানায় ১টি, পাঁচলাইশ থানায় ১টি, বায়েজিদ থানায় ৩টি, আকবর শাহ থানায় ২টি, খুলশী থানায় ৩টি, পাহাড়তলী থানায় ১টি, ইপিজেড থানায় ১টি, কোতোয়ালী থানায় ১টি, হালিশহর থানায় ১টি, পতেঙ্গা থানায় ১টি ও সদরঘাট থানায় ১টি সহ মোট ১৬টি মামলা দায়ের করেছে।

তাছাড়া উত্তর জেলায় শুক্রবার (১০ নভেম্বর) রাতে হাটহাজারী থানায় দায়ের করা মামলা সহ মোট মামলা হয়েছে ১৯টি। আর গ্রেপ্তার হয়েছেন ২১০ জনেরও অধিক। দক্ষিণ জেলায় ১৩টি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ১৮০ জন নেতাকর্মী।

এদিকে শান্তিপূর্ণ অবরোধকে কেন্দ্র করে পুলিশের গণগ্রেফতার, মামলা ও গণবিরোধী আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা।

নেতৃবৃন্দ রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া বিএনপি’র ডাকা চতুর্থ দফা অবরোধ কর্মসূচি পুলিশের গণ গ্রেফতার উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালন করার জন্য চট্টগ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।

আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এধরনের গণ গ্রেফতারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান, মীর মো. নাছির উদ্দীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান ও সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপির নেতাকর্মীরা সর্বস্তরের জনগণকে নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল সমাবেশের মধ্য দিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। বিন্দুমাত্র বল প্রয়োগ না করেই ধৈর্য্যরে সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীরা এ কর্মসূচি সফল করছেন। জনগণ বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে দেখে স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তারা আগের কায়দায় তাদের পেটোয়া বাহিনী পুলিশকে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। ভূয়া, গায়েবি অভিযোগ তুলে পুলিশের সদস্যরা এখন বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রতিরাতে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে, পরিবারের সদস্যদের অকথ্য নির্যাতন করছে। পুলিশের কারণে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন ঘরে থাকতে পারছে না। পেলেই গ্রেফতার করে বিভিন্ন গায়েবি মামলার আসামি করে দিচ্ছে। সক্রিয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিএনপির সমর্থকরা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, চট্টগ্রামে নিজেরাই যানবাহনে আগুন দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে। পুলিশের বাড়াবাড়ি নির্যাতন অতীতের যে কোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে। পুরো চট্টগ্রামকে যেন একটি অবরুদ্ধ কারাগার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আমরা পুলিশ বাহিনীর এ ধরনের আচরণের নিন্দা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে মাঠছাড়া করতে সরকারের অগণতান্ত্রিক নির্দেশে আপনারা যা করছেন, তা জাতি দেখছে। বাড়াবাড়ির পরিণাম অবশ্যই শুভ হতে পারে না। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী, আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। আপনারা আওয়ামী লীগের কর্মীর ভূমিকার অবতীর্ণ হবেন না। গায়েবি মামলা-হামলা, গণগ্রেফতার নির্যাতন বন্ধ করুন। অন্যথায় জনতার আদালতে আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।

নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রামবাসীকে ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনতাই বিএনপির আন্দোলনের শক্তি। বিএনপি নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের এ আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। আসুন, এই একদলীয় ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে আমরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এই জুলুমের হাত থেকে চট্টগ্রামবাসীসহ দেশবাসীকে মুক্ত করতে আপনারা তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করুন। আমরা এদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবোই।

মন্তব্য করুন