‘ওকালতনামার ঘটনায় আইনজীবি নির্দোষ’

নিউজগার্ডেন ডেস্ক: অপব্যাখ্যা দিয়ে মিথ্যাভাবে জড়ানো এড. নেজাম উদ্দিন সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের যে কৌঁসুলি ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করেছেন ওকালত নামায় তার স্বাক্ষর ছিল না। কিন্তু ওকালত নামা তার নামে ক্রয় করা হয়।

সূত্র জানায়, আদালত পক্ষে ওকালতনামা দেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর পি.পি’র পদত্যাগ বিষয়ে বিগত ০৩/১২/২০২৪ইং তারিখে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সহ সার্বিক ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর অতিরিক্ত পি.পি, মহানগর বিএনপির সাবেক সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের চট্টগ্রাম ইউনিটের সহ সাধারণ সম্পাদক এড. নেজাম উদ্দিনকে উক্ত দিনের ঘটনার অপব্যাখ্যা দিয়ে মিথ্যাভাবে জড়ানো হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলা হয় অতি: পি.পি এড. নেজাম উদ্দিন সম্পুর্ণ নির্দোষ।

ওকালতনামা ক্রয়ের বিষয়ে তিনি ইতোপূর্বে অবগত ছিলেন না এবং তাতে তার কোন স্বাক্ষর নেই, শুধুমাত্র তার নামে ক্রয় করা হয়েছে। তিনি অবগত হওয়ার সাথে সাথে তা প্রত্যাহার করে নেন। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যগণের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে এবং বিজ্ঞ অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর পদ থেকে পদত্যাগ পত্র দাখিল করেছে মর্মে পত্রিকা ও আদালত প্রাঙ্গণে প্রচার করা হয়েছে।

রাজনৈতিক, পেশাগত ভাবমূূর্ত ক্ষুন্ন ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে কে বা কারা এ কাজ করেছে। পদত্যাগ এর বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদসমূহ যথাযথ নয়। কেননা আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্তির পর সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে বিধি মোতাবেক পদত্যাগ করতে হয়। অতি: পি.পি এডভোকেট নেজাম উদ্দিন কোনভাবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের বরাবরে পদত্যাগ করেন নাই। মুহূর্তের উত্তেজনায় পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝির কারণে পদত্যাগ সংক্রান্ত সংবাদের উদ্ভব হয়।

বিগত ০২/১২/২০২৪ইং কোতোয়ালী থানার মামলা নং ৪৩(১১)২৪ইং বাকলিয়া থানার ২ জন আসামী (যুবদল কর্মী মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ নুরু) জামিনের আবেদনে এড. সানজিদা গফুর (লিন নং ৬৭০৩) ওকালতনামা দাখিল করে তা অতিরিক্ত পি.পি এড. নেজাম উদ্দিনের নামে উত্তোলন করা হয় মর্মে অবগত হয়ে বিগত ০৩/১২/২০২৪ইং তারিখ চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে “এডভোকেট সানজিদা গফুর কর্তৃক আমার ওকালতনামা ব্যবহার ও পিটিশন দেওয়া প্রসঙ্গে অভিযোগ” বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগে তিনি বলেন, আমার অজান্তে আমার নামে সমিতির অফিস থেকে উত্তোলনকৃত একই বিষয়ে অতিরিক্ত পিপি এড. নেজাম উদ্দিন “জেলা আইনজীবী সমিতি” ও “জেলা ম্যাজিস্ট্রেট” বরাবরে বিগত ১২/১২/২০২৪ইং তারিখে একটি অবগতিপত্র প্রদান করেন।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটি বিগত ২৬/১২/২০২৪ইং তারিখ সমিতির কার্যালয়ে এক জরুরী সভায় মিলিত হন। সমিতির সভাপতি এড. নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় অতিরিক্ত পি.পি এড. নেজাম উদ্দিনের প্রদত্ত অভিযোগ সহ সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার পর কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

“৯নং আলোচ্যসূচীর গ. চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির বিজ্ঞ সদস্য এড. নেজাম উদ্দিন বিগত ০৩.১২.২০২৪ তারিখ এড. সানজিদা গফুরের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিগত ০২/১২/২০২৪ ইং তারিখে কোতোয়ালী থানার মামলা নং-৪৩(১১)২৪ এ তার সম্মতি ও স্বাক্ষর ব্যাতিরেকে বিগত ২৮/১১/২০২৪ইং তারিখে এড. নেজাম উদ্দিনের নামে সমিতির অফিস থেকে উত্তোলনকৃত ওকালতনামা তার অজান্তে আপনি বিজ্ঞ আদালতে ২ জন আসামীর জামিনের আবেদন করেন। তিনি সমিতির গঠনতন্ত্র মতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিগত ০৫.১২.২০২৪ তারিখ এড. সানজিদা গফুরকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়। তদমতে তিনি বিগত ০৮.১২.২০২৪ তারিখ জবাব প্রদান করেন। উক্ত জবাব অদ্যকার সভায় উপস্থাপন করা হল।

সার্বিক বিষয় পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, কোতোয়ালী থানার মামলা নং ৪৩(১১)২৪ এ মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও মোঃ নুরু নামে ২ জন আসামী গ্রেফতার করা হয়। উক্ত দুই জন আসামীর জামিন আবেদনে এড. নেজাম উদ্দিনের লিন ব্যবহার করে ওকালতনামা ব্যবহার করা হয়। যা তিনি উত্তোলন করেননি এবং জামিন আবেদনে স্বাক্ষরও করেননি মর্মে প্রতিয়মান হয়। অন্যদিকে এড. সানজিদা গফুর তাদের চেম্বারের প্রথাগত নিয়ম অনুযায়ী সিনিয়রের ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন এবং পরবর্তীতে উক্ত মামলার বিষয়ে অবগত হওয়ার পর জামিন পিটিশন প্রত্যাহার করে নেন।

দুই জন আসামী যুবদল কর্মী, তারা কোন ভাবেই ইসকনের সাথে জড়িত নন। শহীদ এড. সাইফুল ইসলাম আলিফের হত্যাকান্ডের দিন ঐ দুইজনকে নগরীর টেরিবাজারস্থ বক্সির বিট এলাকা থেকে আটক করে বক্সির হাট পুলিশ বিটে রেখে দেওয়া হয় এবং ২৭ নভেম্বর কোতোয়ালী থানার ৪৩(১১)২৪ নং মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।

উক্ত দুই জন আসামীর পরিবারের সাথে কথা বলেও এ বিষয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় সার্বিক বিষয়ে বিবেচনায় এটি প্রতিয়মান হচ্ছে যে, ওকালতনামা ব্যবহার ও জামিন আবেদনে স্বাক্ষর করাটি চেম্বারের প্রথাগত নিয়ম, আসামী দুই জন মুসলিম এবং কোনভাবে তারা ইসকনের সাথে জড়িত নন এবং ইসকন বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের সক্রিয়কর্মী, বিগত ০২.১২.২০২৪ তারিখে সংগঠিত ঘটনাটি একটি ভুল বুঝাবুঝির বহিঃপ্রকাশ ও এড. নেজাম উদ্দিনকে উক্ত দিনের ঘটনায় অপব্যাখ্যা দিয়ে মিথ্যাভাবে জড়ানো হয়েছে, সে সম্পূর্ণ নির্দোষ।

মন্তব্য করুন