
নিউজগার্ডেন ডেস্ক: চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়ার ২ নং ওয়ার্ডের কুতুব পাড়ায় পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো চাঁদাবাজি মামলার আসামি হলেন এক প্রবাসী। দীর্ঘদিন যাবৎ আবু কালাম পাওনা টাকা না দেয়ায় প্রবাসী আবু শরিফ সাতকানিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। মৃত মীর আহমদের পুত্র আবু শরিফ সাতকানিয়া থানায় অভিযোগ দেয়ার পর মৃত আবদুর রহমানের পুত্র আবু কালাম আদালতে উল্টো চাঁদাবাজীর মামলা করেন। উভয়ের বাড়ী সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়ায়। পাওনা ৪৯ লক্ষ টাকা। সেই পাওনা না দিয়ে উল্টো পাওনাদারের নামে চাঁদাবাজির মামলা দিলেন দেনাদার।
সূত্র জানায়, আবু কালাম, আবু শরিফকে সৌদি আরবে আবাসিক হোটেল ক্রয় করার সময় তার টাকার প্রয়োজন হলে আবু কালাম আবু শরিফকে তার ক্রয়কৃত আবাসিক হোটেলে ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়ালে শেয়ার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
তখন আবু শরিফ আবু কালামের প্রস্তাবে রাজী হয়ে গত ২৭/০৭/২০২৩ ইং তারিখে সাক্ষীদের সম্মুখে আবু কালাম আবাসিক হোটেলে শেয়ার বাবদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল প্রদান করে।
পরবর্তীতে আবু শরিফ, আবু কালামের ব্যবসা পর্যবেক্ষণ করার জন্য আবাসিক হোটেলে যেতে চাইলে আবু শরিফকে উক্ত আবাসিক হোটেলে না নিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে।
পরে আবু কালাম, আবু শরিফকে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুরাইতে থাকলে আবু শরিফ আবু কালামকে প্রদত্ত ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল ফেরত দেয়ার জন্য বললে আবু কালাম, আবু শরিফকে প্রদত্ত টাকা ফেরত দিবে মর্মে আশ্বাস প্রদান করে।
আবু কালাম দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আবু শরিফকে প্রদত্ত টাকা ফেরত না দেওয়ায় উক্ত বিষয়ে গত ০৪/১০/২০২৩ইং তারিখ এবং গত ১৫/১১/২০২৩ইং তারিখ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়।
বৈঠক গুলোতে আবু কালাম, আবু শরিফকে তার প্রাপ্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল কয়েকমাসের মধ্যে ফেরত প্রদান করবে মর্মে অঙ্গীকার করলেও আবু কালাম বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করে আবু শরিফকে ঘুরাইতে থাকে। একপর্যায়ে আবু কালাম, আবু শরিফের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
আবু কালাম আড়াই মাস পূর্বে সৌদি আরবে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিক্রয় করে কফিল পরিবর্তন করে নিজ দেশে চলে আসে। আবু শরিফ উক্ত বিষয়টি জানার পর গত ১০/০১/২০২৫ ইং তারিখ সৌদি আরব হতে ছুটিতে দেশে আসে। আবু শরিফ দেশে আসার পর ঘটনার বিষয়টি আবু কালামের এলাকার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে বিচার দিলে গত ১১/০১/২০২৫ইং তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ৬ টায় মির্জাখীল বাংলাবাজারে মনিরের ফার্মেসীতে একটি বৈঠক হয়।
বৈঠকে আবু কালাম, আবু শরিফের নিকট হতে ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল গ্রহণ করার বিষয়টি প্রমাণিত হলেও সে আবু শরিফকে প্রাপ্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল যাহা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করতে পারবে না বলে জানায়।
আবু কালামকে আবু শরিফের প্রাপ্য টাকা পরিশোধ করার জন্য অনুরোধ করলে আবু কালাম, আবু শরিফের সাথে ঝগড়া বিবাদ করে হুমকি প্রদান করে পুনরায় টাকা চাইলে আবু শরিফকে মারধর সহ প্রাণে হত্যা করবে মর্মে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করে বৈঠক অমান্য করে চলে যায়।
পরে আবু কালাম পাওনা টাকা না দিয়ে আদালতে আবু শরিফের নামে চাঁদাবাজির মামলা করে।
সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, প্রবাসী আবু শরিফ পাওনা টাকা উদ্ধারের বিষয়ে থানা, ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিকট আবেদন করলে স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে আবু শরিফকে টাকা দেওয়ার জন্য বলায় সে আদালতে মামলা করেছে, যেখানে আমাকেও আসামী করেছে।
আবু শরিফ জানান, ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড কুতুব পাড়া এলাকার মৃত আবদুর রহমানের পুত্র আবু কালাম আমাকে আবাসিক হোটেলের শেয়ার কেনার প্রস্তাব করলে তাতে রাজী হয়ে সাক্ষীদের সম্মুখে শেয়ার বাবদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার সৌদি রিয়াল প্রদান করি। পরবর্তী সময়ে টাকা ফেরত না দিয়ে আবু কালাম উল্টো আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, আবু কালাম দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসছেন।
ভুক্তভোগীর পরিবার বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের সর্বস্বান্ত করেছে। আল্লাহ এই প্রতারকের বিচার করবেন।
আবু শরিফ আরো বলেন, মিথ্যা মামলার কারণে আমার মানসিক ও আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং মিথ্যা অভিযোগকারী চক্রের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবু কালাম সব দোষ অস্বীকার করে বলেন, আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই। আমি ব্যবসা করেছি, আবু শরিফ দিয়েছে দেড় লক্ষ সৌদি রিয়েল, আমার ১ লক্ষ ৭০ হাজার সৌদি রিয়েল ও নাছিরের ১ লক্ষ আটাশি হাজার টাকা। আর এ ব্যাপারে নিউজও করতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ এস আই এমরান জানান, অনেক আগে আবু শরিফ একটা অভিযোগ করেছে, এটা নিয়ে এলাকায় বৈঠক হয়েছে, টাকা পয়সার লেনদেন তো আমরা কি করতে পারি? এটা নিয়ে আবু কালামকে ডেকেছি, তিনি আসেননি।
এ বিষয়ে জানতে ডা: মনির জানান, ওরা দুই জন আমার কাছে এসেছিল, ঐ সমস্যাটা তিন জনের, আরো একজন বিদেশ আছে। তার বাড়ী বোয়ালখালী, নাম নাছির। তাদের সমস্যাটা আমি জানতে পেরেছি, এটা এখানে বিচার করা সম্ভব না। এখানে সৌদি আরবের কিছু বিষয় আছে, মালিককে নিয়ে বসে সমাধান করতে হবে। সাতকানিয়ারও অনেক লোক আছে তাদেরকে নিয়ে বসে সত্য উদঘাটন করে বিচার করলেই সমাধান হয়ে যাবে। এটা আমাদের আওতার বাইরে হওয়ার কারণে এ বিষয়টি বিদেশে রেফার করেছি।